আট বছর পর তিনে নেমে কোহলির শূন্য
বেঙ্গালুরু টেস্টে আজ দ্বিতীয় দিনে বিরাট কোহলিকে তিনে নামতে দেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট করেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার। ভারতের সাবেক এই ক্রিকেটার ও বিশ্লেষকের সেই পোস্ট দেখে মন খারাপ করতে পারেন সৌরভ গাঙ্গুলী ও শচীন টেন্ডুলকার।
মাঞ্জরেকার সেই পোস্টে লিখেছেন, ‘বিরাট কোহলিকে টুপি খোলা অভিনন্দন। দলের প্রয়োজনে ৩ নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমেছে। গাঙ্গুলী–টেন্ডুলকার সাদা বলের ক্রিকেটে ওপেন করতে উন্মুখ হয়ে থাকতেন। কিন্তু টেস্টে কখনো ব্যাটিং অর্ডারে ওপরে নামতে চায়নি। বিরাট সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন।’
বেচারা মাঞ্জরেকার! মুখের কথা মুখেই থাকল, ওদিকে তিনে নেমে কোহলি টিকলেন মাত্র ৯ বল। কিউই পেসার উইলিয়াম ও’রুকির বলে লেগ গালিতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কোহলি। আউট হন শূন্য রানে। মাঞ্জরেকারও পাল্টে ফেলেন কথার সুর। কোহলির সাহসিকতার প্রশংসা করলেও শূন্য রানে আউট হওয়ায় তাঁর ব্যাটিং কৌশলের সমালোচনা করে এক্সে আরেকটি পোস্ট করেন, ‘আগেও বলেছি, সামনেও একই কথা বলব। প্রতি বলেই সামনের পায়ে এসে বিরাট নিজের সমস্যাগুলোকে আরও জটিল করে তুলেছে। সেটা (বলের) লেংথ যা–ই হোক না কেন। আজ যে বলে আউট হয়েছে, সেটি আরাম করে পেছনের পায়ে খেলা যেত।’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের সিরিজে ভারতের চার ইনিংসেই তিনে ব্যাট করেছেন গিল। গত বছর জুলাই থেকে টেস্টে ভারতের ব্যাটিং অর্ডারে তিনে তিনি নিয়মিত। কিন্তু বেঙ্গালুরু টেস্ট শুরুর আগে কাঁধে ও ঘাড়ে গিল ব্যথা অনুভব করায় তাঁকে বিশ্রাম দেয় ভারতের টিম ম্যানেজমেন্ট। সে কারণে সরফরাজ খানকে নিজের চার নম্বর জায়গাটা ছেড়ে দিয়ে ব্যাটিংয়ে এক ধাপ ওপরে ওঠেন কোহলি।
টেস্টে কোহলি সর্বশেষ ফিফটি পেয়েছেন ৭ ইনিংস আগে—গত বছর সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এই সংস্করণে তাঁর সর্বশেষ সেঞ্চুরি ৯ ইনিংস আগে—গত বছর পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। অবস্থা এমনই যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ তাঁকে টেস্ট সংস্করণ থেকে অবসর নেওয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন।
৩৫ বছর বয়সী কোহলি কবে কোন সংস্করণ ছাড়বেন, সেই সিদ্ধান্ত তাঁর। তবে আজ কোহলিকে তিনে নামতে দেখে কেউ কেউ নিশ্চয়ই অবাকও হয়েছেন। হয়তো স্মরণ করার চেষ্টা করেছেন টেস্টে তিনে কোহলি এর আগে সর্বশেষ নেমেছিলেন কবে? আট বছর আগে পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ১১৪ ইনিংস পর আবারও নেমেছেন তিনে। টেস্টে সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৭ ইনিংসে তিনে ব্যাট করেছেন এই সংস্করণে ১৯৬ ইনিংসে ব্যাট করা কোহলি। তিন নম্বরে তাঁর গড় ১৬.১৬, রান ৯৭।
টেস্টে এ নিয়ে ১৫ বার শূন্য রানে আউট হলেন কোহলি। এর আগে এই সংস্করণে কোহলি সর্বশেষ শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই। সেটি ২০২১ সালে ওয়াংখেড়েতে। ভারতের স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টেস্টে কোহলির চেয়ে বেশিবার শূন্য রানে আউট হয়েছেন শুধু একজন—বীরেন্দর শেবাগ।
কোহলি তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারে চারে ব্যাট করেছেন সবচেয়ে বেশি। ১৪৮ ইনিংসে এই পজিশনে ৫২.৫৩ গড়ে ৭৩৫৫ রান করেছেন। সেঞ্চুরি ২৫টি, ফিফটি ২১টি। ৩১ ইনিংসে পাঁচে ব্যাট করে ৩৮.৫৭ গড়ে ১০৮০ রান করেছেন কোহলি। ছয়ে ব্যাট করেছেন ৯ ইনিংসে। এ পজিশনে ৪৪.৮৮ গড়ে ৪০৪ রান করেছেন কোহলি। সাতে ব্যাট করেছেন একবারই। সেটি ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মেলবোর্ন টেস্টে। এই সংস্করণে ১৫ বার শূন্য রানে আউট হওয়ার পথে ১২ বারই চারে নেমেছেন কোহলি। ৩, ৫ ও ৬ নম্বরে নেমে একবার করে শূন্য রানে আউট হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান করা টেন্ডুলকার তাঁর ৩২৯ ইনিংসের টেস্ট ক্যারিয়ারে কখনো তিনে ব্যাট করেননি। টেস্টে একবারই ওপেন করেছেন টেন্ডুলকার। ১৯৯৯ আহমেদাবাদ টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে ওপেন করে ১৫ রানে আউট হয়েছিলেন। সৌরভ গাঙ্গুলী তাঁর ১৮৮ ইনিংসের টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৮ বার তিনে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৭ গড়ে ৭৫২ রান করেছেন। সেঞ্চুরি ৩টি, ফিফটি ২টি। টেস্ট ক্যারিয়ারে একবারই ওপেন করেছেন সৌরভ। সেটি ১৯৯৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে।