‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের আর নিচে নামার জায়গা নেই’
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে খেলছে—এমন কিছু নাকি জীবনে কল্পনাও করেননি কার্ল হুপার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক এই ক্রিকেটার এ কথা বলেছিলেন এবারের বাছাইপর্ব শুরুর সময়। হুপার হয়তো কল্পনাও করেননি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবার বিশ্বকাপই খেলতে পারবে না এবং বাছাইপর্বে জিম্বাবুয়ে, নেদারল্যান্ডস আর স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাস ও ঐতিহ্যকেই প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেবে।
প্রথম দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপে দোর্দণ্ডপ্রতাপে শিরোপা জিতেছিল ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হ্যাটট্রিকটাও হয়ে যেত, যদি না ১৯৮৩ সালে তৃতীয় বিশ্বকাপের ফাইনালে কপিল দেবের ভারতের বিপক্ষে সেই ‘অঘটন’টা না ঘটত। সত্তর-আশির দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল মানেই বিশ্বসেরা ক্রিকেটারদের সমাবেশ! কী সব নাম—ক্লাইভ লয়েড, অ্যান্ডি রবার্টস, মাইকেল হোল্ডিং, জোয়েল গার্নার, ভিভ রিচার্ডস, জেফরি ডুজন, ডেসমন্ড হেইন্স, গর্ডন গ্রিনিজ, আলভিন কালিচরন—তালিকাটা বেশ বড়ই। এরপরও তারকার অভাব ছিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে। ব্রায়ান লারা, কার্টলি অ্যামব্রোস, কোর্টনি ওয়ালশ, প্যাট্রিক প্যাটারসন, কার্ল হুপার, শিবনারায়ণ চন্দরপাল। তবে এটা ঠিক, সত্তর কিংবা আশির দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই প্রতাপ পরবর্তীকালে কমেছে। কিন্তু এই দলকে ছাড়া কখনো বিশ্বকাপ হবে—এমনটা কে ভেবেছে!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক কোচ গর্ডন গ্রিনিজও ভাবেননি। গ্রিনিজ কিছুটা অভিমানের সুরেই এনডিটিভিকে বলেছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের হার একসময় তাঁকে কষ্ট দিত, কিন্তু এখন আর কষ্ট পান না, ‘আসলে আমি ইদানীং ক্রিকেট খুব একটা দেখি না। বিশেষ করে সাদা বলের ক্রিকেট। আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হার আমায় কষ্ট দিত। কিন্তু এখন আর সেভাবে এটি আমাকে পোড়ায় না। এর মূল কারণ, বেশ অনেক দিন ধরেই আমাদের ক্রিকেটের মান নিচের দিকে নামছে।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ছাড়া বিশ্বকাপ কল্পনা করতে পারছেন না গ্রিনিজও, ‘অবশ্যই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া বিশ্বকাপ আমি ভাবতেও পারছি না। আমাদের আসলে আর নিচে নামার জায়গা বাকি নেই এখন।’
ক্যারিবীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তিরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের এই অধঃপতনের কারণ অনুসন্ধানে নেমেছেন। সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাস্ট বোলার ইয়ান বিশপ যেমন বলেছেন, সময়ের সঙ্গে নিজেদের বদলাতে না পারার কারণেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের এই দুর্দশা। তিনি ক্যারিবীয় ক্রিকেটের এই পতনকে অনেকটাই বড় ও নামী ব্র্যান্ড কিংবা করপোরেট হাউসের বাণিজ্যিক পতনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আরেক কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার জোয়েল গার্নার মনে করেন, যে অনুপ্রেরণা নিয়ে তাঁরা সত্তর ও আশির দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতেন, সেই অনুপ্রেরণার জায়গাটা এখনকার তরুণ একজন ক্যারিবীয় ক্রিকেটারের সামনে নেই বলেই এই পতন।