প্রথম মাসে কী করলেন বিসিবি সভাপতি ফারুক

২১ আগস্টের দিন কয়েক আগেও তিনি নিশ্চিত জানতেন না, কত বড় দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। দায়িত্বটা নিয়ে ফেলার পর অবশ্য আর পেছন ফিরে তাকানোর সুযোগ ছিল না, এখনো নেই। আজ ২১ সেপ্টেম্বর বিসিবি সভাপতি হিসেবে ফারুক আহমেদের এক মাস পূর্ণ হলো। এই এক মাসে একটা পুরোনো বিষয় ফারুক জেনেছেন নতুন করে—সময়ের চেয়ে দ্রুত আর কিছুই ছোটে না।

গত এক মাসে ফারুক বিসিবিতে যত সময় দিয়েছেন, এর আগে কোনো বোর্ড সভাপতিই তা দেননি। নিয়ম করে প্রায় প্রতিদিন অফিস করছেন বোর্ড কার্যালয়ে। অবশ্য পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজের কাজের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করতেই ফারুককে এটা করতে হচ্ছে। তা কেমন কাটল বিসিবি সভাপতি হিসেবে তাঁর প্রথম একমাস? এমন প্রশ্নে ফারুক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক মাস খুবই নগন্য সময়, বিশেষ করে এ রকম একটা দায়িত্বে। অনেক কিছুই করার আছে। তবে আমাকে কাজ করতে হচ্ছে ক্রিকেটের নিয়মিত সূচি ও কাজগুলো ঠিক রেখে।’

ফারুক যখন বোর্ড সভাপতির দায়িত্ব নেন, বাংলাদেশ দল ছিল পাকিস্তান সফরে। এই এক মাসের মধ্যেই দল দেশে ফিরে ভারতেও চলে গেছে। ছেলে ও মেয়েদের ‘এ’ দলের সফর ছিল। মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশে হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে টুর্নামেন্টটি সরে যাওয়া, পাকিস্তান সফরে থাকা অবস্থায়ই সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে হওয়া হত্যা মামলার ব্যাপারে বোর্ডের অবস্থান ঠিক করা, দুবাইয়ে আইসিসি কার্যালয়ে গিয়ে পরিচয়পর্ব সারা, কুয়ালালামপুরে এসিসির সভায় যোগ দেওয়া, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিপিএল নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর করা, ক্লাব ক্রিকেট ঠিকভাবে আয়োজন নিশ্চিত করা—এত কিছুর সমান্তরালে ফারুককে এগিয়ে নিতে হচ্ছে বিসিবি পুনর্গঠন ও আর্থিক সংস্কারের কাজও।

আইসিসির নিয়মের মধ্যে থেকে ফারুকের মতো একজনকে বোর্ড সভাপতি করার মূল উদ্দেশ্যও ছিল দেশের ক্রিকেটের সংস্কার। তবে সভাপতির তো নিয়মিত কাজগুলোও এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। ফারুক বলছিলেন, ‘এই এক মাসে অনেক কিছুতেই হাত দেওয়া যেত, কিছু বিষয়ে হাত দিয়েছিও। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিয়মিত বিষয়গুলো ঠিক রেখে অন্য কাজগুলো করা। এমন যদি হতো, সব বাদ দিয়ে ছয় মাস শুধু সংস্কারের কাজ করলাম, সেটা একটা কথা ছিল। তা তো সম্ভব নয়।’

গত এক মাসে কোন বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়েছেন, তা জানতে চাইলে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল ক্রিকেটের মূল বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করব। যেমন মাঠ, কিউরেটর, ক্রিকেটার, কোচ, আম্পায়ার—এসব জায়গায় উন্নতি আনতে শুরু করা। কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু অন্য অনেক কাজও সামনে চলে এসেছে।’

বোর্ড সভাপতি হিসেবে আপাতত বিসিবির আর্থিক বিষয়ে শৃঙ্খলা আনার কাজেই বেশি সময় দিতে হচ্ছে ফারুককে। তিনি বলছিলেন, ‘অন্যান্য কিছু খাতে খরচ কমিয়ে এবং দুর্নীতি বন্ধ করে খেলাটার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত বিষয়গুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ কীভাবে বাড়ানো যায়, সেই চেষ্টা করছি।’ তবে আর্থিক অনিয়ম অনুসন্ধানের কাজে সভাপতি এগোতে চান বুঝেশুনে, ‘কিছু দুর্নীতি তো আছেই। কাজ করতে করতেই বিষয়গুলো আরও পরিষ্কার হবে।’ ফারুক চান এমন একটি উদাহরণ সৃষ্টি করে যেতে, যাতে ভবিষ্যতে যারা বোর্ডে আসবেন তারা আর্থিক বিষয়ে স্বচ্ছ থাকতে বাধ্য হন।

দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে ফারুক বলেছিলেন, সেরা চারটি অডিট ফার্মের মধ্য থেকে একটিকে বেছে নিয়ে স্বাধীনভাবে বিসিবির আর্থিক কর্মকাণ্ডের অডিট করা হবে। সে প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে গেছে। বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এরই মধ্যে বোর্ড সভাপতির দুজন উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাঁদের একজন পেশায় হিসাব নিরীক্ষক ও আরেকজন আইনজীবী। সামনে অন্যান্য পেশার আরও তিন বিশেষজ্ঞকে সভাপতির উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।

বিপিএল ও ক্লাব ক্রিকেট স্থানীয় খেলোয়াড়দের আয়ের মূল উৎস। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই দুই জায়গাতেই অর্থ খরচ করায় কিছুটা অনাগ্রহ আছে ফ্র্যাঞ্চাইজি ও ক্লাবগুলোর। তবে গত এক মাসে ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে অনিশ্চয়তা অনেকটাই দূর করতে পেরেছেন ফারুক। পুরোনো চারটি ফ্র্যাঞ্চাইজি বিপিএলে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। নতুন তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজির আসাও মোটামুটি নিশ্চিত। নতুন সভাপতি ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন ক্লাব ক্রিকেট নিয়েও।

ফারুক সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই কৌতূহল—জাতীয় দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত থেকে মেয়াদ শেষ করে যেতে পারবেন কি না? প্রধান নির্বাচক থাকার সময় ফারুকের সঙ্গে কোচের তিক্ত ইতিহাসই বিষয়টি সামনে এনেছে। যদিও দলকে সমস্যায় ফেলে এ ব্যাপারে তড়িঘড়ি কিছু করার পক্ষে নন ফারুক। তার প্রমাণ, পাকিস্তান সফর শেষ করে হাথুরুসিংহে বর্তমানে দলের সঙ্গে ভারত সফরেও আছেন। তবে ভারত সিরিজের পরও তিনি কোচ থাকতে পারবেন কি না, সেটি নির্ভর করছে ভালো বিকল্প পাওয়ার ওপর।

সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে ফারুক অকপটে জানিয়েছিলেন, হাথুরুসিংহের ব্যাপারে তাঁর ব্যক্তিগত অবস্থান বদলায়নি। এরপর এই এক মাসেও যে সে অবস্থানে এতটুকু পরিবর্তন আসেনি, তা বোঝা যায় একটি তথ্যেই। বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত কথা বলার সুযোগ পাননি হাথুরুসিংহে। না সামনাসামনি, না ফোনে।

চন্ডিকা হাথুরুসিংহের জন্য এটাই হতে পারে ফারুক আহমেদের ‘রেড এলার্ট’।