স্বাগতম!
সিলেটের বাতাসে জয়ের ঘ্রাণ! স্বাগতম সিলেট!
সিলেট টেস্টে আজ পঞ্চম দিনে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি বাংলাদেশ। জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে নাজমুল হোসেনের দল। জয়ের জন্য গতকাল ৩৩২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ উইকেটে ১১৩ রানে চতুর্থ দিন শেষ করেছিল নিউজিল্যান্ড। জয় তুলে নিতে আজ মাত্র ৩ উইকেট চাই বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ২১৯ রান। ইশ সোধিকে নিয়ে উইকেটে নিউজিল্যান্ডের আশা–ভরসা হয়ে আছেন ড্যারিল মিচেল।
টানা তিন?
এ বছর দুটি টেস্ট খেলে দুটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। এপ্রিলে জিতেছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। জুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ। সিলেটে কি তাহলে টানা তৃতীয় জয়? চোখ রাখুন সিলেটে।
মিচেলের অর্ধশতক
নিউজিল্যান্ডের লড়াইয়ের শেষ আশা হয়ে থাকা ড্যারিল মিচেল ফিফটি তুলে নিয়েছেন। আগের দিন ৪৪ রানে অপরাজিত থাকা মিচেল আজ দিনের প্রথম ওভারে তাইজুল ইসলামকে চার মেরে রানের চাকা সচল করেন। অন্য প্রান্ত থেকে বল করছেন আরেক স্পিনার নাঈম হাসান। মিচেলের টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি ৯ম ফিফটি। বাংলাদেশের জয়ে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারলে সেটা মিচেল।
আক্রমণাত্বক তাইজুল ও নাঈম
দিনের প্রথম ওভার থেকেই আক্রমণাত্বক ফিল্ডিং সাজিয়ে বল করছেন তাইজুল। লেগ শর্ট থেকে দুটো স্লিপও রেখেছেন। চেষ্টা করছেন ক্যাচ তোলার। অফ স্পিনার নাঈম লেগে ব্যাটসম্যানের খুব কাছাকাছি তিনজন ফিল্ডার রেখে বল করছেন। বোঝাই যাচ্ছে মিচেল ও সোধির পা তাক করে বল করে উইকেট তুলে নেওয়া লক্ষ্য। সকাল থেকেই উইকেট তুলে নিতে বেশ আক্রমণাত্বক বাংলাদেশ।
নিউজিল্যান্ড ৭ উইকেটে ১২৩।
অষ্টম উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি
জয়ের জন্য ৩৩২ রানের লক্ষ্যে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে নিউজিল্যান্ড কেমন ব্যাটিং করেছে তা ৮ম উইকেট জুটির রানেই স্পষ্ট। ৭২ বলে অবিচ্ছিন্ন ২৯ রানের জুটি গড়েছেন মিচেল–সোধি। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে যা সর্বোচ্চ! এখান থেকে ম্যাচ বাঁচাতে অলৌকিক কিছুই করতে হবে নিউজিল্যান্ডকে।
একটাই জয়
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এর আগে ১৭ টেস্ট খেলে মাত্র একটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। গত বছর মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সেই ঐতিহাসিক জয়। হেরেছে ১৩ টেস্ট। ড্র করেছে ৩ টেস্ট। আজ কি দ্বিতীয় জয় পাবে বাংলাদেশ? মিচেল ও সোধি খুব ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করছেন। শুরু হয়েছে ধৈর্যের খেলা। ভুলের অপেক্ষা নাকি ভুল করতে বাধ্য করবেন বাংলাদেশের বোলাররা?
এই উইকেটটাই চেয়েছিল বাংলাদেশ!
নাহ, ধৈর্যের খেলায় হার ড্যারিল মিচেলের! দিনের খেলা শুরুর ১০ম ওভারেই সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন মিচেল। নাঈম হাসানের করা বলটি তুলে মারতে চেয়েছিলেন। ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে বলের গতি বুঝে দারুণ ক্যাচ নেন তাইজুল। ১২০ বলে ৫৮ রানে ফিরলেন মিচেল। উইকেটে ইশ সোধির নতুন সঙ্গী নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টিম সাউদি। সোধির সঙ্গে ৩০ রানের জুটি গড়েছিলেন মিচেল।
নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে ১৩২। জয় তুলে নিতে আর ২ উইকেট চাই বাংলাদেশের।
রিভিউ এবং নট আউট সোধি
লেগে খুব কাছে তিনজন ফিল্ডার রেখে ব্যাটসম্যানের পায়ে বল করছিলেন নাঈম। এমনই একটি বল সামনের পায়ে ডিফেন্স করেছিলেন ইশ সোধি। ব্যাট–প্যাড ক্যাচের আবেদন করেছিল বাংলাদেশ। আম্পায়ার যত দ্রুত আউট দিয়েছেন সোধি যেন তার চেয়েও দ্রুততম সময়ে রিভিউ চাইলেন! আল্ট্রা এজে দেখা গেছে, বল সোধির ব্যাটে লাগেনি। বেঁচে গেলেন!
নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে ১৬২।
ছক্কা–সাউদি!
টিম সাউদি নামার আগ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে কেউ ছক্কা মারেননি। কিন্তু কিউই অধিনায়ক এত ধৈর্যবান নন। তাইজুল ও নাঈম দুজনকেই একটি করে ছক্কা হাঁকিয়েছেন সাউদি। বাংলাদেশ এ সুযোগটাই নিতে চায়! হাত খুলে খেললে উইকেট পড়ার সুযোগ বেশি।
নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে ১৭৩।
সাউদিকে তুলে নিলেন তাইজুল
একটু আক্রমণাত্বক খেলার চেষ্টা করছিলেন টিম সাউদি। সেই মানসিকতা থেকেই শর্ট মিড উইকেটে জাকির হাসানকে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। ২ ছক্বা ও ১ চারে ২৪ বলে ৩৪ রানে ফিরলেন সাউদি। এর মধ্য দিয়ে সোধির সঙ্গে ৯ম উইকেটে সাউদির ৫২ বলে ৪৬ রানের জুটিও ভেঙে গেল। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে এটাই সর্বোচ্চ রানের জুটি।
নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়া তাইজুল দ্বিতীয় ইনিংসে এ নিয়ে পেলেন ৫ উইকেট। টেস্টে ১২তমবার ইনিংসে ৫ উইকেট পেলেন তাইজুল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে এই প্রথম ৫ উইকেট পেলেন তাইজুল। টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১৯বার ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। তাইজুল এ তালিকায় দ্বিতীয়।
নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ উইকেটে ১৭৮। জয়ের জন্য আর ১টি উইকেট চাই বাংলাদেশের।
তাইজুলের ১০ উইকেট, জিতল বাংলাদেশ
শেষ উইকেটটি নেওয়া ছিল স্রেফ সময়ের ব্যাপার। ৭১.১ ওভারে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সিলি পয়েন্টে দাঁড়ানো জাকির হাসানকে ক্যাচ তুলে দেন ইশ সোধি (৯১ বলে ২২)। সেটা ওই তাইজুলের বলেই! এর মধ্য দিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮১ রানে অলআউট হলো নিউজিল্যান্ড। ১৫০ রানের জয় তুলে নিল বাংলাদেশ। তাইজুল নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে পেলেন ৬ উইকেট।
ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়
ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এ নিয়ে ৭ম টেস্ট খেলল বাংলাদেশ। ৩ হার ও ৩ ড্রয়ের পর ঘরের মাঠে কিউইদের বিপক্ষে এই প্রথম টেস্ট জিতল বাংলাদেশ। আর তাতে দারুণ অবদান বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের। নিউজিল্যান্ডের দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট ১০ উইকেট নিলেন তিনি। সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের পর বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে টেস্টে দ্বিতীয়বারের মতো এক ম্যাচে ১০ উইকেট নিলেন তাইজুল। ২০১৮ সালে টেস্টে প্রথমবারের মতো তাইজুল ১০ উইকেট নিয়েছিলেন এই সিলেটেই!
সিলেট টেস্ট জয়ে ব্যাটসম্যানদের কথাও বলতে হবে। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ৮৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস খেলেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান। দ্বিতীয় ইনিংসে হাল ধরেছিলেন তিন ব্যাটসম্যান—অধিনায়ক নাজমুল হোসেন (১০৫), মুশফিকুর রহিম (৬৭) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (৫০*)।
নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ১০৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তাইজুল। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৫ রানে নিলেন ৬ উইকেট।
তাইজুল ছাড়া আর কে!
সিলেট টেস্টে চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে তাইজুল ইসলামের স্পিনের জবাব ছিল না নিউজিল্যান্ডের কাছে। মাপা লাইন–লেংথে টানা বল করে গেছেন। উইকেট থেকে বাঁক পাওয়ায় একেকটি ডেলিভারি যেন ছোবল মেরেছে! সেসব ছোবলেই সিলেট টেস্টে ১৮৪ রানে ১০ উইকেট নেওয়া তাইজুলকে ম্যাচসেরার পুরস্কার না দিলে অন্যায়ই হতো। কিন্তু বিজ্ঞ ম্যাচ অ্যাডজুকেটররা সে ভুল করেননি। তাইজুলই ম্যাচসেরা।
ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে তাইজুলের কথা ইংরেজিতে অনুবাদ করে দেন ধারাভাষ্যকার শামীম চৌধুরী। তাইজুল বলেছেন, ‘দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আনন্দিত। ১০ উইকেট পাওয়ায় প্রেরণা আরও বাড়ল। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তুলে নেওয়া জয় দলের মানসিকতাকে ঠিক রাখবে। সতীর্থদেরও সমর্থন পেয়েছি।’
বাংলাদেশের প্রশংসায় সাউদি
সিলেট টেস্ট হেরে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টিম সাউদি স্বাভাবিকভাবেই হতাশ। তবে ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রশংসা করলেন বাংলাদেশ দলের, ‘হতাশ তবে কৃতিত্বটা বাংলাদেশের। তারা ভালো খেলেছে। আমাদের বোলারদের বেশি সময় ধরে চাপ তৈরি করতে হবে। ব্যাটসম্যানদের জুটি গড়তে হবে। উইকেট ভালো ছিল। স্পিন ছিল যেটা এখানে প্রত্যাশিত। এখন ঢাকার জন্য প্রস্তুত হতে হাতে কিছুদিন সময় আছে। ঢাকার উইকেট আলাদা হবে। সবাইকেই পারফরম্যান্স করতে হবে।’
টেস্ট সিরিজে দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচটি ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হবে আগামী বুধবার।
‘কৃতিত্ব সবার, বিশেষ করে তাইজুল...’—বাংলাদেশ অধিনায়ক
অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টেস্টেই জয় তুলে নিলেন নাজমুল হোসেন। পুরস্কার বিতরণীতে এসে তাঁর মুখে হাসি লেগে থাকাই স্বাভাবিক। জয়ের অনুভূতি প্রকাশে বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, ‘কৃতিত্ব সব খেলোয়াড়ের, বিশেষ করে তাইজুল, নাঈম, শরীফুল ও মেহেদীর। সবাই ম্যাচটি উপভোগ করেছে। আমরা ফল নিয়ে ভাবিনি। তরুণ হিসেবে এটা ছিল আমাদের জন্য দলকে জেতানোর সুযোগ। প্রথম ইনিংসে আমরা আরও ৫০ রান বেশি করতে পারতাম। তবে বোলাররা দারুণ করেছে। পরের ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের আরও দায়িত্ব নিতে হবে। এখানে অধিনায়কত্ব করতে পারার সুযোগ পাওয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ। কাজ কেবল অর্ধেক শেষ হলো। সবাই এখন পরের টেস্টে তাকিয়ে।’
স্মরণীয় স্কোরকার্ড
বাংলাদেশ: প্রথম ইনিংস ৩১০, দ্বিতীয় ইনিংস ৩৩৮
নিউজিল্যান্ড: প্রথম ইনিংস ৩১৭ ও দ্বিতীয় ইনিংস ১৮১
ফল: বাংলাদেশ ১৫০ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: তাইজুল ইসলাম (১০/১৮৪)।
ঢাকায় দেখা হবে
সিলেট টেস্টের পর এখন ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার পালা। আগামী ৬ ডিসেম্বর এই স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে মুখোমুখি হবে দুই দল। দেখা হবে ঢাকায়!