সেই বিশাখাপট্টনম, এই ধোনি—মাঝে ১৯ বছর
‘ইন দ্য গ্রাউন্ড অব মেমরিস’। বাংলা করলে দাঁড়ায়—স্মৃতিমেদুর সেই মাঠে।
বিশাখাপট্টনমের গ্রাউন্ডসম্যানদের সঙ্গে মহেন্দ্র সিং ধোনির তোলা একটা ছবি পোস্ট করে ওপরের ক্যাপশন দিয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস। দল হারলেও ধোনির মুখে হাসিটা স্পষ্ট। এ মৌসুমে আবার চুল লম্বা রেখেছেন।
২০০৫ সালে বিশাখাপট্টনমের ওই দিনেও ধোনির চুল লম্বাই ছিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের তরুণ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান খেলেছিলেন ১৪৮ রানের ইনিংস। ভারতের কোনো উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের রেকর্ড ছিল সেটি (যেটি সে বছর ধোনি নিজেই ভাঙেন জয়পুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ১৮৩ রান করে)। ধোনি দিয়েছিলেন তাঁর আগমনী বার্তা।
মাঝে ১৯ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু স্মৃতিমেদুর ওই মাঠে যেন বদলায়নি কিছুই। দিল্লি ক্যাপিটালসের কাছে গতকাল চেন্নাই হেরেছে ঠিকই। কিন্তু হারার আগে ধোনি দেখিয়েছেন ঝলক। যে ঝলক এক ধাক্কায় আপনাকে নিয়ে যাবে স্মৃতির রাজ্যে, হয়তো ১৯ বছর পেছনের কোনো দিনে।
মৌসুমের শুরুতে এবার ফিরোজ শাহ কোটলার বদলে বিশাখাপট্টনমের এ মাঠে ঘরের ম্যাচগুলো খেলছে দিল্লি ক্যাপিটালস। দিল্লির ঘরের মাঠ, সমর্থনটা তাদের পক্ষেই হওয়ার কথা ছিল বেশি।
কিন্তু ধোনি নামার পর যেন বদলে গেল সব। বিশাখাপট্টনমে রাতের সবচেয়ে জোরাল উল্লাসটা এল তখন। শিগগিরই সেটিকেও ছাড়িয়ে গেল পরেরগুলো।
এ মৌসুমে ধোনি গতকালই প্রথম ব্যাটিংয়ে নামলেন। শিবাম দুবে আউট হওয়ার সময় চেন্নাইয়ের সমীকরণ ছিল বেশ কঠিন—২৩ বলে ৭১ রান। সে সমীকরণ ধোনি মেলাতে পারেননি। তবে বিশাখাপট্টনমকে বিনোদন দিয়েছেন ঠিকই।
মুকেশ কুমারের প্রথম বলে স্কয়ার লেগ দিয়ে চার। এর আগে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ধোনি সর্বশেষ ব্যাটিং করেছিলেন ২০২৩ সালের মে মাসে—৩০৭ দিন আগে। কিন্তু নামটা যখন ধোনি, তখন সময় যেন মিলিয়ে যায়।
মুকেশের শেষ বলে মারলেন আরেকটি চার। এরপর দিনের সেরা বোলার খলিল আহমেদকে ছক্কা এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে। শেষ ওভারে আনরিখ নর্কিয়া, চেন্নাইয়ের দরকার ৪১ রান। ধোনিও হয়তো জানেন, সেটি সম্ভব নয় আর।
কিন্তু বাইরে থেকে কেউ বিশাখাপট্টনম দর্শকদের উল্লাসের আওয়াজে ভুল বুঝতেই পারেন। মনে হবে চলছে টানটান উত্তেজনার কোনো ম্যাচ। নর্কিয়াকে কাভার দিয়ে চার মেরে শুরু করলেন। এরপর লো ফুলটসে ওয়াইড লং দিয়ে ছক্কা মারলেন এক হাত দিয়েই! দেখে কে বলবে, আগামী জুলাইয়ে ধোনি পূর্ণ করতে চলেছেন ৪৩!
শেষও করলেন ছক্কা মেরে। তাতে ২০ রানের হার আটকায়নি চেন্নাইয়ের। দুই ম্যাচ জেতার পর চেন্নাইয়ের এটি প্রথম হার, দুই ম্যাচ হারের পর ঋষভ পন্তের দিল্লির প্রথম জয়। তবে কে হারল, কে জিতল—ধোনি সমর্থকদের কাছে তখন সেটি যেন অর্থহীন। ভারতে টুইটারে (এক্সে) তখন ট্রেন্ডিং-ধোনি, থালা, মাহি, দ্য লিজেন্ড, দ্য ম্যান। ধোনি যে ফিরেছেন!
ম্যাচ শেষে উচ্ছ্বসিত চেন্নাই কোন স্টিফেন ফ্লেমিং ধোনির ব্যাটিং নিয়ে বলেছেন, ‘সুন্দর, তাই না? এমনকি মিড উইকেটের ওপর দিয়ে মারা এক হাতেরটিও (ছক্কা)। প্রাক্-মৌসুমে সে দুর্দান্ত খেলছিল।’
ধোনির ব্যাটিংয়ে চেন্নাই উজ্জীবিত হয়েছে বলেও মনে করেন ফ্লেমিং, ‘গুরুতর একটা অস্ত্রোপচার করিয়ে এসেছে। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ভালো ছিল, ব্যাটিংও দারুণ ছিল। কঠিন একটা দিনের শেষে তার ওই পারফরম্যান্স ইতিবাচক একটা ব্যাপার এনেছে। সে যে ব্যবধান ২০ রানে নামিয়ে এনেছে, রান রেটের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। দর্শনীয় ক্রিকেট খেলেছে।’