প্রস্তুতি ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরেছে একটা দল। এরপর বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে অলআউট ৭৭ রানে। যদি বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ হিসেবে এই দলকেই কি পছন্দ করার কথা নয়!
আবার উল্টো করে যদি ভাবেন! সুপার এইটে উঠতে পাঁচ দলের গ্রুপে চার ম্যাচের অন্তত তিনটিতে জিততেই হবে—এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সহজ হিসাব তো এমনই। টানা দ্বিতীয় পরাজয় তাই গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় করে দেবে একটা দলকে; যারা আবার সাবেক চ্যাম্পিয়ন, আরও দুবারের রানার্সআপ। বিশ্বকাপে টিকে থাকতে মরিয়া সেই দলের মুখোমুখি হওয়াটা কি বিপজ্জনক নয়!
এমনভাবে বলা হচ্ছে যেন প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ বেছে নেওয়ায় কোনো দলের পছন্দ-অপছন্দের সুযোগ থাকে! শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই শুরু হবে বাংলাদেশের এই বিশ্বকাপ—এটি তো সেই কবেই ঠিক হয়ে আছে। শুরুতে যে ঘটনাপ্রবাহ আর সেটির তাৎপর্যের কথা বলা হলো, তা তো সাম্প্রতিক সংযোজন। হয়তো তা ম্যাচটার গুরুত্ব আরেকটু বাড়িয়ে দিয়েছে, যোগ করেছে নতুন মাত্রা, এ–ই তো।
এমনিতেই এই ম্যাচে সবার চোখ থাকত। শুধু কি এই দুই দেশের মানুষের? না, তা মনে হয় না। এই দুই দলের ম্যাচ নিয়ে আগ্রহের সীমানা এখন আরও বিস্তৃত। কারণটা আপনি জানেন বলেই অনুমান করি। তারপরও কি মনে করিয়ে দেওয়া ভালো?
ডালাসে শুক্রবার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশে শনিবার সকাল) মুখোমুখি হচ্ছে যে দুই দল, গত কিছুদিনে তাদের লড়াইয়ের ইতিহাস বিশ্ব ক্রিকেটেই সবচেয়ে বেশি ঝাঁজালো। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা মানেই বিতর্ক, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা মানেই বাতাসে স্ফুলিঙ্গ ছুটে বেড়ানো।
ডালাসে শুক্রবার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশে শনিবার সকাল) মুখোমুখি হচ্ছে যে দুই দল, গত কিছুদিনে তাদের লড়াইয়ের ইতিহাস বিশ্ব ক্রিকেটেই সবচেয়ে বেশি ঝাঁজালো।
২০১৮ সালে কলম্বোতে নিদাহাস ট্রফির সেই ‘নাগিন ড্যান্স’ আর গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে টাইমড আউট বিতর্ক যেটির হাইলাইটস। গত মার্চে বাংলাদেশে দুই দলের সিরিজেও ফিরে ফিরে এসেছে ওই টাইমড আউট। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতার পর ‘ভুলি নাই, ভুলব না’ ভঙ্গিতে শ্রীলঙ্কার টাইমড আউট উদ্যাপন, পরে ওয়ানডে সিরিজ জিতে যেটির জবাবে হেলমেট হাতে মুশফিকুর রহিমের ‘অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস’ হয়ে যাওয়া। বারুদে একটা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট তো তৈরিই হয়ে আছে।
মুশফিকুর রহিম এখানে নেই। তবে ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে ক্রিকেট ইতিহাসে ঢুকে যাওয়া অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস আছেন। আছেন টাইমড আউটের আবেদন করে ক্রিকেট–বিশ্বকে হতচকিত করে দেওয়া সাকিব আল হাসান। আর অধিনায়ককে এই বুদ্ধি দেওয়া নাজমুল হোসেন তো এখন নিজেই বাংলাদেশের অধিনায়ক।
ধরে নিন, পেছনে এসব কিছুই নেই। বিতর্কময় প্রেক্ষাপটবিহীন শুধুই একটা নির্ভেজাল ক্রিকেট ম্যাচ। তারপরও কিন্তু ম্যাচটা নিয়ে সবার বাড়তি আগ্রহ থাকত। বলতে গেলে দুই দলেরই সুপার এইটে ওঠার স্বপ্ন লুকিয়ে যে এই ম্যাচেই। ঢাকায় ২০১৪ সালে শিরোপা জয়ের পর আর কখনো শ্রীলঙ্কার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড পেরোনো হয়নি। বাংলাদেশের পরের রাউন্ডে যাওয়ার স্মৃতি আরও পুরোনো। সেই ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই প্রথম ও শেষ।
চাপটা কি শ্রীলঙ্কার ওপরই বেশি? হেরে গেলেও কাগজে-কলমে বেঁচে থাকবে বাংলাদেশের সম্ভাবনা। যেখানে শ্রীলঙ্কার জন্য পরাজয়ের আরেক অর্থ আবারও ব্যর্থতার চোরাবালিতে ডুবে যাওয়া। নেদারল্যান্ডস আর নেপালের বিপক্ষে বাকি দুই ম্যাচ তখন শুধুই খেলার জন্য খেলা।
‘ডি’ ফর ডেথ—এই বিশ্বকাপে ‘ডি’ গ্রুপের এমন ‘গ্রুপ অব ডেথ’ হয়ে যাওয়াটা কাকতালীয়। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারার পর শ্রীলঙ্কা এই নামকরণের সার্থকতা ভালোই টের পাচ্ছে। দ্বিতীয় ম্যাচটাই যে খেলতে হচ্ছে মৃত্যু–উপত্যকায় দাঁড়িয়ে। বাংলাদেশের জন্য হয়তো তা একই রকম ‘মারো নয় মরো’ নয়। তবে বাস্তবতা তো এটাই যে এই ম্যাচে জয়-পরাজয়েই হয়তো লেখা আছে বাংলাদেশের সুপার এইটে ওঠার স্বপ্নপূরণ বা স্বপ্নভঙ্গ।
প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অঘটন ঘটানোর উজ্জ্বল ইতিহাস মনে রাখলে নেদারল্যান্ডসও খুব সহজ হবে না। তারপরও নেদারল্যান্ডস আর নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতবে বলে যদি ধরে নেন, তাতেও তো এই ম্যাচের গায়ে ‘মাস্ট উইন’ তকমা। পরের ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। নিউইয়র্কের ওই উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকান পেসারদের মুখোমুখি হওয়া নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের রোমাঞ্চিত হওয়ার কোনোই কারণ নেই। বরং পেটে গুড়গুড় শব্দ শুনতে পাওয়াটাই হয়তো স্বাভাবিক।
শ্রীলঙ্কা এমনিতেই রেগে আছে। চারটি ভিন্ন ভেন্যুতে গ্রুপের চারটি ম্যাচ, মায়ামিতে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে নিউইয়র্কে আসতে সাত–আট ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে এয়ারপোর্টে। নিউইয়র্কে হোটেল ছিল মাঠ থেকে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা দূরত্বে। একই ভেন্যুতে প্রস্তুতি ম্যাচ আর গ্রুপের চার ম্যাচের তিনটিই খেলার সুযোগ পাওয়া ভারতকে নিয়ে হাসারাঙ্গাদের ক্ষোভটা তাই খুবই যৌক্তিক।
এই বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করতে হচ্ছে যে দলের, সেই দলের নাম অবশ্য শ্রীলঙ্কা নয়। তবে ভেন্যু থেকে ভেন্যুতে দূরত্বের হিসাবে বাংলাদেশ দলকে সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করতে হলেও তাদের শ্রীলঙ্কার মতো দৌড়ের ওপরে থাকতে হচ্ছে না। নিউইয়র্কে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে ডালাসে আসা বাংলাদেশ দল ২ জুন থেকেই এখানে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলার পরদিন সন্ধ্যায় যাবে নিউইয়র্ক। ১০ জুন সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের দিন সন্ধ্যায়ই সেন্ট ভিনসেন্টে যাত্রা। প্রথম পর্বে আর কোনো নড়াচড়া নেই। সেন্ট ভিনসেন্টে গ্রুপের শেষ দুই ম্যাচ—১৩ তারিখে নেদারল্যান্ডস, ১৬ তারিখে নেপাল।
বাংলাদেশকে তাই হিংসা করতেই পারে শ্রীলঙ্কা!