চার পেসার না খেলিয়ে বাংলাদেশ কি ভুল করেছে
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৪১ ওভারে ১৫৮/৪
প্রশ্নটা শুনে শুরুতে ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারেননি হাসান মাহমুদ। পরে পাশ থেকে একজন বুঝিয়ে দিলে কিছুটা যেন অপ্রস্তুতই বোধ করলেন। প্রথমে বললেন ‘এটা কোচ, অধিনায়কের ব্যাপার’, পরক্ষণেই মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন, ‘আমার মনে হয় তিন বোলারেও চলে!’
যে প্রশ্ন শুনে হাসান কিছুটা অপ্রস্তুত, সেটা পেসারের সংখ্যা নিয়ে। পাকিস্তান চার পেসার রেখে একাদশ ঘোষণা করেছে দুই দিন আগে। ‘অভ্যাস মেনে’ বাংলাদেশ সেটা করেছে টসের সময়। তা–ও ম্যাচের আগে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ, আউটফিল্ড ভেজা—এসব দেখেশুনে। কিন্তু অনুকূল কন্ডিশনেও একাদশে পেসার চার নয়, তিনজন। পেসাররা যে এ উইকেটে কতটা কার্যকর, সেটা বোঝা যাবে দিন শেষের স্কোরকার্ড দেখলেও।
৪ উইকেটে ১৫৮ রান তুলেছে পাকিস্তান, হাসান মাহমুদ আর শরীফুল ইসলাম মিলেই নিয়েছেন সেই ৪টি উইকেট। তাদের সামলাতে গিয়ে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের বেশ সতর্ক ব্যাটিংই করতে হয়েছে। দিন শেষে তাই বাংলাদেশ দলের সংবাদ সম্মেলনে হাসানের দিকে ধেয়ে গেল পেসার–স্বল্পতার প্রশ্ন—বাংলাদেশ কি তিন পেসার খেলিয়ে ভুল করেছে?
আজ রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট শুরুর দিনে খেলা হয়েছে মোটে ৪১ ওভার। ভেজা আউটফিল্ডের কারণে সাড়ে চার ঘণ্টা বিলম্বিত ম্যাচে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন টস জিতেই বোলিং বেছে নিতে ভুল করেননি। উইকেটের সুবিধা কাজে লাগানোর যে চিন্তা থেকে এমন সিদ্ধান্ত, সেটি প্রমাণও করেছেন হাসান ও শরীফুল।
পাকিস্তান ইনিংসের ৯ ওভারের মধ্যেই ৩ উইকেট নেন এই দুই পেসার। প্রথমে হাসান ফেরান আবদুল্লাহ শফিককে, যদিও উইকেটের অর্ধেক ভাগ দাবি করতে পারেন ‘পঞ্চম স্লিপে’ দুর্দান্ত ক্যাচ নেওয়া জাকির হাসান। এরপর শরীফুল হানেন জোড়া আঘাত। প্রথমে শান মাসুদ, এরপর বাবর আজম। দুজনই উইকেটের পেছনে লিটন দাসের ক্যাচের শিকার।
পাকিস্তান অধিনায়ক মাসুদকে অবশ্য মাঠের আম্পায়ার আউট দেননি। তৃতীয় আম্পায়ার রিপ্লে দেখে আউট দেওয়ার পর ব্যাট নয় প্যাডে লেগেছে বলে মাঠের আম্পায়ারের ওপর ক্ষোভও ঝেড়েছেন মাসুদ। বাবর অবশ্য পরিষ্কার আউটই। চার দিন আগে পাকিস্তানের এই তারকা ব্যাটসম্যানের উইকেটটিই সিরিজে নিজের ‘স্বপ্নের উইকেট’ আখ্যা দিয়েছিলেন শরীফুল।
১৬ রানে ৩ উইকেট হারানো পাকিস্তানকে পরে চতুর্থ উইকেটে উদ্ধার করেন সাইম আইয়ুব ও সৌদ শাকিল। ময়েশ্চার সরে গিয়ে উইকেটও অবশ্য ধীরে ধীরে ব্যাটিংয়ের জন্য সহজ হয়ে ওঠে। সাইম–সৌদের জুটিতে পাকিস্তানের রান এক শ পার করে যখন বেশ থিতু, তখনই আবার আঘাত হাসানের। স্লিপে মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যাচে ফেরেন সাইম (৫৬), ভাঙে ৯৮ রানের জুটি। দিনের বাকি অংশে সৌদ ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে যোগ হয় আরও ৪২ রান। সৌদ অপরাজিত ৫৭ রানে, রিজওয়ান ২৪–এ।
বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণে হাসান ও শরীফুলের সঙ্গে বল হাতে নিয়েছেন নাহিদ রানা, মিরাজ ও সাকিব আল হাসান। এর মধ্যে দুই স্পিনার মিরাজ ও সাকিবের ৬ ওভারে খরচ ৩৬ রান, উইকেট শূন্য। সাকিবের হাতে তো দিনের আলো মরে যাওয়ার আগে বলই দেওয়া হয়নি।
দিন শেষে বলা হাসানের কথায় পরিষ্কার, কাল ম্যাচের দ্বিতীয় দিনেও মূল কাজটা করতে হবে পেসারদের, ‘রোদ উঠলে উইকেট পেসারদের জন্য সহায়ক হবে, গতি আর বাউন্স পাওয়া যাবে।’
পাকিস্তানকে প্রথম ইনিংসে কত রানের মধ্যে আটকাতে চান জিজ্ঞেস করলে অবশ্য বেশ সাহসী লক্ষ্যই দিয়েছেন হাসান, ‘যত দ্রুত এবং যত কমে আটকানো যায়। চেষ্টা করব ২০০ বা এর একটু বেশির মধ্যে আটকে রাখতে।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: ১ম ইনিংসে ৪১ ওভারে ১৫৮/৪ (শাকিল ৫৭*, আইয়ুব ৫৬, রিজওয়ান ২৪*, মাসুদ ৬, শফিক ২, বাবর ০; শরীফুল ১২–৪–৩০–২, হাসান ১৩–৩–৩৩–২, সাকিব ২–০–১২–০, মিরাজ ৪–০–২৪–০, রানা ১০–০–৪৮–০)।
* ১ম দিন শেষে।