চোট আর নরওয়ে লিগ—যেভাবে বোলার থেকে বোলারদের ‘যম’ মায়ার্স
কাইল মায়ার্স—নামটা শুনেছেন নিশ্চয়ই? বাংলাদেশি ক্রিকেট–সমর্থক হলে অন্তত নামটা পরিচিত লাগবে। ২০২১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকেই ডাবল সেঞ্চুরি করে হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছিলেন এই অলরাউন্ডার।
টেস্টে ওই ইনিংস ছাড়া মায়ার্সের সেঞ্চুরি আছে আর একটি, গড়ও খুব একটা বেশি নয়, ৩৩–এর আশপাশে। কিন্তু এ তো গেল সাদা পোশাকে ক্রিকেটের কথা; টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লেতে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়েও পরিচিত এই ক্রিকেটার।
গতকালের ম্যাচটাই ধরুন। পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে অর্শদীপ সিংয়ের বলে ইনিংসের দ্বিতীয় বলে চার মেরে শুরু। এরপর আর থামাথামির নাম নেই। মায়ার্সের ঝড় চলেছে ৫ ওভার ৫ বল পর্যন্ত। তখন আউট হওয়ার আগেই তুলে নিয়েছেন ফিফটি। এ মৌসুমে পাওয়ারপ্লের মধ্যে মায়ার্সের ৫৪ রানই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ।
ওপেনিং ব্যাটিংয়ের সঙ্গে গতকাল নতুন বলেও বল করেছেন মায়ার্স; যদিও এটা নতুন কিছু নয়। নিয়মিতই নতুন বলে বল করেন। আর একসময় এটাই ছিল দলে তাঁর প্রধান ভূমিকা। পুরোদস্তুর বোলার আর লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবেই ক্রিকেট শুরু করেছিলেন মায়ার্স। সেখান থেকে কীভাবে পুরোদস্তুর ওপেনিং ব্যাটসম্যান হয়ে গেলেন এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারকা, সে গল্পই আজ শোনা যাক।
২০১২ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন মায়ার্স। ৩.৭৮ ইকোনমিতে ১২ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। মায়ার্সের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক তিন বছর পর। উইন্ডওয়ার্ড আইল্যান্ডের হয়ে খেলা সেই ম্যাচে বোলার হিসেবে খেলেন মায়ার্স, সঙ্গে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন আট নম্বরে।
বোলার মায়ার্সের যাত্রা ঠিকভাবেই এগোচ্ছিল। তবে সে পথে বাদ সাধে তাঁর অ্যাঙ্কেলের চোট। ২০১৮ সালে পাওয়া চোটে পুরোনো ছন্দে বোলিংটা করতে পারছিলেন না। প্রভাব পড়ে তাঁর ক্যারিয়ারেও। সে বছর ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ সিপিএলে খেলার সুযোগও পাননি।
এরপর অখ্যাত নরওয়ে টি-টোয়েন্টি লিগেও নতুন জন্ম হয় মায়ার্সের। সে লিগে তাঁর দল ইগলসে ওপেনিং ব্যাটসম্যানের সংকট ছিল। এ সুযোগই নেন মায়ার্স। মাত্র ৬ ম্যাচে ওপেন করে ১০০–এর বেশি গড়ে এই বাঁহাতি করেন ৫২৮ রান। এরপরই পাল্টে যাওয়ার শুরু। মায়ার্সের বাবা বার্বাডোজের সাবেক অলরাউন্ডার ও লেভেল-৩ কোচ। বাবার কাছে টপ অর্ডারে ব্যাটিং করার আগ্রহ প্রকাশ করেন মায়ার্স।
মায়ার্স পরে এক সাক্ষাৎকারে ওপেনার হওয়া প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘নরওয়ে থেকে বাসায় ফিরলে বাবা জিজ্ঞাসা করে, ক্লাবে কোথায় ব্যাট করতে চাও। আমি বলেছিলাম, টপ অর্ডারে। নরওয়েতে রেকর্ড ভাঙার পর ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে কার্লটন ক্লাবের হয়েও রেকর্ড ভেঙেছি। নরওয়েতে ওপেনিং করা আমাকে নতুন একটা সুযোগ দিয়েছিল। আমি কী করতে পারি, সেটা দেখানোর সুযোগ পেয়েছিলাম।’
এরপর আধুনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মায়ার্সকে পেছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। এবারের আইপিএলে লক্ষ্ণৌয়ের হয়ে ৮ ম্যাচে ফিফটি করেছেন ৪টি। সব মিলিয়ে করেছেন ২৯৭ রান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেই স্ট্রাইক রেট ১৬০.৫৪। দুর্দান্ত ছন্দে থাকা মায়ার্সের জন্যই গত মৌসুমে ৫০৮ রান করেও এই মৌসুমে এখনো মাঠে নামার সুযোগই পাননি প্রোটিয়া ওপেনার কুইন্টন ডি কক।