ভারত ফাইনালে, বাংলাদেশের বিদায়

ফাইনালে উঠে গেছে ভারতএএফপি

ভারত: ৪৯.১ ওভারে ২১৩

শ্রীলঙ্কা: ৪১.৩ ওভারে ১৭২

ফল: ভারত ৪১ রানে জয়ী।

দুনিত ভেল্লালাগেকে নিয়ে হঠাৎ ভারতীয় শিবিরে কৌতূহল। ভারতীয় শিবির মানে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। গত জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ঘরের মাঠের ওয়ানডে সিরিজে ভারত তাঁকে দুই ম্যাচে পেলেও ভেল্লালাগে তখন মনে রাখার মতো কিছু করতে পারেননি। এক ম্যাচে ৮ ওভারে ৬৫ রান দিয়ে উইকেট পাননি। আরেক ম্যাচে ২ ওভারে ১২ রান দেওয়ার পর পাননি আর বোলিংই, উইকেট তো নয়ই।

২০ বছর বয়সী সেই বাঁহাতি স্পিনারই প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়লেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ৫ উইকেট পেয়ে গেলেন ভারতেরই বিপক্ষে এবং তার মধ্যে তিনজনই আবার বিশ্বের বড় বড় বোলারকে পরীক্ষায় ফেলা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা ও লোকেশ। এমন বোলারকে নিয়ে কৌতূহল ছড়ানোই স্বাভাবিক।

ভেল্লালাগেকে নিয়ে আরও বিস্তারিত বলার আগে ম্যাচের ফলাফলটা বলে নেওয়া ভালো। কারণ, ব্যাটে-বলে এই অলরাউন্ডারের কীর্তির কথা পড়তে পড়তে মনে হতে পারে, ম্যাচটা শ্রীলঙ্কাই জিতেছে। আসলে তা নয়। বল হাতে ভেল্ললাগের ৪০ রানে ৫ উইকেট এবং ব্যাট হাতে ৪২ রানের লড়াকু ইনিংসের পরও শ্রীলঙ্কার টানা ১৩ ওয়ানডে জয়ের রথ থামিয়ে দিয়ে এ ম্যাচে জয়ী দলের নাম ভারত। ৪১ রানের জয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ বাকি থাকতেই ফাইনালে উঠে গেছে রোহিত শর্মার দল। বাংলাদেশের শেষ দুইয়ে যাওয়ার যে তিল পরিমাণ সম্ভাবনা কাগজে-কলমে অন্তত ছিল, এখন মুছে গেছে সেটিও। আগামীকাল শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান ম্যাচের জয়ী দলই হবে ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ। আর যদি ম্যাচটা বৃষ্টিতে ভেসে যায়, তাহলে শ্রেয়তর নেট রান রেটের সুবাদে ফাইনালে চলে যাবে শ্রীলঙ্কা।

আরও পড়ুন

ভারতের ইনিংস ২১৩ রানে থামিয়ে দিতে ভেল্লালাগের নেওয়া ৪০ রানে ৫ উইকেটের ছিল বড় ভূমিকা। অবশ্য ভারতের বাকি ৫ উইকেটও গেছে স্পিনারদের দখলে। হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করা চারিত আসালাঙ্কা নিয়েছেন ৪টি, অন্য উইকেটটি মহীশ তিকশানার। ওয়ানডেতে এই প্রথম ভারত এক ম্যাচে ১০ উইকেটই হারাল স্পিনারদের বলে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের ম্যাচে মাত্র ১ উইকেট পেলেও ভেল্লালাগে ১০ ওভারে রান দিয়েছিলেন মাত্র ২৬। ভারতের ব্যাটিংয়ের সময় সেই তথ্য নিয়ে এসে এক ভারতীয় সাংবাদিক এই প্রতিবেদকের কাছে জানতে চাইলেন, সেদিন ম্যাচের পর বাংলাদেশের কোচ-ক্রিকেটাররা ভেল্লালাগেকে নিয়ে কিছু বলেছিলেন কি না। তাঁর বোলিংয়ের বিশেষত্বটা আসলে কী?

ভারতের ইনিংস ২১৩ রানে থামিয়ে দিতে ভেল্লালাগের নেওয়া ৪০ রানে ৫ উইকেটের ছিল বড় ভূমিকা
এএফপি

তখন কে জানত, অলরাউন্ডার ভেল্লালাগে ভারতকে অস্বস্তিতে রাখবেন ব্যাট হাতেও! ৯৯ রানের মধ্যে শ্রীলঙ্কার ৬ উইকেট পড়ে গেলেও ভারতকে ফাইনাল নিশ্চিত করা ম্যাচটি স্বস্তিতে জিততে দেননি এই তরুণ। সপ্তম উইকেটে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার সঙ্গে ৬৩ রানের জুটিতে ম্যাচ প্রায় ঘুরিয়েই দিয়েছিলেন ৮ নম্বরে নামা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ভেল্ললাগে। কূলদীপ যাদবের করা ৪১তম ওভারে ১ বলের ব্যবধানে কাসুন রাজিতা আর মাতিশা পাতিরানার আউটে শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষ হয়ে যাওয়ার পর মাঝমাঠে হতাশ ভঙ্গিতে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন ভেল্লালাগে। দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর ৪৬ বলে করেছেন অপরাজিত ৪২ রান। সবই যে বিফলে গেল!

গত বছরের জুনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোম সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর এ ম্যাচের আগপর্যন্ত ১২টি ওয়ানডে খেলে ভেল্লালাগের উইকেট ছিল ১৩টি, এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ছিল ৩ উইকেট। আর পাকিস্তানের বিপক্ষে গত বছরের জুলাইয়ে খেলা একমাত্র টেস্টে কোনো উইকেট নেই।

আরও পড়ুন

ভেল্লালাগে-অস্বস্তির আগে থেকেই অবশ্য ম্যাচটা ক্লান্তির অন্য নাম হয়ে দাঁড়িয়েছিল ভারতের জন্য। টানা তিন দিন জুতা-জার্সি পরে, ব্যাট-বল নিয়ে মাঠে আসারই একটা ক্লান্তি আছে। তিন দিন মাঠে এসে তিন দিনই খেলতে নামার ক্লান্তির কথা তাহলে একবার ভাবুন। তিন দিনের প্রথম দুই দিন পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা আবার কেটেছে একই সঙ্গে টেস্টের ধৈর্য পরীক্ষা এবং টি-টোয়েন্টির অনিশ্চয়তার দোলাচলে। বৃষ্টি থামার অপেক্ষা নিয়েছে ধৈর্যের পরীক্ষা, টি-টোয়েন্টির অনিশ্চয়তা ছিল মাঠে নেমেই কখন আবার বৃষ্টি আসে, সেই আশঙ্কায়।

আগের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ উইকেট নেওয়া বাঁহাতি স্পিনার কুলদীপ যাদব নিয়েছেন ৪৩ রানে ৪ উইকেট
এএফপি

ভারতের ব্যাটিং দেখে যে কেউ ভাবতে পারেন, টানা তিন দিন ধরে খেলার এই হলো ফল। পাকিস্তানের আগুনে বোলিংয়ের সামনেও ৩৫৬ রান করে যে দল ২২৮ রানে জেতে, শ্রীলঙ্কার বোলিংয়ের সামনে তারাই কি নইলে মাত্র ২১৩ রানে অলআউট হয়ে যায়! ১৭০ রানে ৫ উইকেট হারানো ভারতের শেষ ৬ উইকেট পড়েছে মাত্র ৪৩ রানে। বৃষ্টি এর মধ্যেও একবার ঘণ্টাখানেকের জন্য থামিয়েছে খেলা।

অপর প্রান্তে ভেল্লালাগের বোলিংটা বাদ দিলে ভারত ইনিংসের হাইলাইটস বলতে অধিনায়ক রোহিত শর্মার ৪৮ বলে ৫৩ রানের ইনিংসটি। রাজিতা ও পাতিরানাকে মারা দুই ছক্কার সঙ্গে সাত বাউন্ডারি, যার চারটিই এসেছে দাসুন শানাকার করা দশম ওভারে। ৪৮ বলে ৫৩ করা রোহিত বাউন্ডারি থেকেই নিয়েছেন ৪০ রান।

ভালো কথা, ভেল্লালাগের কথা বলতে বলতে আরেকজন স্পিনার তো আড়ালেই থেকে গেলেন—কুলদীপ যাদব! আগের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ উইকেট নেওয়া এই বাঁহাতি স্পিনার নিয়েছেন ৪৩ রানে ৪ উইকেট। বাঁহাতি ভেল্লালাগের জবাবটা বাঁহাতি দিয়েই দিয়েছে ভারত।