১৩ বছর বয়সেই ভারতের অনূর্ধ্ব–১৯ দলে, এরপর ৫৮ বলে সেঞ্চুরি বৈভব সূর্যবংশীর
চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে চলছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের যুব টেস্ট। সেই ম্যাচে ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলছেন ১৩ বছর বয়সী এক ক্রিকেটার। বৈভব সূর্যবংশীর সংবাদ শিরোনাম হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু বৈভব ক্রিকেট দুনিয়ায় আলোড়ন তুললেন দারুণ এক সেঞ্চুরি করেই। আর সেই সেঞ্চুরিটাও মাত্র ৫৮ বলে করেছেন, যুব টেস্টের ইতিহাসে যা দ্বিতীয় দ্রুততম। দ্রুততম সেঞ্চুরিটা মঈন আলীর, ২০০৫ সালে ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ৫৬ বলে ১০০ করেছিলেন এই অলরাউন্ডার।
তাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরির রেকর্ডও গড়েছে বৈভব, ভেঙেছে বাংলাদেশের নাজমুল হোসেন শান্তর রেকর্ড। ২০১৩ সালে এক যুব ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৪ বছর ২৪১ দিন বয়সে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৯ দলে খেলা নাজমুল।
বিস্ময়বালক বৈভব সেঞ্চুরিটা পেয়েছেন গতকাল ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রথম ইনিংসে। বিহান মালহোত্রাকে নিয়ে উদ্বোধনী জুটিতে ১৩৩ রান যোগ করে বৈভব। জুটিতে বিহান আক্ষরিক অর্থেই দর্শক হয়ে খুব কাছ থেকে দেখেছেন বৈভব-ঝড়। জুটির ১০৪ রানই যে বৈভবের। এই বাঁহাতি ১৪ চার ও ৪ ছক্কায় ৬২ বলে করেছে ১০৪ রান। বৈভবের এমন ঝোড়ো সূচনার পরও ২৯৬ রানে অলআউট হয় ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দল। তাতেই অবশ্য ৩ রানের লিড পেয়ে যায় ভারতীয়রা। অস্ট্রেলিয়ার যুবারা কাল দ্বিতীয় দিনটা শেষ করে ৪ উইকেটে ১১০ রান তুলে।
বৈভবকে নিয়ে আলোচনা অবশ্য অনেক দিন ধরেই চলছিল ভারতীয় ক্রিকেটে। গত জানুয়ারিতে রঞ্জি ট্রফিতে বিহারের হয়ে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে ম্যাচে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক তার। সে সময় বিহার ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন জানায়, বৈভবের অফিশিয়াল বয়স ১২ বছর ২৮৪ দিন। ১৯৮৬ সালের পর বৈভবের চেয়ে কম বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেনি অন্য কেউ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার চেয়ে কম বয়সে অভিষেক হয়েছে ৬ জনের।
বিহারের ছেলে বৈভব স্থানীয় বিভিন্ন টুর্নামেন্টে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেই প্রথম আলোচনায় আসে। বিহারের আন্তজেলা টুর্নামেন্ট হেমান ট্রফিতে ৮ ম্যাচে ৮০০ রানের বেশি করে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবার ওপরে জায়গা পেয়ে যায় বৈভব। এরপর ভিনু মানকাড় ট্রফিতে পাঁচ ম্যাচে করে ৪০০ রান। এরপর অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যালেঞ্জার্স ট্রফির খেলার পর বিহারের অনূর্ধ্ব-২৩ দলের ক্যাম্পে ডাক পায় বৈভব। এরপর বিহারের রঞ্জি দলে সুযোগ পেয়ে যায় সে।
বৈভব যে ক্রিকেট বলটাকে খুব জোরে পেটায়, সেটি প্রথম চোখে পড়ে তার বাবার। বৈভবের কৃষক বাবা জানিয়েছেন, চার বছর বয়সী বৈভবকে বয়সের তুলনায় অসম্ভব রকম জোরে প্লাস্টিক বল পেটাতে দেখেই ছেলেকে ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি।
শচীন টেন্ডুলকার ও পৃথ্বী শর মতো ভারতীয় তারকারাও খুব অল্প বয়সেই আলো কেড়েছিলেন। তবে তাঁদের কেউ নন, বৈভবের আদর্শ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারা। তার মতোই বাঁহাতি লারার ৪০০ রানের রেকর্ড ইনিংসের ভিডিও অসংখ্যবার দেখা হয়ে গেছে বৈভবের।