বুমরা কি একাই সব বল করবেন

ভারতীয় পেসার যশপ্রীত বুমরাএএফপি

যা বলার তা অ্যাডিলেড টেস্ট শেষে রোহিত শর্মাই বলে দিয়েছেন। ভারতীয় অধিনায়ক বলেছিলেন এভাবে—‘দুই প্রান্ত থেকে সকাল থেকে সন্ধ্যা বুমরা বোলিং করবে, আপনি সেটা প্রত্যাশা করতে পারেন না।’ প্রশ্ন হচ্ছে দুই প্রান্ত থেকে সারা দিন বুমরার বোলিং করার প্রশ্ন উঠছে কেন? ভারতের অন্য বোলাররা তাহলে বল করছেন না?

বুমরা এ মুহূর্তে টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর বোলার। সেরা বোলারের তালিকা করতে হলে তাঁর নামটা রেখেই আলোচনা করতে হয়। তাই এমন আরেকটা বুমরা ভারতীয় দলে থাকবে না, সেটাই স্বাভাবিক। তবে এমন কয়েকজন তো থাকতে হবে, যাঁরা বুমরার কাজটা সহজ করতে পারেন। বোর্ডার গাভাস্কার ট্রফিতে এমন কাউকেই খুঁজে পাচ্ছে না ভারত।

সিরিজের প্রথম তিন টেস্টের প্রতিটি ইনিংসে বুমরাই ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংস ও দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে মোহাম্মদ সিরাজের সঙ্গে যৌথভাবে, বাকি ইনিংসগুলোতে একাই। ব্যাট হাতেও বুমরার এই সিরিজে দারুণ অবদান আছে। বৃষ্টিবিঘ্নিত ব্রিসবেন টেস্টে ভারতের প্রথম ইনিংসে তাঁর ৩৮ বলে অপরাজিত ১০ রানের ইনিংস টেস্ট ড্র করতে বিশেষ অবদান রেখেছিল।

যদিও বুমরার ব্যাটিং-সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন করা ঠিক কি না, সেই প্রশ্নও তোলা যায়। হয়তো তিনিও সেটা পছন্দ করেন না। সে কারণেই সাংবাদিকদের বুমরা বলেছেন, ‘এটা মজার বিষয় যে আপনি আমার ব্যাটিং-সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। আপনার গুগল ব্যবহার করে খোঁজা উচিত, টেস্টে এক ওভারে সবচেয়ে বেশি রান কার।’ ২০২২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে স্টুয়ার্ট ব্রডের ওভারে ৩৫ রান তুলেছিলেন বুমরা, যা টেস্টে এক ওভারে সর্বোচ্চ।

২১
৩ টেস্টে বুমরার উইকেট

ব্যাটিং ভুলে বুমরার আসল কাজ যেটা সেই বোলিং প্রসঙ্গে ফেরা যাক। এখন পর্যন্ত খেলা তিন টেস্টে বুমরা উইকেট নিয়েছেন ২১টি। গড় ১০.৯০। ভারতের বাকি সবাই মিলে নিয়েছেন ২৬ উইকেট, গড় ৩৬.৮১। মানে তাদের বোলিং গড় বুমরার ৩ গুণের চেয়েও বেশি। এক সিরিজে এক পেসারের এমন দাপট টেস্টে গত ৪০ বছরে দেখা যায়নি।

সর্বশেষ ১৯৮৫-৮৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে এমন কীর্তি গড়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের রিচার্ড হ্যাডলি। কিউই কিংবদন্তি সেই সিরিজে ৩৩ উইকেট নেন মাত্র ১২.১৫ গড়ে। বাকি সবার মিলিত উইকেটসংখ্যা ছিল ২২, গড় ৪৫.৯৫।

একটি টেস্ট সিরিজে ২০ বা এর চেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন ৩৬০ জন পেসার। এরই মধ্যে মাত্র চার পেসারের বোলিং গড় দলের অন্যদের চেয়ে তিন গুণ ভালো।

একটি টেস্ট সিরিজে ২০ বা এর চেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন ৩৬০ জন পেসার। এরই মধ্যে মাত্র চার পেসারের বোলিং গড় দলের অন্যদের চেয়ে তিন গুণ ভালো। বুমরা ও হ্যাডলি ছাড়া এই তালিকায় থাকা বাকি দুজন হলেন পাকিস্তানের ইমরান খান ও নিউজিল্যান্ডের ব্রুজ টেলর।

আরও পড়ুন

বুমরা যে ২১ উইকেট নিয়েছেন তাঁর মধ্যে ১৫টিই এসেছে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অর্ডারের প্রথম পাঁচজনের। এই সিরিজেই অভিষেক হওয়া ওপেনার নাথান ম্যাকসুয়েনে তো এই বুমরার বলে লাগাতার আউট হয়ে পরের দুই টেস্ট থেকে বাদ পড়ে গেছেন। সিরিজে বুমরার ৬৬ বল খেলে ১৫ রান করতে চারবার আউট হয়েছেন এই ওপেনার।

যশপ্রীত বুমরাকে থামাবে কে
ছবি: এএফপি

বুমরা যে শুধু উইকেট নেন, তা নয়। তাঁর বোলিংয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে শৃঙ্খলা। সেটাই তাঁকে উইকেট এনে দেয়। এই সিরিজেও তিনি ওভারপ্রতি রান খরচ করেছেন মাত্র ২.৯২ করে। যেখানে ভারতের অন্য সব পেসারই ওভারপ্রতি ৪ রানের বেশি দিয়েছেন।

এমন পারফরম্যান্সের পর ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফো বুমরার সঙ্গে ভারতের অন্য বোলারদের তুলনা করেছে এভাবে—এক প্রান্তে বিশ্ব একাদশ, অন্য প্রান্তে ইলফোর্ড ক্লাবের দ্বিতীয় একাদশ। ইলফোর্ড হচ্ছে ইস্ট লন্ডনের দ্বিতীয় সারির ক্লাব। সেই ক্লাবের দ্বিতীয় সারির দলের বোলার আর বিশ্ব একাদশের বোলার একসঙ্গে বোলিং আক্রমণে থাকলে কী হয়, সেটাই বোঝানো হয়েছে।

১৯৮৬ সালে ট্রেন্ট ব্রিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে টেস্ট জিতিয়েছিলেন হ্যাডলি। সেই সিরিজে নিউজিল্যান্ডের অন্য বোলারদের পারফরম্যান্স এতটাই খারাপ ছিল যে ইংলিশ কিংবদন্তি গ্রাহাম গুচ কিউই বোলিং আক্রমণকে বর্ণনা করতে এই ‘তত্ত্ব’ ব্যবহার করেছিলেন।  

বোর্ডার গাভাস্কার ট্রফির পরের টেস্ট মেলবোর্নে। ২০১৮ সালে যেখানে বুমরা সেই ঐতিহাসিক স্লোয়ার বলটি করে শন মার্শকে আউট করেছিলেন। ঐতিহাসিক বলা হচ্ছে কারণ শতকসেরা বলের তালিকায় এটিকে ১২তম স্থানে রেখেছিল ইএসপিএন। এবারের সিরিজে এমন জাদু কিন্তু দেখা যায়নি, অবশ্য যে ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছেন, সেটাই তো আসল জাদু।

আরও পড়ুন