মুডি বললেন মানুষের এখন টেস্ট দেখার সময় নেই, হোল্ডার দিলেন সমাধান

টেস্ট ক্রিকেট কি রং হারিয়ে ফেলছে?এএফপি

ঠিক এই মুহূর্তে দুটি টেস্ট খেলুড়েসহ তিনটি দেশে চলছে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট—বাংলাদেশে বিপিএল, দক্ষিণ আফ্রিকায় এসএ টোয়েন্টি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে আইএল টি-টোয়েন্টি। বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টির যখন এমন রমরমা অবস্থা, তখন টেস্ট ক্রিকেট আলোচনায় এর অস্তিত্ব নিয়ে।

এসএ টোয়েন্টিতে শীর্ষ ক্রিকেটাররা খেলবেন বলে দক্ষিণ আফ্রিকা আসন্ন নিউজিল্যান্ড সফরের টেস্ট দলে অধিনায়কসহ ৭ নতুন মুখকে ডেকেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজও সব খেলোয়াড়কে না পাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়েছে এর আগে টেস্ট না খেলা ৭ জনকে। দল বা খেলোয়াড়দের অগ্রাধিকার তালিকায় টেস্ট ক্রিকেটের এই পিছিয়ে পড়াটা সময়ের বাস্তবতা বলে অভিহিত করেছেন অস্ট্রেলিয়ান কোচ টম মুডি। তবে টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচানোর জন্য উপায়ও আছে বলে জানিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক জেসন হোল্ডার।

অস্ট্রেলিয়ার ১৯৮৭ ও ১৯৯৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য মুডি এখন আইএল টি-টোয়েন্টির দল ডেজার্ট ভাইপারসের কোচ। এর আগে ছিলেন আইপিএলের দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের দায়িত্বে। হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে টি-টোয়েন্টির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার পেছনে মানুষের ব্যস্ততাময় জীবনের বাস্তবতাকে টেনে এনেছেন মুডি, ‘টি-টোয়েন্টির চাহিদা, দর্শক বলেন আর খেলোয়াড় বলেন, সবার মধ্যেই বেড়েছে। ছোট সংস্করণের প্রতি সবারই আকর্ষণ। এটা মূলত সমাজেরই প্রতিবিম্ব। বহু বছর আগে মানুষের হাতে যে পরিমাণ সময় ছিল, এখন সেটা নেই।’

অস্ট্রেলিয়াতে এখনো টেস্ট দেখতে গ্যালারিতে থাকেন বিপুল সংখ্যক দর্শক
এএফপি

মুডি অবশ্য টেস্ট ক্রিকেট মরে যাবে মনে করছেন না। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু টেস্টে চমৎকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা গেছে উল্লেখ করে সাবেক এই ক্রিকেটার বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি টেস্ট ক্রিকেটের জায়গা এখনো আছে। তবে এর জন্য সময় বের করাটা অনেক দেশের জন্য কঠিন হয়ে উঠছে। কারণ চারপাশেই এখন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট হচ্ছে।’

আরও পড়ুন

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক হোল্ডারের কণ্ঠেও টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে উদ্বেগ এবং আশাবাদ দুটিই উঠে এসেছে। উদ্বেগের কারণ টেস্ট ক্রিকেট ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। ক্রিকেট থেকে আয়ের বেশির ভাগ এবং আইসিসির লভ্যাংশ বণ্টন দুটিই তিন দেশ ঘিরে বেশি হয়ে থাকে। আবার ‘বিগ থ্রি’ নামে পরিচিত এই দেশগুলোই নিজেদের মধ্যে টেস্ট বেশি খেলে।

১৯ জানুয়ারি শুরু হয়েছে বাংলাদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি টি–টোয়েন্টি লিগ বিপিএলের দশম আসর
শামসুল হক

হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে আলাপে অন্য দেশগুলোতে টেস্টের জনপ্রিয়তা এবং অর্থের ক্রমহ্রাসমান প্রবণতা টেস্টের জন্য বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেছেন হোল্ডার, ‘যেভাবে চলছে, এভাবে চলতে থাকলে টেস্ট ক্রিকেট মরে যাবে। এটা দুঃখজনক হলেও সত্যি, বিশেষ করে বর্তমান কাঠামোর কারণে। বিগ থ্রি–ই এখন আইসিসি তহবিলের বেশির ভাগটা পেয়ে থাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো ছোট ছোট দলগুলোর জন্য এভাবে টিকে থাকা কঠিন।’

আরও পড়ুন

দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টির জন্য টেস্টে দ্বিতীয় সারির দল গড়া নিয়ে যে আলোচনা এখন চলছে, ক্যারিবীয় ক্রিকেটে তা আরও আগে থেকেই চলমান। খেলোয়াড়েরা জীবিকার জন্য টি-টোয়েন্টিকে প্রাধান্য দেন উল্লেখ করে হোল্ডার বলেন, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ এবং টেস্টের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করে দিলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটা সম্ভব, ‘টেস্ট ক্রিকেট বাঁচানোর একমাত্র উপায় হতে পারে, যদি বছরের একটা সময় টেস্টের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। এতে করে সেরা খেলোয়াড়দের পাওয়া যাবে। এর চেয়ে বড় কথা, তাদের পারিশ্রমিকও যথেষ্ট পরিমাণের হতে হবে।’

ফুটবলে লিগ ও আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য সময় নির্দিষ্ট করা থাকে। টেস্ট বাঁচিয়ে রাখতে ক্রিকেটেও এমন ব্যবস্থা চালুর কথা ভাবা যেতে পারে মনে করেন হোল্ডার, ‘একটা সময় বের করা দরকার। এমন সময়, যেটা ঘরোয়া লিগের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না। আমার মনে হয় ক্রিকেট ফুটবল মডেলে চলে যেতে পারে। যেখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য একটা সময় নির্দিষ্ট করা থাকবে, আরেকটা সময় নির্দিষ্ট করা থাকবে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের জন্য। হতে পারে এটাই এগিয়ে যাওয়ার মডেল। তবে কে জানে কী হয়?’

আরও পড়ুন