চার্লসের রেকর্ড ইনিংস, ওয়েস্ট ইন্ডিজের রেকর্ড জয়
আগের রেকর্ডটি ছিল তাঁরই, একই প্রতিপক্ষের সঙ্গে। জনসন চার্লস সেটিই গড়লেন নতুন করে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কিংস্টনে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান খেলেছেন ২৬ বলে ৬৯ রানের রেকর্ড ইনিংস। আর তাতে প্রোটিয়াদের দেওয়া ১৬৩ রানের লক্ষ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেরিয়ে গেছে ৩৭ বল ও ৮ উইকেট বাকি রেখে—যেটিও রেকর্ড ব্যবধান। এ জয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩ ম্যাচ সিরিজে ধবলধোলাই করে বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটাও বেশ ভালোভাবে সেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
স্যাবাইনা পার্কে টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডার সুবিধা করতে পারেনি মোটেও। নবম ওভারে ৫০ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। মিডল অর্ডারে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক রেসি ফন ডার ডুসেনের ৩১ বলে ৫১ ও উইয়ান মাল্ডারের ২৮ বলে ৩৬ রানের ইনিংসে মোটামুটি একটা সংগ্রহ পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। জেসন হোল্ডারের জায়গায় বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া বাঁহাতি পেসার ওবেদ ম্যাকয় নেন ৩ উইকেট। পেসার শামার জোসেফ ও বাঁহাতি স্পিনার গুড়াকেশ মোতি নেন ২টি করে, ৩ ম্যাচ মিলিয়ে ৮ উইকেট পাওয়া মোতি পরে হয়েছেন সিরিজ–সেরাও।
এমন স্কোর নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা যদি লড়াইয়ের আশা করেও থাকে, পাওয়ারপ্লেতেই কার্যত শেষ হয়ে যায় সেটি। প্রথম ৬ ওভারে ৮৩ রান তোলে ব্র্যান্ডন কিং ও চার্লসের ওপেনিং জুটি। পাওয়ারপ্লেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এর চেয়ে বেশি রানের স্কোর আছে আর মাত্র ৫টি।
কিং ও চার্লসের জুটি ভাঙে ৯২ রানে, সেটিও চার্লসের উইকেটে। ২৬ বলে ৯ চার ও ৫ ছক্কায় খেলা ৬৯ রানের ইনিংসে চার্লসের স্ট্রাইক রেট ২৬৫.৩৮। কমপক্ষে ৫০ রানের ইনিংসে আর কোনো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানের এর চেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেট নেই এখন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে। আগের রেকর্ডটিও ছিল চার্লসের। গত বছর সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই ৪৬ বলে ১১৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি, সেবার স্ট্রাইক রেট ছিল ২৫৬.৫২।
কাইল মায়ার্স ও অ্যালিক অ্যাথানাজের অবিচ্ছিন্ন ১৮ বলে ৩৫ রানের তৃতীয় উইকেট জুটিতে এরপর দ্রুতই জয় নিশ্চিত করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইনিংসে ৩৭টি বল বাকি ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এর আগে কখনোই এতগুলো বল বাকি রেখে জেতেনি ক্যারিবীয়রা।
এ সিরিজে দুই দলেরই অধিনায়কসহ শীর্ষ সারির বেশ কয়েকজন ছিলেন না আইপিএলে ব্যস্ত থাকায়। এরপরও এমন জয়ে স্বাভাবিকভাবেই খুশি রোভম্যান পাওয়েলের জায়গায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়কত্ব করা কিং, ‘গুরুত্বপূর্ণ জয়। বিশ্বকাপের আগে শেষ সিরিজ। ফলে প্রস্তুতি ও ভালো একটা মোমেন্টাম নিয়ে যেতে পারছি বিশ্বকাপে। আমাদের বোলিং পারফরম্যান্স বেশ ভালো ছিল, ধারাবাহিক ছিলাম। মোতি এবং অন্যরা অবদান রেখেছে। আমাদের মূল খেলোয়াড়দের অনেকেই নেই, (এরপরও এমন জয়) অনেক কিছুই বলে। বিশ্বকাপে অন্যদের সঙ্গে নামতে তর সইছে না।’
ঠিক বিপরীত সুর ফন ডার ডুসেনের কণ্ঠে। এইডেন মার্করামের জায়গায় দক্ষিণ আফ্রিকার দায়িত্ব সামলানো এই ব্যাটসম্যান বলেছেন, ‘কথা বলার পালা শেষ, আমাদের আরও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের এসে দায়িত্ব নিতে হবে। অজুহাত দেওয়ার কিছু নেই। তারা ব্যাটিংয়ে যেভাবে খেলেছে আর বোলিংয়েও যেমন ভালো ছিল, তাতে আসলে আমরা ভড়কে গেছি। আমরা একটা শিক্ষাই পেয়েছি।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৬৩/৭ (ফন ডার ডুসেন ৫১, মুল্ডার ৩৬, ডি কক ১৯; ম্যাকয় ৩/৩৯, মোতি ২/২১, জোসেফ ২/২৬)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৩.৫ ওভারে ১৬৫/২ (চার্লস ৬৯, কিং ৪৪, মায়ার্স ৩৬*; পিটার ১/২৭, কোয়েৎজি ১/৩৭)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩-০-তে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জনসন চার্লস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
ম্যান অব দ্য সিরিজ: গুড়াকেশ মোতি (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)