উত্থান–পতনে ভরপুর উত্তেজনার ম্যাচ শেষে নিউজিল্যান্ডের হাসি
প্রথম ১০ ওভারে ৬৫ রানে নেই ৫ উইকেট। সেখান থেকে পঞ্চম উইকেটে দারুণ প্রতি আক্রমণে ৬০ বলে ১০৫ রানের জুটিতে অসাধারণ ঘুরে দাঁড়ানো। তাতে নিউজিল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে শেষ পর্যন্ত উঠল ৮ উইকেটে ১৭২ রান।
ওভারপ্রতি ৮.৬৫ করে রান তোলার কঠিন এ লক্ষ্যও তাড়া করতে নামা শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং দেখে একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল হেসেখেলেই জিতবে। ১৩ ওভারে বিনা উইকেটে ১২০ তুলে ফেলেছিল সফরকারীরা। এরপরই শ্রীলঙ্কার ছন্দপতন এবং তারপর নিউজিল্যান্ডকে আরও দুবার ঘুরে দাঁড়ানোয় পরীক্ষায় পাস করে ম্যাচটি জিততে হয়েছে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে।
হাতে ৪ উইকেট রেখে জয়ের জন্য শেষ ওভারে ১৪ রান তুলতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। নিউজিল্যান্ডের পেস অলরাউন্ডার জ্যাকারি ফোকস শেষ ওভারে প্রথম বলেই তিকশানাকে তুলে নেন। পরের বলেই হাসারাঙ্গা রান আউট হওয়ায় ম্যাচ থেকে দৃশ্যত ছিটকেই পড়ে শ্রীলঙ্কা। শেষ ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ৮ রানের দারুণ এক জয় এনে দেন ফোকস। প্রথম টি-টোয়েন্টি জিতে তিন ম্যাচের এই সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড। সোমবার মাউন্ট মঙ্গানুইয়েই সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি।
১৩.২ ওভারে বিনা উইকেটে ১২১ রান তুলে ফেলেছিলেন শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার কুশল মেন্ডিস ও পাতুম নিশাঙ্কা। নিউজিল্যান্ডের পেসার জ্যাকব ডাফি ১৪তম ওভারের শেষ ৪ বলে ৩টি উইকেট নেন। মেন্ডিস (৩৬ বলে ৪৬), তিনে নামা কুশল পেরেরা (০) ও চারে নামা কামিন্দু মেন্ডিসকে (০) ফেরান। বোলিংয়ে এটা নিউজিল্যান্ডের প্রথম ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা হলেও জয়ের জন্য শেষ ৩০ বলে ৪৫ রান দরকার ছিল শ্রীলঙ্কার। কঠিন লক্ষ্য না হলেও এরপর যে কোনো দলের পক্ষে দু-একটি ভালো ওভার ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে পারত এবং সেটাই হলো নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ১৯তম ওভারে।
তখন ১২ বলে ২০ রানের সমীকরণে ছিল শ্রীলঙ্কা। ক্রিজে ভানুকা রাজাপক্ষে ও ওপেনার নিশাঙ্কা। এই ওভারে তিন বলের মধ্যে নিশাঙ্কা (৬০ বলে ৯০) ও রাজাপক্ষকে (৮) ফিরিয়ে মাত্র ৬ রান দিয়ে নিউজিল্যান্ডকে আবারও লড়াইয়ে ভালোভাবে ফেরান হেনরি। শেষ ওভারে ফোকস শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে ১৬৪ রানে থামিয়ে দেওয়ার পর হতাশই হতে পারে সফরকারীরা। যে দলটি প্রথম ১০ ওভারে বিনা উইকেটে ৯৫ রান তুলেছিল, তারাই শেষ ১০ ওভারে ৭৮ রানের লক্ষ্যে ৬৯ তুলে ৮ উইকেট হারিয়েছে!
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভারে টসে জিতে স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন লঙ্কান অধিনায়ক চারিত আসালাঙ্কা। চতুর্থ ওভারে চার বলের মধ্যে দুই ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র ও টিম রবিনসনকে ফিরিয়ে অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে সঠিক বলেই প্রমাণ করেছিলেন পেসার বিনুরা ফার্নান্দো। নিউজিল্যান্ডের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় সপ্তম ওভারে মার্ক চাপম্যানের বিদায় এবং ১০ম ওভারে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা টানা দুই বলে গ্লেন ফিলিপস ও মিচেল হেকে তুলে নিতে। গ্লেন ফিলিপস ও মিচ হে-কে ফেরান হাসারাঙ্গা।এরপর মাইকেল ব্রেসওয়েল ও ড্যারিল মিচেল শুরু করেন প্রতি আক্রমণ।
বিশেষ করে ১৪, ১৫ ও ১৬ ওভারে দুজনে মিলে তুলেছেন যথাক্রমে ১২, ২২ ও ১৫ রান। ব্রেসওয়েল ও মিচেল আউট হন ২০তম ওভারে। ২ ছক্কা ও ৪ চারে ৪২ বলে ৬২ রানে আউট হন মিচেল। ৪ ছক্কা ও ৪ চারে ৩৩ বলে ৫৯ রানে আউট হন ব্রেসওয়েল। ষষ্ঠ উইকেটে টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডের হয়ে রেকর্ড জুটি (১০৫) গড়েন দুজন। লঙ্কান স্পিনার মহীশ তিকশানা শেষ ওভারে চার বলের মধ্যে ৩ উইকেট নিয়ে দলের জন্য শেষ ওভারটা খুব ভালো করেন। মাত্র ৩ রান দেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৭২/৮ (মিচেল ৬২, ব্রেসওয়েল ৫৯, চাপম্যান ১৫, রবিনসন ১১; বিনুরা ২/২২, তিকশানা ২/২৯, হাসারাঙ্গা ২/৩৩)।
শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৬৪/৮ (নিশাঙ্কা ৯০, মেন্ডিস ৪৬, রাজাপক্ষে ৮; ডাফি ৩/২১, হেনরি ২/২৮, ফোকস ২/৪১)।
ফল: নিউজিল্যান্ড ৮ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: জ্যাকব ডাফি।
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড।