ওয়েস্ট ইন্ডিজের পতনের কারণ ‘সময়ের সঙ্গে নিজেদের না বদলানো’
বহু ব্যবসা, বহু নামী ব্র্যান্ড যেমন সময়ের সঙ্গে নিজেদের না বদলাতে পেরে হারিয়ে গেছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অবস্থা ঠিক তেমনই—মনে করেন ইয়ান বিশপ। সাবেক এই ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলার মনে করেন এই অধঃপতনটা অনেক দিন ধরেই।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম দুবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ আগামী অক্টোবর–নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠেয় ওয়ানডে বিশ্বকাপে থাকছে না। ওয়ানডে সুপার লিগে প্রথম সাত দলের মধ্যে থাকতে না পারা ক্যারিবীয় দল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের সুপার সিক্স থেকে বিদায় নিচ্ছে। জিম্বাবুয়ে আর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হারের পর সুপার সিক্সে গতকাল তারা স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হেরেছে। আর তাতেই নিশ্চিত হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিদায়।
ক্রিকেটপিয়াসীদের জন্য ব্যাপারটা কিছুটা কষ্টেরই। ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচার্ডস, অ্যান্ডি রবার্টস, মাইকেল হোল্ডিং, জোয়েল গার্নার, গর্ডন গ্রিনিজ, ডেসমন্ড হেইন্স, কার্টলি অ্যামব্রোস, কোর্টনি ওয়ালশ, ব্রায়ান লারাদের উত্তরসূরিরা এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিশ্বকাপে নিতে ব্যর্থ। এমন অবস্থায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধঃপতনের কারণ খুঁজতে বসেছেন অনেকেই। বিশপ পুরো ব্যাপারটির তুলনা করছেন বড় করপোরেট গ্রুপের পতনের সঙ্গে। ব্যবসা–বাণিজ্যের ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনাই আছে যে নামী একটা ব্র্যান্ড বা ব্যবসা সময়ের সঙ্গে নিজেদের না বদলাতে পেরে অথবা কার্যকর কৌশল গ্রহণ করতে না পেরে ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবস্থাও এমনই। ইএসপিএন–ক্রিকইনফোকে তিনি বলেছেন, সব দোষ এখনকার খেলোয়াড়দের দেওয়াটা অন্যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের পতনটা শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই, ‘এই পতনটা একদিনে হয়নি, অনেক দিন ধরেই ক্যারিবীয় ক্রিকেট ধুঁকছে। আমরা গত এক যুগ ধরেই বিশ্বের শীর্ষ ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর সঙ্গে ভালো ওয়ানডে ক্রিকেট খেলছি না। দুবার টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও টি–টোয়েন্টি দলের অবস্থা ভালো নয়।’
বিশপের মতে এই অধঃপতনের মূল কারণ দূরদৃষ্টির অভাব, ‘ব্যাপারটা অনেকটাই বড় করপোরেট হাউজগুলোর মতো, যারা সময়ের সঙ্গে নিজেদের বদলাতে না পেরে শীর্ষ অবস্থান থেকে পড়ে গেছে। আমি মনে করি, ক্যারিবীয় ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী দূরদৃষ্টির অভাব। শীর্ষে থাকা অনেক করপোরেট হাউজই দূরদৃষ্টির অভাবে ধসে গেছে, ব্যবসা থেকে হারিয়ে গেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবস্থাটা তেমনই। আমাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়েই এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে।’
সত্তর ও আশির দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল ছিল দারুণ শক্তিশালী। দুনিয়ার সেরা সব ক্রিকেটারের সমাবেশ ছিল দলটিতে। ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালে প্রথম দুটি বিশ্বকাপ তারা জিতেছে হেসেখেলেই। আশির দশকেও বিশ্ব ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রভাবটা ছিল। ক্যারিবীয় দল শক্তিশালী ছিল নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকেও। কিন্তু এর পর থেকেই পতনটা শুরু হয়। বিশপ মনে করেন, সেই সত্তর ও আশির দশককে আর কখনোই ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়, ‘আমরা আশির দশকের মতো কিংবা নব্বইয়ের দশকের শুরুর সময়টার মতো আর কখনোই বিশ্ব ক্রিকেটে আধিপত্য সৃষ্টি করতে পারব না। বাকি দলগুলো এখন অনেক এগিয়ে গেছে। ক্যারিবীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক সমস্যা অনেক দিনের।’
তবে এতটা খারাপ করার মতো দলও ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয় বলে বিশ্বাস বিশপের, ‘জিম্বাবুয়েকে দেখুন। তারা অনেক দিন ধরেই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যার মধ্য দিয়ে গেছে। কিন্তু এবারের বাছাইপর্বে তারা কী দুর্দান্তই না খেলছে। আমি মনে করি, দলের মধ্যে সমন্বয় থাকলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলেরও ভালো করার যথেষ্ট রসদ ছিল।’
ক্যারিবীয় ক্রিকেটে কেন আগের দিন ফেরানো যাবে না, সেটিরও একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিশপ, ‘আসলে সময়টাই বদলে গেছে। যে প্রেরণা নিয়ে ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচার্ডস, ডেসমন্ড হেইন্স, গর্ডন গ্রিনিজরা খেলেছেন, এখনকার ক্রিকেটারদের সেই প্রেরণা নেই। বিশ্বায়ন একটা বড় কারণ।’