গুরবাজ–জাদরানের সেঞ্চুরি, জিততে হলে রেকর্ড গড়তে হবে বাংলাদেশকে
প্রথম ওয়ানডেতে বাজে ব্যাটিং ছিল বাংলাদেশের হারের কারণ। আজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বোলিংয়ের দিকে আঙুল তোলাই যায়। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তামিম ইকবালের জায়গায় অধিনায়কত্ব করতে নামা লিটন দাস টসে জিতে আফগানদের ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান। আর সে আমন্ত্রণ লুফে নিয়ে রানের পাহাড় গড়েছেন দুই আফগান ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান ও রহমানউল্লাহ গুরবাজ। দুজনের জোড়া সেঞ্চুরি আর রেকর্ড উদ্বোধনী জুটিতে আফগানিস্তান করেছে ৯ উইকেটে ৩৩১ রান। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ এত রানের লক্ষ্য পেরোতে পারেনি কখনো।
দিনটা ব্যাটসম্যানদের হতে পারে, এ আভাসটা ইনিংসের প্রথম ওভারেই পাওয়া যায়। প্রথম ওভার করতে আসা মোস্তাফিজুর রহমান সুইংয়ের খোঁজে বল করছিলেন ফুল লেংথে। স্ট্রাইকে থাকা রহমানউল্লাহ গুরবাজ প্রথম ৪টি বল দেখলেন। মিড অফ দিয়ে দুর্দান্ত ড্রাইভে বল বাউন্ডারিতে পাঠানোর জন্য অপেক্ষা করলেন পঞ্চম বল পর্যন্ত। একটুও সুইং নেই। নেই সিম মুভমেন্ট। বল ব্যাটে আসছে সুষম বাউন্স ও গতিতে। এই তথ্যগুলো বাংলাদেশ দল নিশ্চয়ই প্রথম ওভারেই আঁচ করতে পেরেছে।
নিশ্চিত হতেও বেশি সময় লাগেনি। কারণ মোস্তাফিজের সঙ্গে নতুন বল ভাগাভাগি করা হাসান মাহমুদ উইকেট থেকে কোনো মুভমেন্টই পাচ্ছিলেন না। অথচ এ বছর সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক বোলার হাসানই। সে জন্যই কি না, পাওয়ার প্লেতে মাত্র দুই ওভারের স্পেল করেন হাসান।
লিটন দাস পাওয়ার প্লেতে ইবাদত হোসেনকেও বোলিং করিয়েছেন। হাত ঘুরিয়েছেন সাকিব আল হাসানও। ১৪তম ওভারে বোলিংয়ে এসেছেন মেহেদী হাসান মিরাজও। লিটনের হাতে থাকা পাঁচ বোলারের প্রত্যেকেই ততক্ষণে বোলিং করে ফেলেছেন। কিন্তু আফগান ওপেনারদের জুটি ভাঙতে পারেনি। গুরবাজ তাঁর স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন, আর ইব্রাহিম ধরে খেলছিলেন। দুজনের যুগলবন্দীতে রান আসছিল ওভার প্রতি সাড়ে ছয় করে। বিশাল স্কোরের ভিত গড়া হয়ে যায় ততক্ষণে।
বাংলাদেশ দলের সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল, মারতে গিয়ে একটা না একটা পর্যায়ে তো গুরবাজ আউট হবেনই। আর ইব্রাহিম যে গতিতে খেলছেন, তাতে সে দ্রুত ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দিতে পারবে না। কিন্তু গুরবাজ থামেননি। ৪৮ বলে ফিফটি করেছেন, সেটিকে ১০০ বলের সেঞ্চুরিতে পরিণত করেছেন।
সেঞ্চুরির পর আরও ৪৫ রান যোগ করেন মাত্র ২৫ বলে। সাকিবের বলে ইনিংসের ৩৭তম ওভারে এলবিডব্লু হওয়ার আগে গুরবাজের ব্যাট থেকে এসেছে ১২৫ বলে ১৪৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। ১৩টি চার ও ৮টি ছক্কা ছিল এই আফগান ওপেনারের ইনিংসে। গুরবাজের এটি এই সংস্করণে চতুর্থ সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয়। গত বছর এই মাঠেই এসেছিল প্রথম সেঞ্চুরি।
গুরবাজের বিদায়ে ভেঙেছে ২৫৬ রানের ওপেনিং জুটিও। ইব্রাহিমকে নিয়ে গুরবাজের গড়া জুটিটি ওয়ানডেতে যে কোনো উইকেটেই আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ জুটি। আগের রেকর্ড ২১৮*, ২০১০ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে করিম সাদিক ও মোহাম্মদ শেহজাদের।
‘ওয়ান ব্রিংস টু’—গুরবাজের বিদায়ের পরের ওভারেই তিনে নামা রহমত শাহ আউট হতে দেখলে ক্রিকেটের এই পুরোনো কথাটা মনে হতে পারে। ইবাদত হোসেনের বলে লেগের দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে মোস্তাফিজের হাতে ধরা পড়েন মাত্র ২ রানে। অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদির ইনিংসও বড় হয়নি। ২ রানে বোল্ড হয়েছেন মিরাজের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে। মিরাজ এখানেই থামেননি। ১০ রানের মাথায় আরেক বাঁহাতি নাজিবুল্লাহ জাদরানকে আউট করেন এই অফ স্পিনার।
উইকেট পতনের এ সময়েই অন্য প্রান্তে থাকা থিতু ইব্রাহিম ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি পেয়ে যান। কিন্তু সেঞ্চুরি করেই মোস্তাফিজকে মারতে গিয়ে থামে ইব্রাহিমের ইনিংস। ১১৯ বল খেলে ৯টি চার ও ১টি ছক্কায় ১০০ রান করেন এই ডানহাতি ওপেনার। ততক্ষণে আফগানদের রান ৩০০ পেরিয়ে গেছে। সেটিকে শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ৩৩১ রানে নিয়ে যান মোহাম্মদ নবী। ১৫ বল খেলে তিনি ২৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন।
বাংলাদেশ দলের বোলারদের জন্য দুঃস্বপ্নের মতো শুরু হওয়া দিনের শেষটা খারাপ বলা যাবে না। মোস্তাফিজ, হাসান, মিরাজ ও সাকিব দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। এক উইকেট পেয়েছেন ইবাদত। তবে তাঁর ৯.২ ওভার বল করে পায়ে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়ার দৃশ্যটা অবশ্য বাংলাদেশ দলের জন্য দুশ্চিন্তার। আজ তিনি ব্যাটিং করতে পারবেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।