‘মোস্তাফিজ’ হতে না পেরেই অবসর ‘ভারতের মোস্তাফিজের’

ধোনির হাত থেকে ওয়ানডে অভিষেক ক্যাপ নিচ্ছেনবিসিসিআই

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন হইচই ফেলে। ৩১ বছর বয়সে ক্রিকেট ছাড়লেন অনেকটাই আড়ালে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ক্রিকেট মহল—কোথাও খুব বেশি আলোচনা হলো না তাঁকে নিয়ে। যা একটু হয়েছে, সেখানে তাঁর ক্যারিয়ার নিয়ে আক্ষেপ আর আফসোসই উঠে এসেছে। মাত্র ছয় ওয়ানডে ও দুটি টি-টোয়েন্টি খেলা পেসারের গুণকীর্তন করার সুযোগই বা কোথায়! বলা হচ্ছে ভারতীয় পেসার বারিন্দার স্রানের কথা।

প্রশ্ন উঠতে পারে, মাত্র আটটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা স্রানের অভিষেক নিয়ে এত হইচই কেন হয়েছিল? সেটা বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের কারণে। কেন, সেই গল্পটা খোঁজা যাক।

স্রানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। এর আগের বছর জুনে বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশের মাটিতে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ধরাশায়ী হয়েছিল ভারত।

২০১৫ সালের জুনে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে রোহিতকে তিনবার আউট করেছিলেন মোস্তাফিজ
ছবি: প্রথম আলো

ভারতের বিপক্ষে সেই সিরিজে অভিষেক হয় মোস্তাফিজের। কিশোর চেহারার অচেনা মোস্তাফিজ প্রায় একাই ভারতের বিখ্যাত তারকাদের নাচিয়ে ছেড়েছেন। ওই সিরিজে ৩ ম্যাচে নিয়েছিলেন ১৩ উইকেট, যেটি অভিষেক সিরিজে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার বিশ্ব রেকর্ডও। মোস্তাফিজের কাটার আর সুইংয়ে বারবার বিভ্রান্ত হয়েছেন কোহলি-রায়নারা।

আরও পড়ুন

মোস্তাফিজে নাকানিচুবানি খেয়ে ভারত শুরু করে একজন ‘মোস্তাফিজ’ খোঁজার মিশন। তার অংশ হিসেবেই ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ২৩ বছর বয়সী স্রানকে হুট করে দলে নেওয়া হয়। সেই সময়ে স্রানের লিস্ট এ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল মাত্র আটটি। স্রান পেশাদার ক্রিকেটই শুরু করেন ১৮ বছর বয়সে।

স্রানও ছিলেন মোস্তাফিজের মতো বাঁহাতি পেসার
রয়টার্স

ছোটবেলা থেকে তাঁর লক্ষ্য ছিল বক্সার হওয়ার। এরপর পত্রিকায় ছাপা হওয়া কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের ট্রায়ালের একটি বিজ্ঞাপনই তাঁর জীবন বদলে দিয়েছিল। এত দ্রুত সুযোগ তিনিও হয়তো প্রত্যাশা করেননি! তাই তো দলে সুযোগ পেয়ে নিজেও বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন এই পেসার।

স্রানও ছিলেন মোস্তাফিজের মতো বাঁহাতি পেসার। তাঁর অস্ত্রও ছিল কাটার। দুজনের উঠে আসাই অনেকটা হুট করে, অজপাড়াগাঁ থেকে। দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম স্রানকে তুলনা করতে শুরু করে মোস্তাফিজের সঙ্গে। ভারতের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম জি নিউজের শিরোনাম ছিল এমন, ‘বারিন্দার স্রানের মধ্যেই কি ভারত নিজেদের মোস্তাফিজুর রহমানকে খুঁজে পেল?’

আরও পড়ুন

সেই প্রশ্নের উত্তর এত দিনে পাওয়া গেছে। ‘ভারতের সেই মোস্তাফিজের’ ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে মাত্র ১৩ উইকেটে (ওয়ানডে ৭, টি-টোয়েন্টি ৬)। যা মোস্তাফিজ পেয়েছিলেন ভারতের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের একটি ওয়ানডে সিরিজেই। যদিও শুরুতে স্রানও কিছুটা ঝলক দেখিয়েছিলেন।

২০১৬ সালে আইপিএলে স্রান ও মোস্তাফিজ হায়দরাবাদে খেলেছেন
বিসিসিআই

অভিষেক ম্যাচেই আউট করেছিলেন অ্যারন ফিঞ্চ, ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভ স্মিথকে। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই সিরিজের বাকি দুই ম্যাচে আর উইকেটই পাননি। পরে একই বছরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের সিরিজে পান ৪ উইকেট। টি-টোয়েন্টি দুটোও খেলেছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। স্রানের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার কার্যত সেখানেই।

স্রান ও মোস্তাফিজ আইপিএলে এক দলেও খেলেছেন। ২০১৬ সালে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে একসঙ্গে খেলেছিলেন দুজন। সেই মৌসুমে ১৪ ম্যাচে স্রান উইকেট নেন ১৪টি, ফাইনালে বিরাট কোহলিকেও আউট করেন এই বাঁহাতি। তবে আইপিএল ক্যারিয়ারও স্রানের খুব বেশি এগোয়নি। সব মিলিয়ে খেলেছেন ২৪ ম্যাচ।

অন্যদিকে মোস্তাফিজ এখনো খেলছেন। বাংলাদেশ দলের অন্যতম সেরা বোলার এখনো সেই মোস্তাফিজই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোস্তাফিজের উইকেট ৩২৩টি। আইপিএলে ৬১টি, গত মৌসুমে খেলেছেন চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে। কোথায় আসল মোস্তাফিজ আর কোথায় ‘ভারতের মোস্তাফিজের’ ক্যারিয়ার!

আরও পড়ুন