পান্ডিয়ার দলবদল: ক্রিকেটের ‘ফুটবল’ হয়ে ওঠার লক্ষণ
মাঠের ক্রিকেটের দিক থেকে খবরটা চমকপ্রদ। গুজরাট টাইটানসের অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়াকে কিনে নিচ্ছে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের জগতে খেলোয়াড় কেনার ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু পান্ডিয়ার ক্ষেত্রে নতুনত্ব হচ্ছে, বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ‘দুটি দলের বেচা ও কেনা’র অংশ হয়ে যাওয়া।
ক্লাব ফুটবলে দুটি দলের মধ্যে খেলোয়াড় কেনাবেচার নির্দিষ্ট সময় আছে—‘ট্রান্সফার উইন্ডো’। ব্যতিক্রম বাদে বছরে দুটি সময়ে একটি দল আরেক দলের কাছ থেকে খেলোয়াড় কিনে নিতে পারে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ‘ট্রান্সফার উইন্ডো’ বলে কিছু নেই। এখানে খেলোয়াড় দলভুক্ত করা হয় নিলাম, ড্রাফট অথবা সরাসরি চুক্তির মাধ্যমে। বিশ্বের সবচেয়ে অর্থকরী ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে আইপিএলে খেলোয়াড় অদলবদল মূলত নিলামের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। সঙ্গে আরেকটি নিয়মও আছে।
প্রতি মৌসুমের নিলামের আগে দলগুলোকে গভর্নিং বডির কাছে ধরে রাখা খেলোয়াড় ও ছেড়ে দেওয়া খেলোয়াড়ের তালিকা দিতে হয়। এ পর্যায়ে দলগুলো চাইলে খেলোয়াড় অদলবদল করতে পারে, কেনাবেচাও করতে পারে। আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে বলা হয় ‘ট্রেডিং উইন্ডো’।
আইপিএলের পরবর্তী আসরকে সামনে রেখে দুবাইয়ে নিলাম হবে ১৯ ডিসেম্বর। তার আগে ধরে রাখা ও ছেড়ে দেওয়া খেলোয়াড়দের তালিকা জমা দেওয়ার শেষ দিন আজ। যা আদতে দুটি দলের মধ্যে বেচাকেনারও শেষ দিন। ইএসপিএন ক্রিকইনফোর খবর অনুসারে, অতি নাটকীয় কিছু না ঘটলে পান্ডিয়াকে গুজরাট টাইটানস থেকে কিনে নিচ্ছে মুম্বাই। পান্ডিয়া অবশ্য এবারের ‘ট্রেডিং উইন্ডো’তে বিক্রি হওয়া প্রথম খেলোয়াড় নন। এরই মধ্যে লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস থেকে রোমারিও শেফার্ডকে কিনে নিয়েছে মুম্বাই।
এ বছরের আগেও বিভিন্ন মৌসুমে রবিচন্দ্রন অশ্বিন, কুইন্টন ডি কক ও ট্রেন্ট বোল্টদের মতো খেলোয়াড়েরা ‘ট্রেডিং উইন্ডো’তে এক দল থেকে আরেক দলে গেছেন। তবে তাঁরা সবাই বিক্রি হয়েছিলেন সাবেক দলে বিক্রি হওয়া দামে, যার কোনোটি ১১ কোটি রুপি স্পর্শ করেনি (সর্বোচ্চ শার্দূল ঠাকুরের ১০.৭৫ কোটিতে দিল্লি থেকে কলকাতায় যাওয়া)। দামের সেই রেকর্ড এবার ভেঙে দিচ্ছেন পান্ডিয়া।
২০১৫ সালে মুম্বাইয়ের জার্সিতে আইপিএল অভিষেক হওয়া পান্ডিয়া ২০২২ সালে গুজরাটে যোগ দেন ১৫ কোটি রুপিতে। নেতৃত্ব দিয়ে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজিকে প্রথম বছরেই আইপিএল ট্রফি জিতিয়েছেন পান্ডিয়া, দ্বিতীয় বছরে রানার্সআপ। ট্রেডিংয়ের নিয়ম অনুসারে পান্ডিয়াকে দলে নিতে মুম্বাইকে ১৫ কোটি রুপি তো খরচ করতেই হবে, গুজরাটকে একটি ট্রান্সফার ফি–ও দিতে হবে। এই ফির অর্ধেক আবার পান্ডিয়া পাবেন। অর্থাৎ, অর্থের অঙ্কে আইপিএলে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে পান্ডিয়ার ‘গুজরাট টু মুম্বাই ট্রান্সফার’।
এত দিনের দলবদলের ঘটনাগুলো ছিল ছন্দহীন খেলোয়াড়দের নিয়ে। পান্ডিয়ার ব্যাপারটি ভিন্ন। একটি নতুন দলকে নেতৃত্ব দিয়ে যিনি টানা দুই আসরে ফাইনালে তুলেছেন, ব্যাটে–বলে আছেন ভালো ছন্দে, টুর্নামেন্টে যার বাজারমূল্য চড়া আর যিনি বিবেচিত হচ্ছেন ভারতের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক হিসেবে—এমন একজনকে স্রেফ শক্তি বাড়াতেই নিতে চাইছে মুম্বাই। যা আসলে ফুটবলবিশ্বে চলা ট্রান্সফারেরই মূলমন্ত্র। সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভন তাই পান্ডিয়ার দলবদলকে দেখছেন ক্রিকেটের ফুটবল হয়ে ওঠার লক্ষণ হিসেবে। সাবেক ইংলিশ অধিনায়কের টুইট, ‘পান্ডিয়ার মুম্বাইয়ে ফেরাটা হতে যাচ্ছে ক্রিকেটে ট্রান্সফার ফির প্রথম লক্ষণ, যেটা ফুটবলে হয়ে থাকে। অনিবার্যভাবে এটাই ঘটতে যাচ্ছে।’
ভনের মতো হার্শা ভোগলে অতটা স্পষ্ট করে বলেননি। তবে ভারতের জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকারও পান্ডিয়ার ট্রান্সফারে দেখতে পাচ্ছেন বড় কিছুর ইঙ্গিত, ‘প্রথমে ফিসফাস শুনে মনে হয়নি এ রকম ঘটবে; কিন্তু পান্ডিয়া গুজরাটে যা করেছেন, তারপরে দলবদল হওয়াটা বিরাট কিছু। এটা হতে যাচ্ছে যতটা সম্ভব সবচেয়ে বড় অভ্যুত্থান।’