‘অপ্রত্যাশিত’ ফাইনালে বড় আশা শ্রীলঙ্কার
সম্ভবত দুটি কারণে কলম্বোতে ফাইনালের আগের আবহ কিছুটা স্তিমিত। প্রথম কারণ তো অবশ্যই পাকিস্তানের অনুপস্থিতি। যতই এশিয়া কাপের বেশির ভাগ ম্যাচ শ্রীলঙ্কায় হোক এবং প্রেমাদাসার আজকের ফাইনালে ভারতের সামনে ‘স্বাগতিক’ শ্রীলঙ্কাই থাকুক, এই এশিয়া কাপের আয়োজক তো আসলে পাকিস্তান!
বাণিজ্যিক লাভালাভের কথা বিবেচনায় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলও (এসিসি) যে টুর্নামেন্টে যত বেশি সম্ভব ভারত–পাকিস্তান ম্যাচের আশায় ছিল, সেটি তাদের পূর্ববর্তী আচরণেই প্রকাশ পেয়ে গেছে। ক্যান্ডিতে গ্রুপ পর্বের ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর পাগল পাগল অবস্থা।
টিভিতে খেলা দেখিয়ে আয়ের তো বারোটা বেজে গেল! অতঃপর টুর্নামেন্টের মাঝখানে রিজার্ভ ডে ঢুকিয়ে কলম্বোর সুপার ফোরের ভারত–পাকিস্তান বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচটাকে টেনে দুই দিন লম্বা করা। কাজেই এটি বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না যে এশিয়া কাপে ভারত–শ্রীলঙ্কা ফাইনালের চেয়ে ভারত–পাকিস্তান ফাইনালই বেশি কাম্য ছিল আয়োজক এবং সম্প্রচারকারীদের।
আরেকটি কারণ হতে পারে কাল ভারতীয় ক্রিকেটারদের হোটেলবন্দী জীবনযাপন। ফাইনালের আগের দিন ভারতীয় খেলোয়াড়দের টিম বাস একবার ফাইনালের শহরের রাস্তায় না নামলে হয় নাকি! সকালে শ্রীলঙ্কা দল প্রেমাদাসায় অনুশীলন করলেও আগের রাতে বাংলাদেশের কাছে হারা ভারত কাল আর মাঠের দিকে পা বাড়ায়নি। পরিপূর্ণ বিশ্রামে থেকে হারের ধকল কাটানো এবং ফাইনালের জন্য সতেজ থাকার চেষ্টা হয়তো। ভারতীয় শিবির থেকে ফাইনাল–পূর্ব দিনে একটাই খবর—বাংলাদেশ ম্যাচে অক্ষর প্যাটেল হাতে ব্যথা পাওয়ায় জরুরি তলবে কলম্বো পৌঁছেছেন ওয়াশিংটন সুন্দর। তবে এই স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার আজ খেলবেনই, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।
বড় দুঃসংবাদ বরং শ্রীলঙ্কা শিবিরেই। হ্যামস্ট্রিং চোটের কারণে ফাইনালের আগে ছিটকে পড়েছেন মহীশ তিকশানা। শ্রীলঙ্কা দলের অবশ্য আশা, বিশ্বকাপের আগেই সেরে উঠবেন এই অফ স্পিনার।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা এর আগে এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছে ছয়বার। ভারত তাদের চেয়ে একবার বেশি। ঘরের মাঠে এশিয়ার ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে ভারতকে ছুঁয়ে ফেলার ম্যাচের আগে বেশ আশাবাদী মনে হলো শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকাকে। ফাইনাল–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে কাল তাঁর কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস, ‘আমরা প্রস্তুত। ছেলেরা দেশের জন্য কিছু করতে মুখিয়ে আছে। দল হিসেবে আমরা আন্ডারডগ, সে কারণেই বড় মঞ্চে সবাই ভালো খেলতে চায়। বিশ্বকে নিজেদের সামর্থ্যটা দেখাতে হবে এই তরুণদের। আমাদের তরুণ দলটার সাফল্যের এটাই রহস্য।’
ঘরের মাঠে খেলা হলেও শানাকা অবশ্য কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন প্রেমাদাসার পিচের দিকে। এশিয়া কাপের প্রায় সব ম্যাচের ফলাফলেই উইকেট কোনো না কোনোভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। একাদশ ঠিক করার কাজটা তাই আজ ম্যাচের আগে উইকেট দেখেই করতে চায় শ্রীলঙ্কা। তবে শানাকার কথায় আভাস মিলেছে, ভারতীয় ব্যাটিং শক্তির জবাবে উইকেট নেওয়ার মতো বোলিং শক্তি নিয়েই মাঠে নামবে তাঁর দল।
বাংলাদেশের কাছে ভারতের হারের পেছনেও উইকেটের ভূমিকা দেখছেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক, ‘এই উইকেটে বাংলাদেশ তাদের কাজটা করতে পেরেছে। উইকেটের একটা ভূমিকা ছিলই।’ একই সঙ্গে পুরো শক্তি নিয়ে না খেলাটাকেও ভারতের হারের কারণ মনে হচ্ছে শানাকার কাছে, ‘ভারত হারায় খুব একটা অবাক হইনি। খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিতে প্রায় পুরো দলটাই তারা বদলে ফেলেছিল। এটা যেকোনো দলের ক্ষেত্রেই হতে পারে। আমরা জানি ভালো উইকেটে ভারত কতটা ভালো দল।’
ভারত–পাকিস্তান ফাইনাল হলে টেলিভিশন হয়তো আজ অনেক দর্শক পেত। তবে প্রেমাদাসার গ্যালারি ততটা ভরত কি না কে জানে। দুই দিনব্যাপী হওয়া দুই দলের আগের ‘ওয়ানডে’তে অন্তত সেটা দেখা যায়নি। গ্যালারির বেশির ভাগটা ফাঁকাই পড়ে ছিল।
ফাইনালে শ্রীলঙ্কা থাকায় উল্টোটাই হবে বলে আশা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে প্রেমাদাসার গ্যালারি ভরে যাওয়ার আভাসও মিলেছে কাল বিকেলে। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের মিডিয়া ম্যানেজারের হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় জানা গেছে, প্রায় সব টিকিট বিক্রি শেষ। স্টেডিয়াম–সংলগ্ন টিকিট কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড আর হসপিটালিটি মিলিয়ে কেবল শ খানেক টিকিটই তখন পর্যন্ত বিক্রির বাকি ছিল, যেটা শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি) পরে বিক্রি করেছে বিশেষ মূল্যে।
মাঠে গিয়ে যাঁরা খেলা দেখতে পারেন না, কলম্বো শহরে বিশেষ ব্যবস্থা আছে তাঁদের জন্যও। গল ফেস আর তাজ সমুদ্র হোটেলের সামনের সবুজ ঘাসে ঢাকা বিশাল খোলা মাঠে বসানো আছে জায়ান্ট স্ক্রিন। পাকিস্তান–শ্রীলঙ্কা অলিখিত সেমিফাইনালের রাতেও ভারত মহাসাগরঘেঁষা ওই মাঠ পরিণত হয়েছিল সমতল গ্যালারিতে।
শ্রীলঙ্কার জনতা ক্রিকেটাবেগে ভাসে। খেলা শেষে ক্রিকেটারদের মুঠোফোন বার্তা পাঠিয়ে অভিনন্দন জানায় তারা, অথবা অনুযোগের ভাষায় লেখে, ‘তোমরা কেন বারবার আমাদের হার্ট অ্যাটাক বাঁধিয়ে দাও!’ পরাজয়েও দলকে সমর্থন দিয়ে যাওয়া এই সমর্থকদের জন্য হলেও ফাইনালে আজ বড় কিছু চান দাসুন শানাকা। যে ফাইনালে ভারত–পাকিস্তান ছাড়া আর সব দলকেই ‘অপ্রত্যাশিত’ ধরে আঁকা হয়েছিল এশিয়া কাপের ছবি।