যেখানে লুকিয়ে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচের ভাগ্য

রোহিত শর্মা ও বাবর আজমছবি: আইসিসি
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ট্যাগলাইন সেই আগের মতোই আছে—ভারতের ব্যাটিংয়ের সঙ্গে পাকিস্তানের গতির লড়াই। বিশ্বকাপে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর আজকের লড়াইয়ে এর বাইরে কিছু বিষয়ও গড়ে দিতে পারে পার্থক্য। দেখে আসা যাক ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারা বিষয়গুলো—
অনুশীলনে ভারতের লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলি
ছবি: এএফপি

ভারতের ব্যাটিং

ফ্যাব ফাইভ—একটা সময় ভারতের টপ অর্ডারের পরিচয় ছিল এটাই। শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী, বীরেন্দর শেবাগ, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণ—এই ছিল সেই পাঁচ ব্যাটসম্যান। নামগুলো বদলে গেছে। কিন্তু ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে এখনো বিশ্বমানের ব্যাটসম্যানের ছড়াছড়ি—রোহিত শর্মা, শুবমান গিল, বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল, শ্রেয়াস আইয়ার, ইশান কিষান বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায়ই আছেন। এঁদের যেকোনো একজন জ্বলে উঠলে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন যেকোনো দলের বিপক্ষে।

এই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের ম্যাচটি এর সর্বশেষ প্রমাণ। ২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলা ভারতকে ৫২ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে জেতাতে কোহলি ৮৫ ও রাহুল অপরাজিত ৯৭ রানের দুর্দান্ত দুটি ইনিংস খেলেছেন। চোটের কারণে গিল প্রথম দুই ম্যাচে খেলতে পারেননি। তবে বছরজুড়ে দারুণ ফর্মে আছেন এই ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান, সেপ্টেম্বরের পারফরম্যান্সের জন্য জিতেছেন আইসিসি মাসসেরা পুরস্কারও। ছন্দে আছেন অধিনায়ক রোহিতও। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোনো রান না করে আউট হলেও আফগানিস্তান ম্যাচে পেয়েছেন সেঞ্চুরি।  

অনুশীলনে পাকিস্তানের ফাস্ট বোলার শাহিন আফ্রিদি। তাঁর ছন্দে ফেরার অপেক্ষায় পাকিস্তান
ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের গতি

ভারতের যেমন ব্যাটিংয়ে ফ্যাব ফাইভ ছিল, পাকিস্তানের ছিল গতির ঝড়। ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, শোয়েব আখতার, আকিব জাভেদরা একটা সময় তাঁদের ফাস্ট বোলিং দিয়ে ছড়ি ঘুরিয়েছেন বিশ্বের তাবৎ ব্যাটসম্যানদের ওপর। এরপর এসেছেন উমর গুল, মোহাম্মদ আমির ও মোহাম্মদ আসিফরা। ঐতিহ্য ধরে রেখে এখন পাকিস্তানের বোলিংয়ে গতির ঝড় তুলছেন শাহিন আফ্রিদি, হারিস রউফ, নাসিম শাহ, হাসান আলীরা। চোটের কারণে নাসিম না থাকলেও বিশ্বকাপে আছেন হাসান ও রউফ। হাসান এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৬ উইকেট নিয়েছেন, রউফের উইকেট ৫টি।

পাকিস্তানের মূল স্ট্রাইক বোলার আফ্রিদি অবশ্য এখনো সেরা ছন্দে ফেরেননি। পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর, প্রথম দুটি ম্যাচে হালকা চোট নিয়ে খেলায় নিজের সেরা বোলিংটা করতে পারেননি আফ্রিদি। ভারত ম্যাচের আগে নিজে থেকেই বলেছেন, তাঁর আসল রূপটা দেখা যাবে আজ। সেটা হলে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো কিছু ঘটতেও পারে। সেবার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ৩১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে জিতিয়েছিলেন আফ্রিদি।

পুরো ছন্দে ফেরার অপেক্ষায় হার্দিক পান্ডিয়া
ছবি : আইসিসি

অলরাউন্ডার ফ্যাক্টর

বিশ্বকাপ শুরুর আগে বিশ্লেষকদের অনেকেই বলেছিলেন—এবারের টুর্নামেন্টে পার্থক্য গড়ে দেবেন অলরাউন্ডাররা। হার্দিক পান্ডিয়া আর রবীন্দ্র জাদেজা—দুজন অলরাউন্ডার নিয়ে খেলছে ভারত। দুই ম্যাচ মিলিয়ে পান্ডিয়া ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ১৭ বল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই ১৭ বলে ১১ রান করেছিলেন অপরাজিত। বল হাতে দুই ম্যাচে ৩ উইকেট নিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৮ রান দিয়ে ১ উইকেট আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪৩ রানে ২ উইকেট। দুই ম্যাচের একটিতেও ব্যাট করার সুযোগ পাননি জাদেজা। তবে বল হাতে ছন্দেই আছেন।

আজ কি ব্যাটে–বলে জ্বলে উঠবেন ইফতিখার আহমেদ
ছবি: এএফপি

পাকিস্তান দলে অলরাউন্ডার খেলছেন তিনজন—শাদাব খান, মোহাম্মদ নেওয়াজ ও ইফতিখার আহমেদ। নেওয়াজ ও শাদাব দুই ম্যাচের একটিতে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সেই ম্যাচে নেওয়াজ ৪৩ বলে করেছেন ৩৯ রান, শাদাব ৩৪ বলে ৩২। দুই ম্যাচে দুজনের উইকেট ২টি করে। আর দুই ম্যাচে ব্যাট করে ইফতিখারের রান ৩১, উইকেট ১টি। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ব্যাটে-বলে প্রত্যাশিত মাত্রায় জ্বলে উঠতে পারেননি কোনো দলের অলরাউন্ডার। আজ যাঁরা স্বরূপে দেখা দেবেন, ম্যাচ হয়তো তাঁদের দিকেই ঝুঁকে পড়বে।

নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছেন কুলদীপ যাদব
ছবি : এএফপি

ঘূর্ণির মায়াজাল

ভারতের স্পিন বোলিংয়ের ভার রবীন্দ্র জাদেজা, কুলদীপ যাদব ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ওপর। অশ্বিন একটি ম্যাচ খেলে উইকেট নিয়েছেন ১টি। তবে অন্য দুজন আছেন ছন্দে। ২ ম্যাচ খেলে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন জাদেজা ও কুলদীপ। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে অনেকেই বলেছিলেন—এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হতে পারেন কুলদীপ। তবে এখনো নিজের সেরাটা দিতে পারেননি তিনি। জাদেজার কাছে আরও বেশি প্রত্যাশা ভারতের।

ছন্দে নেই পাকিস্তানের স্পিনার শাদাব খান
ছবি : এএফপি

অন্যদিকে পাকিস্তানের স্পিন-ত্রয়ী ছন্দেই নেই। লেগ স্পিনার শাদাব ও বাঁহাতি স্পিনার নেওয়াজ দুই ম্যাচে পেয়েছেন ২টি করে উইকেট। অফস্পিনার ইফতিখারের উইকেট ২ ম্যাচে ১টি। কেউ কেউ তো শাদাবকে বাদ দিয়ে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে আরেক লেগস্পিনার উসামা মিরকে একাদশে রাখতে বলছেন।

বিশ্বের বৃহত্তম ক্রীড়া ভেন্যু আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ভারতের সমর্থক বেশি থাকবে আজ
ছবি : বিসিসিআই

আহমেদাবাদের দর্শক

বিশ্বকাপ শুরুর আগেই বিশ্লেষকদের অনেকে শিরোপা দৌড়ে ভারতকে সবচেয়ে ফেবারিট বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। কারণ, টুর্নামেন্টটা হচ্ছে তাদের ঘরের মাঠে। আজ যেখানে খেলা, আহমেদাবাদের সেই নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের আসনসংখ্যা ১ লাখ ৩২ হাজার। ভিসা জটিলতার কারণে পাকিস্তানের সমর্থকদের অনেকেই ভারতে যেতে পারেননি। তাই নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের গ্যালারির বেশির ভাগজুড়ে যে আজ নীল ঢেউ দেখা যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ করার লোক খুব বেশি থাকার কথা নয়।

পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম কাল ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, গ্যালারিতে নীলের আধিক্যই বেশি থাকবে। তবে এটা তাঁর দলের জন্য কোনো চাপ হয়ে আসবে না বলেও উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল—নিজেদের এত বেশি সমর্থকের সামনে খেলা উল্টো চাপ হয়ে দেখা দেবে কি না! এই প্রশ্নের উত্তরে রোহিত বলেছেন, ‘কখনোই নয়।’
শেষ পর্যন্ত আহমেদাবাদের দর্শক কার জন্য চাপ হয়ে ওঠেন, সেটা অবশ্য দেখার ব্যাপার।