ভালো খেলছে ভারত, লাভ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার
শিরোনাম পড়ে অদ্ভুত লাগতে পারে, কিন্তু ঘটনাটা এমনই। পার্থে ভারতের বিপক্ষে রীতিমতো কোণঠাসা অবস্থায় আছে অস্ট্রেলিয়া। যশপ্রীত বুমরার দল দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৮৭ রান তুলে অস্ট্রেলিয়ার সামনে ৫৩৪ রানের বিশাল লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছে। ৫৩৩ রান তো বটেই, টেস্ট ক্রিকেটের দেড় শ বছরের ইতিহাসে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে কোনো দল ৪৩৩ রানও কখনো তাড়া করতে পারেনি।
তবে মাঠের ক্রিকেটে প্যাট কামিন্সরা বেকায়দায় থাকলেও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) কর্তাদের খুব অখুশি থাকার কথা নয়। ভারত ভালো খেলায় আদতে লাভটা যে অস্ট্রেলিয়ারই হয়েছে। ব্যাপারটা অনেকটা ‘পেটে খেলে পিঠে সয়’ও বলা যেতে পারে।
ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করেছে ১৩৪.৩ ওভার। সময়ের হিসাবে আট ঘণ্টার বেশি। অথচ ভারত, অস্ট্রেলিয়া—দুই দলেরই প্রথম ইনিংস টিকেছে মোটে ১০১ ওভার (৪৯.৪ ও ৫১.২ ওভার)। শুধু ম্যাচের প্রথম দিনেই পড়েছে ১৭ উইকেট। ভারত দুই সেশনে ১৫০ রানে অলআউট হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া এক সেশনে ৬৭ রান তুলতেই হারিয়েছিল ৭ উইকেট।
একটা টেস্ট ম্যাচে দুই দল মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৪০ উইকেটের পতন সম্ভব। এর মধ্যে প্রথম দিনই যদি প্রায় অর্ধেক উইকেট চলে যায়, তবে এই ম্যাচ পাঁচ দিনের বদলে দুই বা তিন দিনে শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে যথেষ্টই। আর এ নিয়ে শঙ্কায় ছিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। পুরোটাই তার বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে।
সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্টের দৈর্ঘ্য যত কম হবে, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ক্ষতির পরিমাণ তত বাড়বে। সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান চ্যানেল সেভেন পুরো পাঁচ দিনের জন্য বিজ্ঞাপন নিয়েছে, তা–ও বেশ উচ্চমূল্যে। সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের বাইরে আর্থিক ক্ষতি আছে স্টেডিয়ামের ভেতরে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া টিকিট, মেম্বারশিপ ও হসপিটালিটি প্যাকেজের মাধ্যমে আয় করে থাকে। গ্যালারিতে দর্শকদের কাছে খাবার এবং পানিও বিক্রি করা হয়। ভারতের বিপক্ষে খেলা যতক্ষণ চলমান, ততক্ষণ এই আয়ের খাতগুলো সক্রিয়। ম্যাচ আগে শেষ হওয়া মানেই আয় বন্ধ।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসায়িক মডেলের সঙ্গে পরিচিত, এমন একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, ম্যাচ দ্রুত শেষ হয়ে গেলে প্রতিদিন ২০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার লোকসান হয়। প্রথম দিনে দুই দলের ১৭ উইকেট পড়তে দেখে এমনও শঙ্কা জেগেছিল যে ম্যাচ বুঝি তৃতীয় দিনেও যাবে না। ওই সময় ৬০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার গ্যালারিতে তৃতীয় দিনের জন্য ১২ হাজার টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল।
পার্থ স্টেডিয়ামে দর্শকদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা চালু রাখতে গেলে যে খরচ হয়, সেটা উঠিয়ে লাভ করতে হলে মাঠে প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার দর্শক দরকার। বিগ ব্যাশ লিগে পার্থ স্কোরচার্সের ম্যাচে এবং এএফএল গেমসের খেলায় এমন দর্শক নিয়মিতই হয়। কিন্তু টেস্টে কখনো কখনো সেটা কমে যায়, আর পাঁচ দিনের ম্যাচ তিন দিনে নেমে এলে তো লোকসান অবধারিতই।
বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি শুরুর আগে এসইএন রেডিওকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী নিক হকলিও বলেছেন এমনটাই, ‘সবচেয়ে ভালো হয়, ম্যাচ যদি পঞ্চম দিনের শেষ সেশন পর্যন্ত গড়ায়। আমরা চাই, খুব ভালো টেস্ট ম্যাচ, দুর্দান্ত প্রতিযোগিতা। যাতে যত বেশি সম্ভব, মানুষ এটা উপভোগ করতে পারে।’
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ভারতের বিপক্ষে পার্থ টেস্ট শুরু করেছে শুক্রবার, গত বছর এ মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ শুরু করা হয়েছিল বৃহস্পতিবার। শুক্রবার সরিয়ে নেওয়ার কারণ সাপ্তাহিক ছুটির দুটি দিনই যাতে ম্যাচের মধ্যে পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়ার জন্য সেটিই নিশ্চিত করেছেন ভারতের ব্যাটসম্যানরা।