দ্রাবিড় বুঝেছিলেন, তিনি কখনোই টেন্ডুলকার–শেবাগ হতে পারবেন না
ব্যাটিংয়ে অসাধারণ ধৈর্যের প্রতিমূর্তি ছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। দুর্দান্ত টেকনিক আর ব্যাকরণের মিশেলে তিনি যখন নিজের ইনিংস গড়ে তুলতেন, সেটি আস্থা আর আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে দিত দলের মধ্যে। নব্বইয়ের দশকে দ্রাবিড় যখন ভারতীয় দলের অংশ, তখন দলটি নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যানদের একসঙ্গে দেখছে। শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী, বীরেন্দর শেবাগ আর ভিভিএস লক্ষ্মণরা তখন রাজত্ব করছেন ভারতীয় দলে। তাঁদের মারকাটারি ও সাহসী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি দ্রাবিড়ের ব্যাটিং সেভাবে বিনোদনদায়ী না হলেও সেটির ওপর দাঁড়িয়েই টেন্ডুলকার, সৌরভ ও শেবাগরা খেলে যেতেন নিজেদের খেলা। প্রতিপক্ষও জানত, দ্রাবিড়ের ব্যাটিংই তাদের সামনে সবচেয়ে কঠিন প্রতিরোধ। সে কারণেই খেলোয়াড়ি জীবনে তকমা পেয়েছিলেন ‘দ্য ওয়াল’! শক্ত কংক্রিটের দেয়ালই ছিল তাঁর ব্যাটিং।
কীভাবে করে যেতেন এমন ব্যাটিং? তাঁর এই ধৈর্যের রহস্যটাই–বা কী ছিল। দ্রাবিড় স্বীকার করেছেন, এটা অনেকটা তাঁর স্বভাবের কারণে। আরেকটি ব্যাপার ছিল, ক্যারিয়ারের একপর্যায়ে তিনি ক্রিকেট নিয়ে অতিরিক্ত ভাবা ছেড়ে দিয়ে ক্রিকেটের বাইরের জগতে মনোনিবেশ করেছিলেন।
ভারতের হয়ে অলিম্পিকে প্রথম ব্যক্তিগত সোনাজয়ী শুটার অভিনব বিন্দ্রার পডকাস্ট অনুষ্ঠান ‘ইন দ্য জোন’–এ ক্যারিয়ারের সেই দিনগুলোর কথা বলেছেন ভারতের বর্তমান প্রধান কোচ, ‘আমার ক্যারিয়ারের দিকে যদি তাকান, সেটিকে দীর্ঘায়িত করতে বা ভালো পারফরম্যান্সের জন্য মানসিক শক্তির সঞ্চয় আমাকে বিশেষভাবে সহায়তা করেছে। আমি খেলা নিয়ে ভেবে অনেক বেশি মানসিক শক্তি নষ্ট করতাম। খেলার বাইরেও সারাক্ষণ খেলাটা নিয়ে ভাবতাম। একটা সময় আমি বুঝতে পারলাম, আমি ঠিক করছি না। সারাক্ষণ খেলা নিয়ে ভাবার কোনোই প্রয়োজন নেই। খেলার উন্নতিতেও এটা কোনো কাজে আসবে না। বুঝতে পারি, ক্রিকেটের বাইরেও একটা জীবন আছে, সেটিকে উপভোগ করা প্রয়োজন।’
ভারতীয় ক্রিকেট দলে নিজের সময় কখনোই টেন্ডুলকার, সৌরভ কিংবা শেবাগের মতো ‘মুক্তমনে’ খেলতে পারেননি। দ্রাবিড় অবশ্য চাপের মুখে খেলার অভ্যাস করে ফেলেছিলেন, ‘আমি কখনোই বীরেন্দর শেবাগের মতো হতে পারতাম না। সে খুব সহজেই সুইচ অন-অফ করতে পারত। আমি সেটি করতে পারতাম না। আমি বুঝতে পারছিলাম, খেলার পর খেলার বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে। আমার ক্যারিয়ার যত এগিয়েছে, আমি বুঝেছি, আমি কখনোই টেন্ডুলকার বা শেবাগের মতো করে রান করতে পারব না। সে জন্য আমার ধৈর্য প্রয়োজন। আমি সব সময়ই বোলারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতাম। এটিই বেশি করে আমার মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করেছে।’
নিজের মতো করে উপায় খুঁজে বের করে টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৩ হাজারের বেশি রান করেছেন দ্রাবিড়। ১৯৯৬ সালে টেস্ট অভিষেকেই লর্ডসে ৯৫ রানে ফিরেছিলেন। সেই একই ইনিংসে সৌরভ গাঙ্গুলী অভিষেকে করেছিলেন দুর্দান্ত এক শতক। তবে অভিষেক দিনের দুর্ভাগ্য সামলে ক্যারিয়ারে ৩৬টি টেস্ট শতক করেছেন দ্রাবিড়, খেলেছেন ১৬৪টি টেস্ট। ৩৪৪ ওয়ানডে ম্যাচে ১০ হাজারের বেশি রান করেছেন ১২টি শতক দিয়ে।