‘প্রথম’–এর মোহনায় মিললেন প্রীতি, স্যামি ও ডু প্লেসি

সেন্ট লুসিয়া কিংসের মালিক প্রীতি জিনতা, কোচ ড্যারেন স্যামি ও অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিছবি: ইনস্টাগ্রাম

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স—প্রীতি জিনতার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেজগুলোয় নতুন কোনো পোস্ট নেই। কিন্তু সুখবরটা সকাল সকালই প্রীতির কানে পৌঁছানোর কথা। খবর পাওয়ার পর বলিউডের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ক্রিকেট দলের মালিকও ভাবতে পারেন।

প্রীতির দল যে অবশেষে শিরোপা জিতেছে। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (সিপিএল) ফাইনালে আজ গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্সকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে প্রীতির মালিকানাধীন দল সেন্ট লুসিয়া কিংস।

নিজেদের মাঠ প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৩৮ রান তুলেছিল গায়ানা। রান তাড়ায় ১৫ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৭৩ তোলায় হারের শঙ্কায় পড়েছিল সেন্ট লুসিয়া। এরপর অ্যারন জোন্স আর রোস্টন চেজের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে মাত্র ১৯ বলেই প্রয়োজনীয় ৬৬ রান নিয়ে ফেলে দলটি।

সিপিএলে সেন্ট লুসিয়ার প্রতিনিধিত্ব করা কোনো দল প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলো। এর মধ্য দিয়ে প্রীতির দীর্ঘ ১৭ বছরের অপেক্ষাও ফুরাল, যাতে বড় অবদান ফাফ ডু প্লেসির নেতৃত্ব ও ড্যারেন স্যামির কোচিং দক্ষতার।

দেশের বাইরে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের অধিনায়ক হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকান ডু প্লেসির এটাই প্রথম শিরোপা। বিদেশে এর আগে তিনি পাঁচটি শিরোপা জিতলেও সব টুর্নামেন্টেই খেলেছেন অন্য কারও নেতৃত্বে। দেশের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে ৪০ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান অধিনায়ক হিসেবে ট্রফি জেতেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিলুপ্ত টি–টোয়েন্টি আসর এমজানসি সুপার লিগে পার্ল রকসের হয়ে ২০১৯ সালে।

কোচ হিসেবে স্যামিরও এটা প্রথম ট্রফি। এর আগে স্বীকৃত টি–টোয়েন্টি প্রতিযোগিতায় তিনি তিনটি ট্রফি জিতেছিলেন অধিনায়ক হিসেবে, যার দুটি ২০১২ ও ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, অন্যটি ২০১৭ সালে পেশোয়ার জালমির হয়ে পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল)।

কোচ হিসেবে প্রথমবারের মতো দলকে চ্যাম্পিয়ন বানানোর উচ্ছ্বাস ড্যারেন স্যামির
ছবি: সিপিএল

মজার ব্যাপার হলো ২০১২ সালের ৭ অক্টোবর স্যামির নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ঠিক ১২ বছর পর স্যামি আরেকটি ৭ অক্টোবরে প্রথম ট্রফি জিতলেন কোচ হিসেবে।

সেন্ট লুসিয়া কিংসের অন্যতম মালিক প্রীতি জিনতার ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয় ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) দল পাঞ্জাব কিংসের হয়ে। প্রতিষ্ঠার সময় পাঞ্জাব কিংসের নাম ছিল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। দলটির মালিকানায় প্রীতি ছাড়াও আছেন তাঁর সাবেক প্রেমিক নেস ওয়াদিয়া এবং দুই ব্যবসায়ী মোহিত বর্মণ ও করণ পাল।

তবে আইপিএলে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সব কটি মৌসুমে খেলেও ট্রফি ছুঁয়ে দেখতে পারেনি পাঞ্জাব। দলটির সর্বোচ্চ সাফল্য ২০১৪ মৌসুমে রানার্সআপ হওয়া। ১৭ মৌসুমের মধ্যে ১৫টিতেই তারা প্লে–অফ পর্বে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে। জয়ের চেয়ে হারের সংখ্যাই তাদের বেশি। তবু মাঠে খেলা দেখতে গেলে বলিউডের এই জনপ্রিয় অভিনেত্রীর মুখে লেগে থাকে হাসি।

আইপিএলে তাঁর দল মৌসুমের পর মৌসুম ব্যর্থ হলেও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে নিজেদের পরিসর বাড়াতে ২০২১ সালে সিপিএলে সেন্ট লুসিয়ার মালিকানা কেনেন। আইপিএলে ভাগ্য বদলাতে একই বছর কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবেরও নাম বদলে ফেলেন। আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির নাম পাঞ্জাব কিংস আর সিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির নাম দেন সেন্ট লুসিয়া কিংস।

আরও পড়ুন

নাম বদলে পাঞ্জাব কিংস আইপিএলে সৌভাগ্যের পরশ না পেলেও সেন্ট লুসিয়া কিংস ২০২১ সালে সিপিএলে নিজেদের প্রথম মৌসুমেই হয় রানার্সআপ। ২০২২ ও ২০২৩ সালেও দলটি ওঠে প্লে–অফ পর্বে। অবশেষে এবার ডু প্লেসির নেতৃত্বে আর স্যামির কোচিংয়ে ধরা দিল সর্বোচ্চ সাফল্য।

কোনো কিছুর পেছনে লেগে থাকলে সাফল্য যে ধরা দেবেই কিংবা অপেক্ষার ফল যে অনেক ক্ষেত্রেই মধুর হয় প্রীতি জিনতা, ফাফ ডু প্লেসি, ড্যারেন স্যামিরা যেন এই কথাগুলোর সর্বশেষ বাস্তবিক উদাহরণ। এদিক থেকে অবশ্য ডু প্লেসিকে এগিয়ে রাখতে হয়। সেন্ট লুসিয়া অধিনায়ক ডু প্লেসি আর কোচ স্যামি দুজন সমবয়সী—বয়স ৪০ পেরিয়েছে। ২০১৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তো দুজন দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নেতৃত্বও দিয়েছেন। তবে স্যামি বছর চারেক আগে খেলা ছেড়ে কোচিংয়ে ঝুঁকেও ডু প্লেসি দিব্যি খেলে চলেছেন।

এ বছর চারটি ভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ডু প্লেসি। দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ২০–এ জোবার্গ সুপার কিংস, যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেটে (এমএলসি) টেক্সাস সুপার কিংস, আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু আর সিপিএলে সেন্ট লুসিয়া কিংস—তাঁর অধিনায়কত্বে চারটি দলই ন্যূনতম প্লে–অফ উঠেছে। উন্নতির সিঁড়ি বাইতে বাইতে আজ তো ট্রফিই জিতে গেল ডু প্লেসির সেন্ট লুসিয়া। এর মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে গেলেন স্বীকৃতি টি–টোয়েন্টি প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি বয়সে শিরোপা জেতা অধিনায়কদের একজন।