জ্যামাইকা থেকে মিরাজদের শুভ সকাল
স্যাবাইনা পার্কের ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে দেওয়া হলো আগেভাগেই। কিংস্টনের আকাশে সূর্য তখন হেলে পড়ার অপেক্ষায়। জ্যামাইকার এমন শেষ বিকেলেই হাজার মাইল দূরের বাংলাদেশের জন্য আনন্দময় ভোর এনে দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজরা।
কিংস্টনে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৮৫ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ জিতল ১০১ রানে। যে জয়ে দুই টেস্টের সিরিজে ১-১ সমতা তো হলোই, সেই সঙ্গে ঘুচল ১৫ বছর আর ৭ টেস্ট পর আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট জয়ের দীর্ঘ অপেক্ষাও।
আর যদি ঘরে-বাইরের সব ম্যাচ বিবেচনায় নেওয়া হয়, তাও ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে জয় এল ৬ বছর পর। সর্বশেষ ২০১৮ সালে দেশের মাটিতে দুই টেস্টেই জিতেছিল বাংলাদেশ।
অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টে ২০১ রানে হেরে যাওয়া বাংলাদেশ যে দ্বিতীয় টেস্টে জিতে যেতে পারে, সেটি অনেকটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল ম্যাচের তৃতীয় দিনেই। প্রথম ইনিংসে পাওয়া ১৮ রানের লিডকে সঙ্গী করে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেটে ১৯৩ রান তুলে দিন শেষে এগিয়ে গিয়েছিল ২১১ রানে।
আজ ম্যাচের চতুর্থ দিনের সকালে এই লিডটাই পৌঁছে যায় ২৮৬ রানে, যেখানে বড় অবদান জাকের আলীর। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৯১ রান করে জাকেরই বোলারদের দিয়ে যান ক্যারিবীয়দের চেপে ধরার ভালো পুঁজি। আর সেটিই দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম, সঙ্গ দিয়েছেন তিন পেসার তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদ।
শুরুটা অবশ্য তাইজুলই করেছেন। ২৮৬ রান তাড়া করতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ লাঞ্চের আগে কয়েক ওভারের জন্য ব্যাট করতে নামলে তাইজুল ওপেনার মিকাইল লুইসকে তুলে নেন শর্ট লেগে শাহাদাতের ক্যাচ বানিয়ে।
১ উইকেটে ২৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় সেশন শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম ধাক্কা দেন তাসকিন, কিসি কার্টিকে ফেরান লিটনের ক্যাচ বানিয়ে। এরপর স্বাগতিকদের ইনিংসের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার কাজটা প্রায় একাই করেন তাইজুল। পানি পানের বিরতির পর নিজের টানা দুই ওভারের মধ্যে ফেরান ক্রেইগ ব্রাফেট ও অ্যালিক অ্যাথানাজকে।
এরপর চা বিরতি থেকে ফিরে তাইজুল তাঁর তৃতীয় শিকার করে ফেরান কাভেম হজকে। রান তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেটুকু আশার আলো দেখছিল, তা এই হজের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ফিফটি তুলে ফেলা হজ ফেরেন তাইজুলের বলে এলবিডব্লু হয়ে (৭৫ বলে ৫৫)।
১৪৩ রানে পঞ্চম উইকেট হারানোর পরের ৪২ রানের মধ্যে বাকি ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর মধ্যে তাসকিন আগের টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান জাস্টিন গ্রিভসকে ফেরানোর পর তাইজুল জশুয়া ডি সিলভাকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে ইনিংসে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন। হাসান মাহমুদ একই ওভারে আলজারি জোসেফ ও কেমার রোচকে আউট করার পরের ওভারে শামার জোসেফকে বোল্ড করে ম্যাচের ইতি টানেন নাহিদ রানা।
২০০৯ সালের সফরে গ্রেনাডা টেস্টের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে এটি বাংলাদেশের প্রথম জয়। সেবার ভাঙা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুই টেস্টের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ।
কিংস্টনের এই ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশ দলের জন্য ২০২৪ সালের শেষ টেস্ট। জয় দিয়ে বছর শেষ করার মাধ্যমে নিজেদের পুরোনো এক কীর্তিও ছুঁয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৩ সালের পর আবার এক বছরে চারটি টেস্ট জিতল বাংলাদেশ। এ বছরের আগের তিন জয় ছিল পাকিস্তান (দুটি) ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
দুই ইনিংস মিলিয়ে ৬ উইকেট আর ব্যাট হাতে প্রতিরোধের কারণে ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন তাইজুল। যৌথভাবে সিরিজ-সেরা হয়েছেন দুই দলের দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও জেইডেন সিলস্। দুই টেস্টে তাসকিন নিয়েছেন ১১ উইকেট। অনেকটা ছাড়িয়ে যা তাঁর সেরা টেস্ট সিরিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ১৬৪ ও ২৬৮ (জাকের ৯১, সাদমান ৪৬, মিরাজ ৪২, শাহাদাত ২৮; রোচ ৩/৩৬, আলজারি ৩/৭৭)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৪৬ ও ১৮৫ (হজ ৫৫, ব্রাফেট ৪৩; তাইজুল ৫/৫০, হাসান ২/২০, তাসকিন ২/৪৫)। ফল: বাংলাদেশ ১০১ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তাইজুল ইসলাম। সিরিজ: দুই ম্যাচ সিরিজ ১-১ সমতা। প্লেয়ার্স অব দ্য সিরিজ: তাসকিন আহমেদ ও জেইডেন সিলস।