সাকিব-তামিম লড়াইয়ে তামিমদের জয়
শক্ত মাটি, সবুজ ঘাস-পিচ রিপোর্টে শ্রীলঙ্কার সাবেক ক্রিকেটার রাসেল আরনল্ড জোর দিলেন এই দুটি ব্যাপারে। ভালো ব্যাটিং করলে বড় রান হবে-এমন পূর্বাভাসও দিলেন। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ‘সাকিব-তামিম’ লড়াইয়ে তো এমন উইকেটই চাই!
কিন্তু রংপুর রাইডার্স ও ফরচুন বরিশালের ম্যাচে আগে ব্যাট করা রংপুরের নতুন বলে ২ উইকেট, পুরোনো বলে আরও ২টি উইকেট নিয়ে ম্যাচটাকে বড় রানের হতে দেননি বরিশালের খালেদ আহমেদ। টেস্টে বাংলাদেশ দলের এই নিয়মিত মুখের দুর্দান্ত বোলিংয়ে এবারের বিপিএলে বরিশালের শুরুটা হয় স্বপ্নের মতো। রংপুর রাইডার্সের মতো শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে মাত্র ৯ উইকেটে ১৩৪ রানেই থামিয়ে দেয় তামিম ইকবালের দল। সে রানটা ৫ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখেই টপকে যায় বরিশাল।
বুঝতেই পারছেন, ব্যাটিং–স্বর্গে এ রানটা মোটেও যথেষ্ট ছিল না। অধিনায়ক তামিম আফগান ওপেনার ইব্রাহিম জাদরানকে নিয়ে পাওয়ারপ্লেতেই ৫১ রান তুলে ফেললে কাজটা আরও সহজ হয়ে যায়। সাকিবের বলে ইব্রাহিম মারতে গিয়ে মিডউইকেটে মেহেদী হাসানের হাতে ১২ রানে ক্যাচ দিলেও তামিমের ব্যাট থেকে রান এসেছে বেশ দ্রুত। তাঁর ২৪ বলে ৩৫ রানের ইনিংসে ছিল ৫টি চার ও ১টি ছক্কা।
মোহাম্মদ নবীর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ হওয়ার আগে মনে হচ্ছিল ম্যাচটা বুঝি তামিম একাই শেষ করে আসবেন। সেটা না করতে পারলেও গত সেপ্টেম্বরের পর প্রতিযোগিতাপূর্ণ ক্রিকেটে ফেরার ম্যাচে তামিমের ব্যাটে রান বরিশালকে স্বস্তি দেবে।
তামিমের মতো থিতু হয়ে আউট হয়েছেন বরিশালের আরেক অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। সাকিবের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ২৭ বলে ২৬ রান করেছেন তিনি। ১৮ বলে ২০ রানে থেমেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে বরিশালের বড় কোনো ক্ষতি হতে দেননি শোয়েব মালিক ও মাহমুদউল্লাহ। দুজন মিলে ১৫ বলে ২৫ রান যোগ করেন।
মাহমুদউল্লাহ ১১ বলে ১৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। ১৮ বলে অপরাজিত ১৭ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন মালিক। রংপুরের দুই বাঁহাতি স্পিনার সাকিব ও মুরাদ ২টি করে উইকেট নিয়েছেন।
মিরপুরের আজকের উইকেটে বড় রান করার সুযোগ ছিল রংপুরের ব্যাটসম্যানদেরও। কিন্তু বরিশালের দুই পেসার খালেদ ও মোহাম্মদ ইমরানের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি রংপুরের টপ অর্ডার। শুরুটা হয় পাকিস্তানের তরুণ পেসার ইমরানের দুর্দান্ত ইন সুইং ইয়র্কারে। সেটাও ইনিংসের প্রথম বলে। স্ট্রাইকে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্র্যান্ডন কিং ব্যাট নামানোর আগেই বোল্ড। পরের ওভারে খালেদের বলে আউট আরেক ওপেনার রনি তালুকদার। ক্রিজ ছেড়ে খেলে পয়েন্টে ক্যাচ তোলেন তিনি (৫)। একই ওভারে দুর্দান্ত ইন সুইংয়ে সাকিব আল হাসানের স্টাম্প উড়িয়েছেন খালেদ।
ইনিংসের প্রথম ২ ওভার শেষেই ৩ উইকেট নেই রংপুরের। দুই ওভার পর আরও একবার ধাক্কা খায় রংপুর। এবার শ্রীলঙ্কান তরুণ দুনিত ভেল্লালাগের বাঁহাতি স্পিনে কাভারে ক্যাচ তোলেন আফগান আজমতউল্লাহ ওমরজাই (৬)। পাওয়ারপ্লেতে মাত্র ৩৬ রানে ৪ উইকেট হারানোর ক্ষতিটা আর পুষিয়ে নিতে পারেনি রংপুর।
মাঝের ওভারে অধিনায়ক নুরুল হাসান, শামীম হোসেন ও শেষের দিকে মেহেদী হাসান ছোট ছোট জুটি গড়ে কিছু রান যোগ করেছেন। নুরুল ২৩ বলে করেছেন ২৩ রান। শামীমের ব্যাট থেকে এসেছে রংপুর ইনিংসের সর্বোচ্চ ৩৩ বলে ৩৪ রান। শেষের দিকে মেহেদীর ১৯ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় করা ২৯ রান রংপুরের রানটাকে নিয়ে যায় ১৩০-এর ঘরে।
মেহেদী টিকে থাকলে রংপুরের আরও কিছু রান হতে পারত। খালেদ তা হতে দেননি। নিজের শেষ স্পেলে এসে বাউন্সারে মেহেদী ও হাসান মুরাদকে আউট করেন তিনি। ৪ ওভারে ৩১ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন, টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে যা খালেদের সেরা বোলিং। ৩ ওভারে ১৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।