যুক্তিসংগত কারণেই বাংলাদেশের ভালো করার সম্ভাবনা দেখছি
বাংলাদেশ দল ভালো করবে—এই কথাটা আমরা যেকোনো বড় টুর্নামেন্টের আগেই বলি। কিন্তু সব সময় এর পেছনে শক্তিশালী যুক্তি থাকে না। দলকে ঘিরে আবেগ থেকেই হয়তো বলি। তবে এবারের এশিয়া কাপে যুক্তিসংগত কারণেই বাংলাদেশের ভালো করার একটা সম্ভাবনা দেখছি। এখন পর্যন্ত আমরা যত বড় টুর্নামেন্ট খেলেছি, সেখানে মাঝেমধ্যে ভালো খেলেছি। কিন্তু সত্যিই কোনো কিছু করার সেই দৃঢ়বিশ্বাস নিয়ে কখনো খেলতে যাইনি। এই বিশ্বাসটা বোধ হয় এই প্রথমই খুব শক্ত মনে হচ্ছে।
খেলার ধরনের পরিবর্তনটা প্রথম কারণ। এত দিন আমাদের খেলার মধ্যে যে রক্ষণাত্মক মানসিকতা ছিল, সেটা এখন অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে। আগে আমরা যতটা না খেলে জিততে চাইতাম, তার চেয়ে বেশি প্রতিপক্ষের ভুলের অপেক্ষায় থাকতাম। আমরা সেটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে জেতার চেষ্টা করতাম। নিজেরা যে কখনো ভালো খেলিনি, তা বলছি না। কিন্তু আমাদের ওই আত্মবিশ্বাসটা ছিল না। যে কারণে আমরা সব সময় নিজেদের দিনে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দেওয়ার কথা বলতাম। আমাদের দলের ভিত্তি ছিল এটাই। কিন্তু সেখান থেকে আমরা সরে এসেছি।
ওয়ানডেতে ভারত, ইংল্যান্ড বা আরও দু-একটা দল আমাদের চেয়ে শক্তিশালী, তা স্বীকার করি। কিন্তু মনের ভেতর এই বিশ্বাসটা আছে যে আমরা যদি নিজেদের মতো খেলতে পারি, তাহলে যেকোনো সময় যেকোনো দলকে হারিয়ে দিতে পারি। ওই একটা নির্দিষ্ট দিনে নয়, যেকোনো সময়। ব্যাটিং বা বোলিং—দুই দিকেই আমাদের এই সামর্থ্য আছে। এটা একটা বিরাট উত্তরণ। সর্বশেষ কয়েকটি সিরিজের খেলার ধরন দেখলেই এটি বোঝা যায়। বিপক্ষ দলকে সমীহ করার যে ব্যাপারটা ছিল, সেটা থেকে কিছু কিছু খেলোয়াড়কে বেরিয়ে আসতে দেখেছি। এই ব্যাপারগুলো অন্যদের মধ্যেও ছড়াচ্ছে।
দীর্ঘ সময় ধরে সাকিব আল হাসান এবং হয়তো আরও দু–একজনের মধ্যেই এই মানসিকতা দেখেছি। তবে নতুন কিছু খেলোয়াড়ের মধ্যেও তা দেখছি। তারা ড্রেসিংরুমে যে আবহ ছিল, সেটাতেও পরিবর্তন এনেছে। এখন পুরো দলকে ঘিরেই একটা বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়েছে এবং সেটা দিন দিন আরও দৃঢ় হচ্ছে। এ কারণেই বলছি, বাংলাদেশ এখন এমন একটা দল, যারা যেকোনো সময় যেকোনো দলকে হারিয়ে দিতে পারে। এ কারণেই নতুন অধিনায়কের পক্ষে ইতিবাচকভাবে দল পরিচালনা করা সহজ হবে।
পাশাপাশি এটাও বলব, আমাদের প্রস্তুতি আরও ভালো হতে পারত। তামিম ইকবালের হঠাৎ করে সরে যাওয়া, চোটের কারণে দলে না থাকতে পারার ঘটনাগুলোয় আমরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। রিয়াদকে দলে না রাখা, সাকিবকে অধিনায়ক করা…এসব নিয়ে অনেক আলোচনা বা সমালোচনা হয়েছে। নির্বাচকেরা তাঁদের বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক করার জন্য অধিনায়ক ও কোচকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এই সবকিছু মিলিয়ে দলের মধ্যে যে আবহ তৈরি হয়েছে, তাতে খেলোয়াড়দের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং বিশ্বাসের জায়গাটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বৃষ্টির কারণে ক্রিকেটারদের অনুশীলনে যে ক্ষতিটা হয়েছে, সেটার চেয়ে বড় ক্ষতি মনে হয় এটাই। কিছু ঘটনা সামনে নিয়ে আসায় দলের এক হয়ে খেলার যে শক্তিটা ছিল, তা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটা দলের সবাই সবাইকে যখন সম্মান করবে, দলে নিঃশর্ত বিশ্বাসের সংস্কৃতি তৈরি হবে, একে অন্যের জন্য চূড়ান্ত ছাড় দিতে প্রস্তুত থাকবে, কেবল তখনই একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে নিজের সর্বোচ্চ দেওয়া সম্ভব হয়। এমন একটা ড্রেসিংরুম তৈরি করা সহজ নয়। আমরা কোচ কিংবা অধিনায়ককে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিলাম, কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটারকেও তার সঙ্গে জড়িয়ে নিলাম। এসব শেষ পর্যন্ত দলের পরিবেশটাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অথচ আমাদের টিম ওয়ার্কটাই হয়তো বড় শক্তি হতে পারত।
এ ছাড়া আফগানিস্তানকে টি-টোয়েন্টিতে হারানো আমাদের জন্য আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর বড় উপলক্ষ ছিল। কারণ, টি-টোয়েন্টিতে ওদের আমরা কিছুটা এগিয়েই রাখি। কিছু কিছু ক্রিকেটার এবার ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলতে গেল। সেটা নিশ্চয়ই ওদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। ওরা নিশ্চয়ই দেশের বাইরে খেলতে গিয়ে নিজের সম্পর্কে, নিজের খেলা সম্পর্কে আরও অনেকটাই জেনেছে। এটাও কিন্তু প্রস্তুতির একটা ইতিবাচক দিক হিসেবে কাজ করবে।
এবারের এশিয়া কাপটা বিশ্বকাপের একটা মহড়া হতে পারে। এখানে ভালো করতে পারলে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপে আত্মবিশ্বাসী হয়ে যাবে।