‘ফেবারিট’ তকমা গায়ে মেখেই বিশ্বকাপে এসেছিল ইংল্যান্ড। সেটা মূলত তাদের বিস্ফোরক ব্যাটিং–সামর্থ্যের কারণেই। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে সেই চেনা ইংল্যান্ডের দেখা মিলেছে মাত্র একবার—ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালে। কন্ডিশনের কারণে এবার সে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের সুযোগও ছিল না। শিরোপা জিততে হলে বোলিং আক্রমণ নিখুঁত হতেই হতো। আর ইংল্যান্ডের দুর্বলতার জায়গা ছিল ওই বোলিংয়েই। অথচ ফাইনালে সেই বোলিংয়ের সৌজন্যেই পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা জিতল ইংল্যান্ড।
মনে হচ্ছিল, ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ও পাকিস্তানের বোলিংয়ের লড়াই হবে শিরোপার নির্ধারক। কিন্তু ফাইনালের রাতে স্যাম কারেন ও আদিল রশিদের বোলিংই ইংলিশদের জয়ের মঞ্চ গড়ে দিয়েছে। আর সে মঞ্চে আরও একবার দাপট দেখাল বেন স্টোকস। ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা এটাই প্রমাণই করে, সাদা বলের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডই সময়ের সেরা দল। এখন বোলাররা ছন্দ খুঁজে পাওয়ায় ওরা কোথায় গিয়ে থামবে, কে জানে!
মেলবোর্নে আজ টসের বড় ভূমিকা ছিল। ইংল্যান্ড রান তাড়া করতে পছন্দ করে। লক্ষ্য যেমনই হোক, রান তাড়ার জন্য সব ধরনের ব্যাটসম্যান তাদের আছে। আজ সেই রান তাড়ার কাজটা প্রথম ইনিংসেই বোলাররা সহজ করে দিয়েছে।
উইকেটের সাহায্যটা ইংল্যান্ডের বোলাররা খুব ভালোভাবে কাজে লাগাতে পেরেছে। প্রথম ইনিংসে যদি প্রতিপক্ষকে অল্প রানে রাখা যায়, তাহলে উইকেট কঠিন হলেও রান তাড়া করা তেমন চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে না। রান যেমনই হোক, লক্ষ্য সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা থাকে।
পাকিস্তানের জন্য রিজওয়ানের দ্রুত আউট হওয়া বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। সে যদি থাকতে পারত, তাহলে পাকিস্তানের ইনিংসটা আরও দীর্ঘ হতো। তার মানসিকতাটাই এমন। তার সঙ্গে অন্য ব্যাটসম্যানরাও খুব ভালো ব্যাটিং করে। সে যে গতিতে রান করত, তা অন্যদেরও স্বচ্ছন্দ্যে খেলতে সাহায্য করত। এ ক্ষেত্রে কারেন ও রশিদের কথা বলতেই হয়। দুজনের জন্যই পাকিস্তানের রানটা ১৫০ ছাড়ায়নি।
তবে পাকিস্তানের বোলিং এরপরও যে ম্যাচটাকে যে ১৯ ওভার পর্যন্ত টেনে নিতে পেরেছে, এতেও বোঝা যায় ওদের বোলিং কতটা শক্তিশালী। এখন এটাও বলা যায়, এবারের বিশ্বকাপের সেরা বোলিং লাইনআপ পাকিস্তানেরই। শাহিন শাহ আফ্রিদি যদি চোটে না পড়ত, তাহলে ম্যাচের গল্পটা হয়তো অন্য রকম হতেও পারত। কারণ, সে সময় ইংল্যান্ড কিছুটা হলেও চাপে ছিল। বলের সঙ্গে রানের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। শাহিন মাঠ ছাড়ার পর অফ স্পিনার ইফতেখার বোলিংয়ে এলেই কয়েকটি বাউন্ডারিতেই চাপ দূর করে স্টোকস।
তখন ইফতেখারকে বোলিং দেওয়াটা কতটা ঠিক ছিল, সে প্রশ্ন নিশ্চয়ই উঠবে। তখন মূল বোলারকেই বোলিং করানো উচিত ছিল। তাহলে ম্যাচটা আরও গভীরে যেতে পারত। তখন যেকোনো কিছুই হতে পারত। যেমনটা সাকিবকে করতে দেখেছি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। কারণ, সেই ইফতেখারের ওভার থেকেই ইংল্যান্ড ছন্দটা ধরে। এরপর আর থামতে হয়নি তাদের।
স্টোকসের কথাটা আলাদা করে বলতেই হয়। তার মতো ক্রিকেটার যদি কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৫০-৬০ বল খেলে ফেলে, তাহলে সে সহজেই সেঞ্চুরি করতে পারবে। এ ধরনের ইনিংস খেলাই বরং স্টোকসের জন্য বেশি সহজ। কিন্তু আজ সেই স্টোকসই খেলেছে ম্যাচের অবস্থা ও প্রতিপক্ষের বোলিংকে সম্মান দেখিয়ে। চাপের মুহূর্তে ধৈর্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা দেখিয়েছে।
এই ক্রিকেটীয় মেধা থাকা এক জিনিস, আর সেটা বাস্তবায়ন করতে পারা আরেক জিনিস। এমন দিনে এই বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে সে যদি অল্প রাতে আউট হয়ে যেত, অন্যরা ইংল্যান্ডকে কতটা এগিয়ে নিতে পারত, সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। স্টোকসের জন্য অবশ্য এসব নতুন নয়। ২০১৯ বিশ্বকাপেও সে ইংল্যান্ডের শিরোপা জয়ের নায়ক ছিল। এবার টি-টোয়েন্টির শিরোপাও উঠল তার হাতে। এমন অর্জন কিন্তু বিরল।
স্টোকস ইতিহাসের সেরাদের কাতারে থাকবে। ইংল্যান্ডও ইতিহাসে জায়গা করে নেবে এই সময়ে সাদা বলের ক্রিকেটের সেরা দল হিসেবে।