পাঁচ ম্যাচ হয়ে গেল। প্রথম ইনিংসে দেড় শ রান হলো মাত্র একবার! বিপিএলের এমন শুরু নিশ্চয়ই কেউ প্রত্যাশা করেনি। কারণ, সব কটি ম্যাচেই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট ছিল ব্যাটিং-সহায়ক। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় বড় রান হচ্ছিল না। সঙ্গে কুয়াশায় মোড়ানো কন্ডিশনও একটা কারণ। গতকাল রাতে বিপিএলের ষষ্ঠ ম্যাচে অবশ্য ভিন্ন কিছুই দেখা গেল। ফরচুন বরিশাল ও খুলনা টাইগার্সের ম্যাচটা হলো সত্যিকারের টি-টোয়েন্টি আমেজে। তামিমের বরিশালের রান হলো ৪ উইকেটে ১৮৭, খুলনা সে রান টপকে যায় ২ ওভার হাতে রেখে, মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে।
তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহদের তারকায় ঠাসা দলকে এভাবে উড়িয়ে দেওয়াটা সহজ কথা নয়। বড় দলের বিপক্ষে খুলনার এমন জয়টা হয়তো বিপিএলে নতুন মাত্রা যোগ করবে। খুলনার অধিনায়ক এনামুল হকের তেমনই আশা। কাল ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে বিষয়টি তুলে ধরলেন এনামুল, ‘টুর্নামেন্টে কিন্তু এত রান এখনো হয়নি। এমন ম্যাচে জয় বা হার, ফল যা-ই হোক না কেন, এটা কিন্তু টুর্নামেন্টে একটা হাইপ তৈরি করে। আমি মনে করি, আজকের ম্যাচটা পুরো টুর্নামেন্টে একটা হাইপ তৈরি করবে। আমি আশা করি, এমন একটা ম্যাচ হচ্ছে, সবাই দেখতে আসবে। ভালো ফিল করবে।’
এ জয়টা যে খুলনাকেও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে, সেটিও বললেন তিনি, ‘একটা দলে যখন খেলি, তখন ব্যাট-বলের লড়াইটা সব সময় চলতে থাকে। আমরা কোন নামের বিচারে যাই না। বড় দল, ছোট দলের চিন্তা অধিনায়ক হিসেবে করি না, দলও করে না। চিন্তা করে ভালো জায়গায় বল করাটা সবার জন্য ভালো। খারাপ বলটা সবার জন্য খারাপ। অবশ্যই নামের বিচারে তাঁরা অনেক এগিয়ে। মুশফিক ভাই সেরা, রিয়াদ ভাই আছেন, তামিম ভাই অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। অবশ্যই তাদের বিপক্ষে জেতার পর ভালো লাগা কাজ করবে। আমি মনে করি খুলনার আত্মবিশ্বাসে এই জয় কাজে দেবে। সব মিলিয়ে বিপিএলের জন্য একটা দারুণ হাইপ তৈরি হবে।’
খুলনার রান তাড়ার ভিত গড়ে দিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এভিন লুইস। রান তাড়ায় লুইস করেছেন ২২ বলে ৫৩ রান। ওভারপ্রতি ৯ রান রেটের ম্যাচটা তাঁর ইনিংসের সৌজন্যে নেমে আসে ৭-এ। বাকি কাজটা করেছেন এনামুল হক ও আফিফ হোসেন। এনামুল তাই পুরো কৃতিত্বটাই দিলেন লুইসকে, ‘আপনারা তো লুইসের খেলা দেখলেন। আসলে লুইসই ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। আমরা শুধু ক্যারি করেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি শুধু ক্যারি করেছি, আফিফও তাই। আমরা শুধু দলটাকে আরেকটু…আগের দিনের ম্যাচের মতো মনে করেছি, ৭-৮ করে লাগবে। কিন্তু খেলাটা আসলে পুরোটাই ইউ-টার্ন করিয়ে দিয়েছে লুইস। অবশ্যই ১৯০ রান মিরপুরে তাড়া করা সহজ নয়। কিন্তু ও খেলাটা শেষ করে দিয়েছে।’
লুইসের বিস্ফোরক ইনিংসের পর খুলনার হিসেবি ব্যাটিংয়ের পেছনেও আরেকটা গল্প আছে। এনামুলের মুখেই শুনুন সেটা, ‘আমরা আমাদের শেষ ম্যাচটা নিয়ে অনেক কথা বলেছি, চট্টগ্রামের সঙ্গে যে ম্যাচটা ছিল। আমাদের কাছে একটা শেখার বিষয় ছিল সেটা। আমরা খেলাটাকে ছয় উইকেটে নিয়ে গিয়েছি। অনেক পরে গিয়ে জিতেছি। আমাদের এই আলোচনা ছিল, পরে যদি এমন সুযোগ আসে তাহলে আমাদের যেন দুই বা তিন উইকেট পড়ে। আমাদের শেষ ম্যাচের ওই আলোচনাটা বেশ কাজে দিয়েছে, যখন লুইস আউট হয়ে যায়।’
আফিফের সঙ্গে এনামুলের ৫৯ বলে ৭৫ রানের জুটির পেছনে ভাবনাটা ছিল এমনই। যা খুলনাকে ম্যাচটাকে গভীরে নিতে সাহায্য করেছে, ‘আফিফের সঙ্গে একটাই কথা হয়েছে-আমরা খেলাটা গভীরে নিয়ে যাই। আরেকটু লম্বা করি। আমরা ঝুঁকি না নেই। এক-দুই রানে চলতে থাকুক। বাজে বল এলে সেটা কাজে লাগাব। এই পরিকল্পনাই ছিল, ম্যাচটাকে ধৈর্যসহ আরেকটু গভীরে নিয়ে যাওয়া। এ ছাড়া মনে হয় না যে আমরা আর কিছু করেছি।’