অ্যাশেজে দুই টেস্টে ইংল্যান্ডের হারের কারণ ‘মিস্টার এক্সট্রা’
কাটাছেঁড়া তো অনেক হলো!
ইংল্যান্ডের খামখেয়ালি ব্যাটিং, বোলারদের ধারহীন বোলিং—কত কিছুকেই তো দায়ী করা যেতে পারে। তবে এই কারণটার কথা কি ভেবেছেন একবারও? অ্যাশেজের প্রথম দুই টেস্টে ব্যাট থেকে আসা রান বেশি করেও ইংল্যান্ড কেন ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে? ‘ব্যাট থেকে আসা’ কথাটা ভালোভাবে লক্ষ করুন। এখানেই লুকিয়ে আছে অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ।
প্রথম দুই টেস্টে ব্যাট থেকে আসা রান ইংল্যান্ডেরই বেশি। সিরিজে এখন পর্যন্ত ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং গড় বেশি। ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা যেখানে রান করেছেন ৩৩.১ গড়ে, অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের গড় ৩২.৭।
প্রথম দুই টেস্টে দ্রুতগতিতে রান তুলেছে কারা? এই প্রশ্নে অবশ্য ভাবার কিছু নেই, উত্তরটা ইংল্যান্ডের পক্ষেই আসবে।
প্রথম দুই টেস্টে বেন স্টোকসের দল রান তুলেছে ওভারপ্রতি ৪.৩৬ করে আর প্যাট কামিন্সরা ৩.৩৬, যা ইংল্যান্ডের চেয়ে ৩১ শতাংশ কম। মজার ব্যাপার হলো গত অ্যাশেজের প্রথম দুই টেস্ট শেষ হওয়ার পর থেকে ‘বাজবল’ নামক নতুন কৌশলে খেলার আগপর্যন্ত ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ৩০ শতাংশ কম গতিতে রান তুলেছে।
টেস্ট ইতিহাসে ২৭৪তম দল হিসেবে সিরিজে ২-০ তে পিছিয়ে গেছে স্টোকসের দল। সমষ্টিগত ব্যাটিং গড় এর চেয়ে বেশি নিয়ে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে রাখার ঘটনা এর আগে মাত্র ৪টি। আর ২-০ তে পিছিয়ে পড়া কোনো দলই টেস্টে এর চেয়ে বেশি দ্রুত রান তুলতে পারেনি। বুঝেছি, বিরক্ত হচ্ছেন! চিৎকার দিয়ে প্রশ্ন করতে চাইছেন, আরে ভাই, তাহলে ইংল্যান্ড হারল কেন?
ইংল্যান্ড হেরেছে ‘এক্সট্রা’র কারণে,মানে অতিরিক্ত রান দেওয়ার কারণে। হ্যাঁ, নির্দিষ্ট কোনো কারণকেই ম্যাচ হারার একমাত্র কারণ বলার সুযোগ নেই, তবে এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই এই সব রান অনেক পার্থক্য গড়ে দেয়। প্রথম দুই টেস্টে ইংল্যান্ডের ব্যাট থেকে এসেছে ১২৬০ রান, অস্ট্রেলিয়ানরা করেছে ১২৪৫।
তবে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ৬০ রান অতিরিক্ত দিয়েছে ইংল্যান্ড। প্রথম দুই টেস্টে ইংল্যান্ডের অতিরিক্ত রান ১১৮, যেখানে অস্ট্রেলিয়ার খরচ ৫৮। এরপর বোধ করি, প্রথম দুই টেস্টের ফলাফলটা আরও একবার মনে করিয়ে দেওয়া উচিত। প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডের হার মাত্র ২ উইকেটে আর দ্বিতীয় টেস্টে মাত্র ৪৩ রানে।
১১৮ সংখ্যাটা আরেকটু ভাঙলে স্টোকসের ইংল্যান্ডের জন্য আরও একটি ভয়ংকর তথ্য সামনে আসে। সংখ্যাটা অবিশ্বাস্য লাগবে, তবে এটাই সত্যি! প্রথম দুই টেস্টে ইংল্যান্ডের বোলাররা নো বল করেছে ৪১টি। এই ৪১ বলে তো শুধু সমানসংখ্যক রানটাই দেওয়া নয়, অনেকগুলো সুযোগও নষ্ট করা।
এই যেমন উসমান খাজা প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ১১২ রানে স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে বোল্ড হলেও ক্রিজ ছেড়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি। কারণটা ওই নো বল। এরপর খাজা আরও ২৯ রান যোগ করেন। যদিও অস্ট্রেলিয়াও নো বল দিয়েছে ১৫টি।
সুযোগ মিসেও বড় ব্যবধানে এগিয়ে আছে ইংলিশরা। দুই টেস্টে ইংল্যান্ড সুযোগ মিস করেছে ১৪টি, যেখানে অস্ট্রেলিয়া ৭টি। এই সিরিজে ইংল্যান্ডকে যে সবচেয়ে ভুগিয়েছে সেই খাজার ইনিংসগুলো এমন হলেও পারত ১১২,৫,১,১৯। খাজার দেওয়া সুযোগ কাজে লাগাতে না পারায় যেটা হয়েছে—১৪১,৬৫,১৭,৭৭। দিনশেষে ইংল্যান্ডের হারের জন্য যেটা ছিল যথেষ্ট।
অবশ্য ২–০ ব্যবধানে অ্যাশেজে পিছিয়ে পড়া ইংল্যান্ডের জন্য নতুন কিছু নয়। ১৯৮৯ সালের পর হওয়া ১৯ অ্যাশেজের মধ্যে ১১টিতেই ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছে ইংল্যান্ড। অন্যদিকে ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২-০ লিড পেয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মাত্র দুইবার, ১৯৭৮–১৯৭৯ অ্যাশেজ ও ২০১৩ সালের অ্যাশেজে।