ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের বন্যা, এক শূন্যতেই বিখ্যাত বেস্টউইক

১৩৭ বল খেলে ০ রানে অপরাজিত থাকা ইয়ান বেস্টউইকসংগৃহীত ছবি

দুনিয়াজোড়া খ্যাতি পেতে কি কিছু না করলেও চলে!

কথাটা অন্তত ইয়ান বেস্টউইকের বেলায় খেটে যায়। ‘অবিশ্বাস্য’ এক ইনিংস খেলে বিখ্যাত হয়ে যাওয়া ইংলিশ ক্রিকেটার যে নিজেই বললেন, ‘আমি কিছুই করিনি।’

আক্ষরিক অর্থেই কিছুই করেননি ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ারের নবম বিভাগের দল ডার্লি অ্যাবি ক্রিকেট ক্লাবের এই ব্যাটসম্যান। ব্যাটসম্যানদের কাজ কী, রান করা। গত শনিবার মিকলওভারের বিপক্ষে ১৩৭ বল খেলে অপরাজিত থেকেও সেই রানই যে করতে পারেননি ইয়ান বেস্টউইক। ‘পারেননি’ না বলে অবশ্য ‘করেননি’ বলাটাই ঠিক হবে। রান করার চেষ্টাই যে করেননি তিনি। উইকেটে নিশ্চল পাথরের মতো পড়ে থেকেই দলকে হারের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন, ম্যাচ ড্র করে দলকে কিছু পয়েন্টও এনে দিয়েছেন।

সেই কাজে ইয়ান বেস্টউইক দোসর হিসেবে পেয়েছিলেন তাঁর ছেলে টমাস বেস্টউইককেও। বাবা-ছেলে মিলে ১১ রানের জুটিও গড়েছেন। যে জুটিতে বাবার যে কোনো অবদান ছিল না, সেটা তো জানাই। বাবার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডট বল দিয়েছেন টমাসও। তবে বাবার মতো নিখুঁত হতে পারেননি সেই কাজে। কী করে যেন একটি বাউন্ডারি মেরে ৪ রান পেয়ে গিয়েছিলেন টমাস।

সেই স্কোর কার্ড
ফেসবুক

তবে ছেলে নয়, বিশ্বজুড়ে মাতামাতি চলছে বাবাকে নিয়েই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন দুনিয়ার আনাচকানাচ থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাচ্ছেন ইয়ান। বিবিসি রেডিও ডার্বিকে নিজেই এ কথা জানিয়েছেন ৪৮ বছর বয়সী ইয়ান, ‘পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে এই খবর। অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, কাতার—কত জায়গায়। বিশ্বের সব জায়গা থেকেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাচ্ছি আমি।’

মিকলওভার-ডার্লি অ্যাবির ম্যাচটি ছিল ডার্বিশায়ারের নবম বিভাগের। সেই ম্যাচ ড্র করার পর ইয়ানের মনে হচ্ছিল, তাঁরা যেন অ্যাশেজ জিতেছেন, ‘আমাদের ড্রেসিংরুম কাঁপছিল। সবার মুখেই চওড়া হাসি ছিল। আর এটাই বলে দেয় স্থানীয় ক্রিকেট কতটা ভালো হতে পারে।’

আরও পড়ুন
ফিল্ডিংয়ে আমরা তিন ঘণ্টা শুধু বলের পেছনেই দৌড়েছি। সবাই ক্লান্ত ও বিমর্ষ হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরে, তবে শেষটা এমন হলো যে মনে হচ্ছে, আমরা কোনো কাপ বা এমন কিছু জিতেছি। ড্রেসিংরুমে যে আবহ ছিল, সেটির কোনো তুলনা চলে না। অসাধারণ। আর মাঠে শেষ দিকে ব্যাপারটা এমন দাঁড়ায় যে আমি সিদ্ধান্ত নিই কোনো রান না করার।
ইয়ান বেস্টউইক

২৭২ রান তাড়া করতে নেমে একটা দল ৪৫ ওভারে ৪ উইকেটে ২১ রান করার পর কেন এমন উল্লাস, সেটির ব্যাখ্যাও দিলেন ইয়ান, ‘ফিল্ডিংয়ে আমরা তিন ঘণ্টা শুধু বলের পেছনেই দৌড়েছি। সবাই ক্লান্ত ও বিমর্ষ হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরে, তবে শেষটা এমন হলো যে মনে হচ্ছে, আমরা কোনো কাপ বা এমন কিছু জিতেছি। ড্রেসিংরুমে যে আবহ ছিল, সেটির কোনো তুলনা চলে না। অসাধারণ। আর মাঠে শেষ দিকে ব্যাপারটা এমন দাঁড়ায় যে আমি সিদ্ধান্ত নিই কোনো রান না করার।’

বোল্ড হয়েও নো বলের কারণে একবার বেঁচে যাওয়া ইয়ান কোনো রান না করেই খবর। অথচ এ ম্যাচেই প্রতিপক্ষের ওপেনার ম্যাক্স টমসন ১২৮ বলে ১৪ ছক্কা ও ১৭ চারে ১৮৬ রান করেও ঢাকা পড়েছেন ‘বিশাল’ এক শূন্যের ছায়ায়। ইয়ান একটু কপট দুঃখও করলেন তাঁকে নিয়ে, ‘অসাধারণ ইনিংস ছিল সেটি। কিন্তু দিনের গল্পটা তাঁকে নিয়ে হলো না।’

এই লিগের নিয়মানুযায়ী সারা দিনে দুই দল মিলে সর্বোচ্চ ৮০ ওভার খেলতে পারবে। প্রথমে ব্যাটিং করা দল সর্বোচ্চ ৪০ ওভার খেলতে পারে, আর ঘোষণা করতে পারে ইনিংস। আর ৮০ ওভারের মধ্যে কোনো দল জিতে না গেলে টেস্টের মতো ড্র হয়ে যায় ম্যাচ। ইয়ানের দল ম্যাচটি ড্র করেছে এ নিয়মেই। ৩৫ ওভারে ৪ উইকেটে ২৭১ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছিল মিকলওভার। দিনের বাকি ৪৫ ওভারে ৪ উইকেটে ২১ রান তুলে ম্যাচটি ড্র করে পয়েন্ট তালিকার তলানির ডার্লি অ্যাবি।

আরও পড়ুন