বাটলার খেলাটা শেষ করতে না পারলেই বরং অবাক হতেন স্টোকস
সেঞ্চুরি তো আইপিএলে কতই হয়! তবে সব সেঞ্চুরির ভার সম্ভবত এক রকম নয়। কিছু সেঞ্চুরি পায় বিশেষ মর্যাদা। এই যেমন ইংল্যান্ডের জশ বাটলার গতকাল রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে যে সেঞ্চুরিটি করলেন—পরিসংখ্যানে তাকালেই ইনিংসটির মাহাত্ম্য বোঝা যায়।
শেষ ৬ ওভারে রাজস্থানের প্রয়োজন ছিল ৯৬ রান, ওভারপ্রতি দরকার ১৬ রান করে, হাতে ৪ উইকেট। বাটলার তখন অপরাজিত ৩৩ বলে ৪২ রানে। সেখান থেকে বাটলার সেঞ্চুরি করেছেন, দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। সেটাও চোট নিয়ে অনেকটাই খুঁড়িয়ে। এমন ইনিংসের পর স্বাভাবিকভাবেই ক্রিকেটবিশ্বে চলছে বাটলার–বন্দনা।
বাটলারকে নিয়ে এই বন্দনা অবশ্য মাঠ থেকেই শুরু হয়েছে। শুরু করেছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের মালিক শাহরুখ খান। নিজে হেরে গিয়েও ম্যাচ শেষে বাটলারকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দনও জানিয়েছেন তিনি। আর বাটলারের সতীর্থরা? মাঠে তাঁরা বাটলারকে কুর্নিশ তো করছেনই পারলে পা ছুঁয়ে সালাম করেন!
পাওয়ার হিটিংয়ের যুগে রান করাটা তুলনামূলক সহজ হয়েছে। কিন্তু তাই বলে হাতে ৪ উইকেট নিয়ে শেষ ৬ ওভারে ৯৬ রান তোলাটা এখনো অবিশ্বাস্যই লাগার কথা। বাটলার কাল অমন ঝড় শুরু করেন স্পিনার বরুণ চক্রবর্তীকে দিয়ে। ১৫তম ওভারে স্পিনার বরুণকে চারটি ৪ মারেন বাটলার। ওই ওভারে আসে ১৭ রান, পরের ওভারেও রান আসে ১৭। আন্দ্রে রাসেলের করা সেই ওভারটিতে বাটলারের পাশাপাশি একটি ছক্কা মারেন রোভম্যান পাওয়েলও। সুনীল নারাইনের পরের ওভারটিতে রান ওঠে ১৬। শেষ ৩ ওভারে বাটলারদের রান দরকার ছিল ৪৬, তখন ১৮তম ওভারে এসে মিচেল স্টার্ক রান দিয়ে যান ১৮।
পরের দুই ওভারে ২৮ রানের সমীকরণও মিলয়ে ফেলেন বাটলার। এই পথে পান আইপিএলে নিজের সপ্তম সেঞ্চুরি, যা টুর্নামেন্টের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আইপিএলে তাঁর চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আছে শুধু বিরাট কোহলির—৮টি। তবে এক জায়গায় কোহলির চেয়ে এগিয়ে বাটলার। বাটলার আইপিএলে সেঞ্চুরি করে কখনো হারেননি, কোহলি হেরেছেন তিনবার। গতকাল নারাইন, স্টার্কদের কেউ একটি ওভার ভালো করলেও খেলার গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারত, সেটাই বাটলার হতে দেননি। বাটলারের গতকালের ইনিংসের মাহাত্ম্যটাই এখানে।
বাটলারের অমন ইনিংস সবাইকে অবাক করেছে। তবে বাটলারের ইংলিশ সতীর্থ বেন স্টোকস বলেছেন, বাটলার খেলা শেষ করতে না পারলেই তিনি বেশি অবাক হতেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’–এ গতকাল স্টোকস লিখেছেন, ‘সত্যি বলতে পাওয়েলের আউটের পর বাটলার যদি খেলা শেষ করে না আসতে পারত, তাহলেই বেশি অবাক হতাম। ও এতটাই ভালো, ম্যাচ পরিস্থিতি বোঝার সামর্থ্য, খেলা থেকে আবেগটাকে দূরে সরিয়ে রাখার সামর্থ্যই ওকে আলাদা করেছে।’
সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার মাইকেল ভন বাটলারের ইনিংস নিয়ে এক্সে লিখেছেন, ‘এটা নিশ্চিতভাবেই সেরা টি-টোয়েন্টি ইনিংসের একটি। আসলেই অবিশ্বাস্য।’
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চ বাটলারের সেঞ্চুরির প্রশংসা করে লিখেছেন, ‘রাজস্থানের কী দুর্দান্ত রান তাড়া করে জয়। আশপাশে যখন উইকেটের ঝড় বইছিল, তখন বাটলারের টিকে থাকার ধৈর্যই প্রমাণ করে সে কেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা ওপেনারদের একজন।’
চলতি মৌসুমে এটি বাটলারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। এর আগে ৬ এপ্রিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সে বেঙ্গালুরুর বিপক্ষেও অপরাজিত সেঞ্চুরি করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন বাটলার।