চেন্নাইয়ের হয়ে প্রথম মৌসুমে যেমন করলেন মোস্তাফিজ
চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে নিজের প্রথম মৌসুমে কেমন করলেন মোস্তাফিজুর রহমান? না, আইপিএল এখনো শেষ হয়নি। তবে আগামীকাল শুরু জিম্বাবুয়ে সিরিজ। মোস্তাফিজকে তাই ফিরতে হচ্ছে দেশে। তাই চেন্নাইয়ের হয়ে মোস্তাফিজের প্রথম মৌসুম শেষ হচ্ছে ৯ ম্যাচ খেলেই। কেমন করলেন মোস্তাফিজ?
বাংলাদেশের এই পেসার এবার আইপিএলে উইকেট নিয়েছেন ১৪টি, যা এখন পর্যন্ত যৌথভাবে টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ। ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৯.২৬ করে। এবারের আইপিএলে যেভাবে রান উৎসব হচ্ছে, তাতে এটাকে খুব ভালো বলা না গেলেও খুব বেশি বলার সুযোগও নেই।
চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে মোস্তাফিজ ছিলেন দুর্দান্ত। ৬ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ১১টি। মোস্তাফিজকে চেন্নাই দলে নেওয়ার পর থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, ঘরের মাঠের ‘গ্রিপিং’ উইকেট কাজে লাগাতেও মোস্তাফিজকে কিনেছে চেন্নাই। সেই ধারণা সত্যি হলে বলতেই হচ্ছে, মোস্তাফিজ চেন্নাইয়ের চাহিদা পূরণ করেছেন। সে কারণেই মোস্তাফিজকে হারিয়ে চেন্নাইয়ের প্রধান কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং বলেছেন, ‘মোস্তাফিজকে হারানো হতাশার।’
উইকেটের হিসাবে এটি যৌথভাবে মোস্তাফিজের দ্বিতীয় সেরা মৌসুম। এর আগে ২০২১ সালে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ১৪ ম্যাচে ১৪ উইকেট নিয়েছিলেন মোস্তাফিজ। আর তাঁর সর্বোচ্চ ১৭ উইকেট এসেছিল ২০১৬ সালে।
এবার কোন ম্যাচে মোস্তাফিজ কেমন করলেন দেখে নেওয়া যাক—
২২ মার্চ, প্রতিপক্ষ বেঙ্গালুরু, এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়াম: একাদশে থাকা নিয়ে শঙ্কা ছিল। মোস্তাফিজের সুযোগ পেয়েছিলেন মাতিশা পাতিরানার চোটে। সুযোগ পেয়েই বাজিমাত। অভিষেকেই ৪ ওভারে ২৯ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট, যা আইপিএলে তাঁর ক্যারিয়ারসেরা। আউট করেন ফাফ ডি প্লেসি, রজত পাতিদার, বিরাট কোহলি ও ক্যামেরন গ্রিনকে। মোস্তাফিজের আগের সেরা বোলিং ছিল ১৬ রানে ৩ উইকেট, ২০১৬ সালে তাঁর প্রথম আসরে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে। বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারেরও আইপিএলে এটি সেরা বোলিং। সাকিব আল হাসানের সেরা বোলিং ফিগার—১৭ রানে ৩ উইকেট।
২৬ মার্চ, প্রতিপক্ষ গুজরাট, এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়াম: চেন্নাইয়ের টানা দ্বিতীয় জয়। প্রথম ম্যাচে ৪ উইকেটের পর দ্বিতীয় ম্যাচে মোস্তাফিজ পেলেন দুই উইকেট। প্রথম দুই ওভারে ২৩ রান দেওয়া মোস্তাফিজ ডেথ ওভারে দুই ওভারে রান দেন মাত্র ৮, নেন ২ উইকেট। আউট করেন রাহুল তেওয়াতিয়া ও রশিদ খানকে।
৩১ মার্চ, প্রতিপক্ষ দিল্লি, বিশাখাপট্টনম স্টেডিয়াম: খরুচে মোস্তাফিজ, চেন্নাইয়ের প্রথম হার। দিল্লির বিপক্ষে সেই ম্যাচে প্রথম ওভারেই মোস্তাফিজ খরচ করেন ১৮ রান। নিজের দ্বিতীয় ওভারে ৪ রান দিয়ে ডেভিড ওয়ার্নারকে ফেরান। তবে ডেথ ওভারে দুই ওভারে খরচ করেন ২৫ রান। সব মিলিয়ে ৪ ওভারে ৪৭ রান খরচ করেন মোস্তাফিজ।
৮ এপ্রিল, প্রতিপক্ষ কলকাতা, এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়াম: স্বরূপে মোস্তাফিজ। কলকাতার ব্যাটসম্যানদের রীতিমতো বিপাকেই ফেলছিলেন তিনি। সেই ম্যাচে শ্রেয়াস আইয়ার, মিচেল স্টার্কের সামনে ইনিংসের ২০তম ওভারে মাত্র ১ রান দেন মোস্তাফিজ, নেন ২ উইকেট। এর আগে আন্দ্রে রাসেলকেও বোকা বানিয়েছিলেন, মহেন্দ্রে সিং ধোনি সহজ ক্যাচ না ছাড়লে রাসেলের উইকেটও পেতে পারতেন। সব মিলিয়ে ২২ রানে নেন ২ উইকেট।
১৪ এপ্রিল, প্রতিপক্ষ মুম্বাই, ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম: মুম্বাইয়ের বিপক্ষে মোস্তাফিজ ৪ ওভারে খরচ করেন ৫৫ রান। উইকেট নেন ১টি। এমন খরুচে দিনেও বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে টিম ডেভিডের উইকেট নেন মোস্তাফিজ। সঙ্গে মাতিশা পাতিরানার বলে থার্ড ম্যান অঞ্চলে সূর্যকুমার যাদবের দুর্দান্ত একটি ক্যাচ নেন, যেটি এবারের আইপিএলে অন্যতম সেরা ক্যাচ।
১৯ এপ্রিল, প্রতিপক্ষ লক্ষ্ণৌ, অটল বিহারি বাজপেয়ী স্টেডিয়াম: একপেশে ম্যাচে এদিন ৪ ওভারে ৪৩ রান খরচ করেন মোস্তাফিজ। মূলত সেদিন লক্ষ্ণৌর দুই ওপেনারই ম্যাচের ভাগ্য লিখে ফেলেন। ১৭৭ রানের লক্ষ্যে লোকেশ রাহুল ও কুইন্টন ডি কক গড়েন ৯০ বলে ১৩৪ রানের জুটি। ইনিংসের ১৫তম ওভারে মোস্তাফিজ এসে ডি কককে আউট করলেও তা ম্যাচে কোনো প্রভাব ফেলেনি।
২৩ এপ্রিল, প্রতিপক্ষ লক্ষ্ণৌ, এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়াম: মোস্তাফিজের জন্য কঠিন ম্যাচ এটি। লক্ষ্ণৌর বিপক্ষে সেদিন শুরুটা ভালো করেছিলেন। নিজের প্রথম ওভারে দিয়েছিলেন মাত্র ৪ রান, পেয়েছিলেন লোকেশ রাহুলের উইকেট। তবে পরের ওভারে দিয়েছেন ১৩ রান, তৃতীয় ওভারে ১৫। ম্যাচের শেষ ওভারে যখন মোস্তাফিজের হাতে বল তুলে দেওয়া হলো, লক্ষ্ণৌর জিততে দরকার ছিল ১৭ রান। ক্রিজে সেঞ্চুরিয়ান মার্কাস স্টয়নিস। মোস্তাফিজ ১৭ রান ডিফেন্ড করতে পারেননি। প্রথম বলে খেলেন ছক্কা, পরের দুই বলে দুটি চার। এর মধ্যে তিন নম্বর বলটি আবার হয়েছে নো। ফ্রি হিটে আবার ৪ মেরে স্টয়নিস লক্ষ্ণৌকে জেতান। সেদিন ৩.৩ ওভারে ৫১ রান দেন তিনি। মূলত টানা তিন ম্যাচে এমন খরুচে বোলিংয়ের ছাপই পড়ে মোস্তাফিজের ইকোনমি রেটে।
২৮ এপ্রিল, প্রতিপক্ষ সানরাইজার্স, এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়াম: এদিন মোস্তাফিজের তেমন কিছু করার প্রয়োজন হয়নি। চেন্নাই পেসার তুষার দেশাপান্ডেই ম্যাচের ফল চেন্নাইয়ের দিকে টেনে নেন। রুতুরাজের ৯৮ রানের ইনিংসে চেন্নাই আগে ব্যাট করে তোলে ২১২ রান। এরপর শুরুতেই হায়দরাবাদের ৩ ব্যাটসম্যানকে ফেরান দেশপান্ডে। মোস্তাফিজ যখন নিজের তৃতীয় ওভার করতে আসেন, তখন হায়দরাবাদের দরকার ১২ বলে ৮৫ রান। এমন সমীকরণের সময় বোলিংয়ে এসে এসে নেন ২ উইকেট। আউট করেন শাবাজ আহমদে ও জয়দেব উনাদকাট।
১ মে, প্রতিপক্ষ পাঞ্জাব, এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়াম: গতকালের ম্যাচেও প্রথম উইকেটশূন্য ছিলেন মোস্তাফিজ। এক ওভার মেডেনও দিয়েছেন। সব মিলিয়ে রান দিয়েছেন ৪ ওভারে ২২। মোস্তাফিজের উইকেটহীন ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংসও জেতেনি। ১৬২ রান তাড়া করতে নেমে পাঞ্জাব কিংস জিতেছে ৭ উইকেট হাতে রেখে, বলও বাকি ছিল ১৩টি।