বাংলাদেশের হারে আগেভাগেই বিদায় নিতে হলো ওয়ার্নারকে

অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে আর দেখা যাবে না ৩৭ বছর বয়সী ওয়ার্নারকেইনস্টাগ্রাম

সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় হয়ে গেছে আন্দ্রে রাসেলেরও। কিন্তু সেটি তো মাঠের লড়াইয়ে হেরে। ডেভিড ওয়ার্নার সে সুযোগও পেলেন না। তাঁর ভাগ্য ঠিক করে দিল অন্য দল। অস্ট্রেলিয়ান একজন ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ার্নারের এ কষ্টের সান্ত্বনা হয় না।

আরও পড়ুন

সেন্ট ভিনসেন্টে গত সোমবার সুপার এইটে ভারতের বিপক্ষে আউট হয়ে নত মস্তকে ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন ওয়ার্নার। তখনো জানতেন না, অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে এটাই হবে তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। হারের পর শঙ্কাটা যখন জাগল, অস্ট্রেলিয়ানদের চিরকালীন হার না মানা মানসিকতায় সারথি ওয়ার্নার তখনো নিশ্চয়ই সেমিফাইনালে ওঠার আশায় বুক বেঁধেছিলেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই জিতবে, সেটাও অস্ট্রেলিয়ার শর্তপূরণ করে!

ভারতের বিপক্ষে ইনিংসটাই হয়ে গেল ওয়ার্নারের শেষ আন্তর্জাতিক ইনিংস
এএফপি

কিন্তু বাংলাদেশ নিজেদেরটাও যেমন পারেনি, তেমনি হেরে নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়ার বিদায়ও। এ বিদায়ে ওয়ার্নারকেও তুলে রাখতে হলো অস্ট্রেলিয়ার জার্সি। পেছনে পড়ে রইল ১৫ বছরের স্মৃতিগাঁথা, বীরত্ব, বিতর্ক থেকে হিরণ্ময় সব সংখ্যা। তার একটি—আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন সংস্করণে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। শীর্ষে যিনি, সেই রিকি পন্টিং পর্যন্ত বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের তিন সংস্করণে ডেভিড ওয়ার্নারের চেয়ে বেশি প্রভাব রাখা কাউকে খুঁজে পেতে কষ্ট হবে।’

আরও পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসেই অন্যতম সেরা অধিনায়ক পন্টিংয়ের ক্রিকেটজ্ঞানের তুলনা হয় না। পরশু ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার হারের পরই কিংবদন্তি সম্ভবত বুঝতে পেরেছিলেন, এটাই ওয়ার্নারের শেষ! অন্যের হাতে ভাগ্য ছেড়ে দেওয়ার অভ্যাস যে অস্ট্রেলিয়ানদের নেই। ওয়ার্নার তখনো খেলোয়াড়, তাই হয়তো মনকে আশার পালে জিইয়ে রেখেছিলেন। পন্টিং সে পাল নামাতে না বললেও ওয়ার্নারকে মাঠের এক কোণে টেনে নিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলেছিলেন, ‘হাতটা তার কাঁধে রেখে বলেছি, আজ রাতে (পরশু) একটু নিজের মতো করে বসে ভেবো, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিন সংস্করণে (তোমার) ক্যারিয়ার কী অবিশ্বাস্য।’

ওয়ানডে ছাড়লেন গত নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপ জিতে। দুই মাস পর গত জানুয়ারিতে ছাড়লেন টেস্টও। পরের মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজে বলে দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি ছাড়ার সময়ও—এবারের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। অস্ট্রেলিয়ান বলেই স্বাভাবিকভাবে প্রত্যাশিত সে সময়টা হওয়ার কথা ছিল ফাইনাল। কিন্তু হাতে নাটাই থাকলেই কি ঘুড়িকে সব সময় নিয়ন্ত্রণ করা যায়? ভাগ্যের ফেরে কখনো কখনো তা কাটা পড়ে সময়ের আগে।

আরও পড়ুন

তবু সাদা ও রঙিন ‘ঘুড়ি’গুলোর পিঠে হিরণ্ময় সেসব অর্জন থেকেই যায়। ওয়ানডে সংস্করণে দুটি বিশ্বকাপ জিতেছেন। জিতেছেন টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। (২০২১–২৩) আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পথে হন টুর্নামেন্ট–সেরা। এবার টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে ম্যাচে অ্যারন ফিঞ্চকে পেছনে ফেলে এ সংস্করণে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটিও নিজের করে নেন। ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে রানে ষষ্ঠ। টেস্টে এক ধাপ ওপরে। আরও অযুত সব ছোটখাটো রেকর্ড ও কীর্তিগাথা তো আছেই।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পাশাপাশি টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপও জিতেছেন ওয়ার্নার
ইনস্টাগ্রাম

তবে ‘স্যান্ডপেপার কেলেঙ্কারি’ ও সংখ্যা ছাপিয়ে লোকে সম্ভবত বেশি করে মনে রাখবেন সেই ওয়ার্নারকে—৫ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার গাট্টাগোট্টা শরীরটাই ভাষা পাল্টে ফেলে ক্রিকেট মাঠে। মনে হয়, গাট্টাগোট্টা শরীরে কোনো মুষ্টিযোদ্ধা অহর্নিশ প্রতিপক্ষকে পাঞ্চ করছেন। কেউ কেউ বাইবেলের ডেভিডকেও স্মরণ করতে পারেন। কিন্তু ব্যাট হাতে ওয়ার্নার তো আসলে ওই ছোট্ট শরীর ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা এক গোলিয়াথ—দৈত্য!

ওয়ার্নারকে বিদায়ী সম্ভাষণ জানাত গিয়ে অস্ট্রেলিয়ান পেসার জশ হ্যাজলউড বলেছেন, ‘এটা (ক্যারিয়ার) অবিশ্বাস্য। আমরা অবশ্যই তাকে মিস করব, মাঠ ও মাঠের বাইরেও। তিন সংস্করণেই অসাধারণ ক্যারিয়ার।’

শুধু বিদায়টাই অসাধারণ হলো না।