বেয়ারস্টোর বিতর্কিত আউটে অস্ট্রেলিয়ানদের পক্ষে অশ্বিন
জনি বেয়ারস্টোর স্টাম্পিং আউটকে সঠিকই মনে করেন বেন স্টোকস। তবে অস্ট্রেলিয়ার জায়গায় থাকলে এমন আউট করতেন না বলেও মন্তব্য ইংল্যান্ড অধিনায়কের। করতেন না; কারণ, এভাবে আউট করাটা ক্রিকেটের ‘চেতনার পরিপন্থী’। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক স্পিনার ব্র্যাড হগও স্টোকসের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছেন। বেয়ারস্টোকে অস্ট্রেলিয়ার উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারির করা স্টাম্পিংকে ক্রিকেটীয় চেতনার পরিপন্থী বলেছেন তিনি।
তবে ক্রিকেটের চেতনা বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যাঁর নাম ব্যাপকভাবে আলোচিত, সেই রবিচন্দ্রন অশ্বিন অস্ট্রেলিয়ার পক্ষেই দাঁড়িয়েছেন। বেয়ারস্টোর আউটে কোনো সমস্যা দেখছেন না ভারতীয় অফ স্পিনার। আর ভারতীয় ধারাভাষ্যকার আকাশ চোপড়ার মতে, যে আউট ক্রিকেটের আইন অনুযায়ী বৈধ, সেখানে ‘স্পিরিট’ খোঁজা যৌক্তিক কাজ নয়।
ক্রিকেট বিশ্বে ‘স্পিরিট অব গেম’ আবারও আলোচনায় আসার কারণ লর্ডস টেস্টের শেষ দিনে বেয়ারস্টোর স্টাম্পিং আউট। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ৫২তম ওভারের শেষ বলটি ছিল বাউন্সার, যা মাথা নিচু করে ছেড়ে দেন বেয়ারস্টো। বল ছেড়ে দেওয়ার পরপরই পপিং ক্রিজ ছেড়ে তিনি বেরিয়ে যান। এ দিকে বল হাতে নিয়ে স্টাম্প ভেঙে দেন অস্ট্রেলিয়ার উইকেটকিপার ক্যারি।
বেয়ারস্টো রান নেওয়ার জন্য ক্রিজ ছাড়েননি, ওভার শেষ ভেবে অপর প্রান্তে থাকা স্টোকসের সঙ্গে কথা বলতে বাইরে বেরিয়েছেন। এ দিকে ক্যারি বল হাতে জমিয়েও রাখেননি, ধরেই দূর থেকে বল ছুড়ে স্টাম্প ভাঙেন। এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য তৃতীয় আম্পায়ারের দ্বারস্থ হন মাঠের আম্পায়াররা। তৃতীয় আম্পায়ার জানান বেয়ারস্টা আউট হয়েছেন।
আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত সঠিক হলেও এভাবে আউটের চেষ্টাটা ভালোভাবে নেয়নি ইংল্যান্ড। স্টুয়ার্ট ব্রড ব্যাটিং করতে এসেই ক্যারিকে খোঁচা মেরে বলেন, ‘এসবের জন্যই তোমাদের সবাই চিরদিন মনে রাখবে।’ এর ঘণ্টা দু-এক পর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এক বিবৃতিতে জানায়, মধ্যাহ্নবিরতির সময় এমসিসি মেম্বার্স এরিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের গালিগালাজ ও ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় এমসিসির কাছে তদন্তের অনুরোধ জানায় তারা।
বেয়ারস্টোর আউটের ঘটনা ম্যাচের পর আরও বেশি আলোচনায় আসে। স্টোকস বলেন, বেয়ারস্টো ক্রিজের ভেতরেই ছিলেন, ওভার শেষ হয়েছে বলে বের হয়েছেন। আর অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স বলেছেন, আউটের আগেও বেয়ারস্টো একাধিকবার ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।
তবে সাবেক অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার ব্রাড হগ মনে করেন বেয়ারস্টোকে এভাবে আউট করা উচিত হয়নি, এমনকি আউটও হয়নি বলে দাবি তাঁর, ‘বেয়ারস্টোর উইকেট, নক আউট। এখানে ক্রিকেটের চেতনাকে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। সে রানের চেষ্টা করেনি, ওভারও শেষ হয়ে গেছে, ক্রিজে ব্যাট ঠুকে স্টোকসের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিল।’
এক অস্ট্রেলিয়ান কামিন্সদের পক্ষে না থাকলেও অশ্বিনের সমর্থন পাচ্ছেন তাঁরা। আইপিএলে জস বাটলারকে মানকাডিং (ক্রিকেট আইনে রান আউট) করে প্রবলভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন অশ্বিন। বল ডেলিভারির আগে নন স্ট্রাইকার ব্যাটসম্যান ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে গেলে রানআউট করা বৈধ হলেও ‘ক্রিকেটীয় চেতনা’এর পরিপন্থী বলে সরব হয়েছিলেন অনেকে।
এবার বেয়ারস্টোর স্টাম্পিংয়ে আবারও একই বিষয় সামনে আসায় নিজের মতো জানিয়েছেন অশ্বিন। লর্ডস টেস্টের পর তিনি টুইট করে লেখেন, ‘আমাদের অবশ্যই একটি সত্য পরিষ্কার করে বলতে হবে। টেস্ট ক্রিকেটে একজন উইকেটকিপার কখনোই এত দূর থেকে স্টাম্পকে তাক করতে পারবে না, যদি না সে দেখে ব্যাটসম্যান বারবার ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, যেটা বেয়ারস্টো করেছে। আমাদের খেলার অন্যায্য দিক বা চেতনার দিকে ঝোঁকানোর বদলে অবশ্যই ব্যক্তির স্মার্টনেসের প্রশংসা করতে হবে।’
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার আকাশ চোপড়ার টুইটও অশ্বিনেরই অনুরূপ, ‘আবারও বলতে হচ্ছে, ক্রিকেটের আইনে যা কিছুই আছে, তা খেলার স্পিরিটের বিপরীত হওয়া সম্ভব নয়।’