বাবর এখন জাকির–মাহমুদুলের কাতারে

আউট হওয়ার পর বাবর। ছবিটি বাংলাদেশ সিরিজের।এএফপি

শুরুটা চারে। সেই চার বাবর আজমকে নিয়ে গেল টেস্টে চার হাজার রানের ক্লাবে। যাক কিছুটা স্বস্তি! সাদা বলের ক্রিকেটে খারাপ সময়ের চক্করে পড়া বাবর ইনিংসের শুরুতেই ভালো কিছুর দেখা পেলেন।

কাল সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাবরকে প্রথম বলে বাউন্ডারি মারতে দেখে ভক্তরা যদি এভাবে ভেবে থাকেন, তবে তাঁদের মনও ভেঙেছে দ্রুতই। কারণ, বাবর টিকতে পেরেছেন মাত্র ১০ বল। ফিরেছেন সেই ৪ রানেই, যেন ৪০০০ রানের ক্লাবে ঢুকতেই মাঠে নেমেছিলেন।

ড্যান প্যাটারসনের বলে স্লিপে এইডেন মার্করামের হাতে ক্যাচ দেওয়া বাবর সর্বশেষ পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস কবে খেলেছেন, জানেন? এ প্রশ্নের উত্তর পেতে ফিরতে হবে ২ বছর ১ দিন আগে। ২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর সর্বশেষ সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছিলেন বাবর। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করাচির সেই ম্যাচে করেছিলেন ১৬১ রান। এর পর থেকেই বাবরের বিবর্ণ পথের শুরু...!

এই পথ বাবরকে কোহলিদের কাতার থেকে নিয়ে এসেছে বাংলাদেশের জাকির হাসান-মাহমুদুল হাসানদের কাতারে। কোহলির সঙ্গে বছরের পর বছর তুলনা করাতে বাবর কোহলি হয়ে যাননি, আবার জাকিরও হয়তো হবেন না। তবে পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট—বাজে সময় বাবরকে কোথায় নিয়ে এসেছে!

২০২৩ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বাবর ব্যাটিং করেছেন ১৮ ইনিংস, গড় ১৯.৭৭। এই সময়ে ব্যাটিং অর্ডারের শীর্ষ ৭ ব্যাটসম্যানের মধ্যে এর চেয়ে কম ব্যাটিং গড় শুধু জাকির হাসানের—১৯.৩৮। তালিকায় বাবরের নামের ওপরের মতো ঠিক নিচেও এক বাংলাদেশি—মাহমুদুল হাসান। এই ডানহাতি ওপেনারের ব্যাটিং গড় ২০.৮৭ গড়ে।
সবচেয়ে কম ব্যাটিং গড়ে জাকির–মাহমুদুলের মাঝখানে থাকা বাবর সর্বশেষ দুই বছরে খেলেছেন ১৮ ইনিংস। এর মধ্যে ১২ ইনিংসেই ২০ রানের ঘর ছুঁয়েছেন, কিন্তু সর্বোচ্চ ৪১। যার অর্থ হচ্ছে বাবর শুরুটা ভালো করছেন। তবে ইনিংস টেনে নিতে পারছেন না।

পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ইনিংসের হিসাবে বাবরের চেয়ে বেশি ফিফটিহীন থেকেছেন মাত্র দুজন ব্যাটসম্যান—ম্যাথিয়াস ওয়ালিস (২৩) ও আলিমউদ্দিন (২১)।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসসহ বাবরের ব্যাটে ফিফটি নেই টানা ১৯ ইনিংস। টেস্ট ক্যারিয়ারে এত দীর্ঘ সময় কখনোই ব্যাট না উঁচিয়ে থাকেননি বাবর। এর আগে ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে টানা ৭ ইনিংসে ফিফটি ছিল না।

তবে এবারের ব্যবধানটা দ্বিগুণ ছাড়িয়ে তিন গুণের কাছাকাছি চলে গেছে। পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ইনিংসের হিসাবে এর চেয়ে বেশি ফিফটিহীন থেকেছেন মাত্র দুজন ব্যাটসম্যান—ম্যাথিয়াস ওয়ালিস (২৩) ও আলিমউদ্দিন (২১)। বাবরের সমান টানা ১৯ ইনিংস ফিফটি পাননি তৌফিক উমর।

আরও পড়ুন

লম্বা রান–খরার কারণে গত অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ দুই টেস্টের দল থেকেই বাদ পড়েন বাবর। বোর্ড যদিও বলেছিল বিশ্রামের কথা। সেই বিশ্রাম শেষে বাবর এই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টেই দলে ফেরেন।

আউট হয়ে ফিরছেন বাবর
এএফপি

বাবরের সঙ্গে কোহলি-রুটদের যে তুলনা, সেটা শুধু সমর্থকদের আবেগেই নয়, পারফরম্যান্সেরও অবদান আছে! ২০১৯ সালের শুরু থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত টেস্টে বাবরের গড় ছিল প্রায় ৬০। এই সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় গড় ছিল ৫২.৫০। ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজে বাবর ব্যাটিং করেছেন ৪৮ গড়ে, শ্রীলঙ্কার মাটিতে তো প্রায় ৭০ আর দেশের মাটিতে ৭৫!

তবে এগুলো এখন সবই অতীত। টেস্টে বাবরের জন্য আপাতত ইতিবাচক কোনো খবরই নেই। ২০২২ সালের দিকে বাবরের টেস্ট গড় ছিল প্রায় ৫০, সেটা এখন ৪৩! গড়টা যে ৪০–এর নিচে নেমে যায়নি, এটাকে বাবর ইতিবাচক হিসেবে ধরতে পারেন।

আরও পড়ুন