একটি স্টাম্পের দাম যখন ২৫০০ ডলার
ক্রিকেটে ম্যাচ জয়ের পর অনেকেই স্টাম্প তুলে নেন। জয়ের স্মারক হিসেবে স্টাম্প রেখে দেওয়ার এই প্রথা মোটেও নতুন কিছু নয়। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম নিউজ কর্প-এর দাবি, ক্রিকেটে এই প্রথা চলে আসছে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে। কিন্তু এখন সম্ভবত জয়ের স্মারক হিসেবে ক্রিকেটাররা ম্যাচের স্টাম্প বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলে টাকা খরচ করতে হবে।
সিডনিতে গত বুধবার বিগ ব্যাশের ফাইনালে ব্রিসবেন হিট ৫৪ রানে হারায় সিডনি সিক্সার্সকে। হিটের বাঁহাতি পেসার স্পেনসার জনসন ২৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে হন ম্যাচসেরা। দারুণ বোলিংয়ে দলের জয় নিশ্চিতের পর এসসিজির পিচ থেকে স্টাম্প তুলে নিতে যান জনসন। নিউজ কর্প জানিয়েছে, এ সময় সিক্সার্সের হ্যাট পরা এক অফিশিয়াল বাধা দেন তাঁকে।
বল স্টাম্পে লাগলেই আলো জ্বলে উঠছে—এই স্টাম্পের নাম ‘জিংস’ স্টাম্প এবং তা বিগ ব্যাশ ছাড়া ব্যবহার করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও। জনসন ফাইনাল শেষে একটি জিংস স্টাম্প তুলে নেওয়ার সময় সেই অফিশিয়াল তাঁকে বাধা দিয়ে জানান, প্রতিটি স্টাম্পের দাম ২৫০০ ডলার। এগুলো ক্রিকেট নিউ সাউথ ওয়েলস থেকে ভাড়া করা হয়েছে এবং ফেরত দেওয়ার সময় ‘ফুল সেট’ই (সবগুলো স্টাম্প) দিতে হবে।
জনসন তা মেনে নেন এবং সেখান থেকে একটি স্টাম্প কিনে নিতে চান। তবে স্টাম্পের এই দাম মার্কিন ডলার না অস্ট্রেলিয়ান ডলারে, তা নিশ্চিত করেনি নিউজ কর্প এবং অস্ট্রেলিয়ার আরেক সংবাদমাধ্যম ডেইলি টেলিগ্রাফের লাইভ বিবরণী। যদিও টাকার অঙ্কের পাশে মার্কিন ডলারের চিহ্ন।
ব্রিসবেন টেস্টে আজ তৃতীয় দিনের সরাসরি ধারাবিবরণীতে নিউজ কর্প এ খবর জানিয়েছে। সূত্রের মারফত সেখানে তারা জানিয়েছে, জনসন এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসেছেন। স্টাম্প কীভাবে কেনা যায়, সেটির পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। এ জন্য নাকি কিছু কাগজপত্রের ঝামেলাও মেটাতে হবে!
গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত মেয়েদের বিগ ব্যাশ ফাইনাল শেষে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের পেসার মেগান শুট। ফাইনালে ব্রিসবেন হিটকে ৩ উইকেটে হারানোর পর শুট ক্রিজ থেকে একটি স্টাম্প তুলে নেন।
আয়োজকেরা পরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে স্টাম্প ফেরত চেয়েছেন।
ব্রিসবেন টেস্টেও জিংস স্টাম্প ব্যবহার করা হচ্ছে। গতকাল অস্ট্রেলিয়ার উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স ক্যারি ব্যাটিং করার সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের শামার জোসেফের বল বেলসে লাগলেও তা স্টাম্প থেকে পড়েনি। এ কারণে ক্যারি আউটও হননি। তখন তিনি আউট হলে ৭২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে আরও বিপদে পড়ত অস্ট্রেলিয়া।
কিন্তু ক্যারির দ্রুতলয়ে তোলা ৬৫ রানে ভর করে বিপদ কাটিয়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। স্টাম্প প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ইলেক্ট্রা স্টাম্পের মুখপাত্র নিল ম্যাক্সওয়েল বলেছেন, ক্রিকেটের ঐতিহ্যে যেন আঘাত না লাগে, সেটি নিশ্চিত করে স্টাম্প প্রস্তুত করতে আইসিসিকে স্টাম্প প্রস্তুত করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বসতে হবে।
এ জন্য ধৈর্য ধরতে হবে বলে জানিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল। ভবিষ্যতে স্টাম্পে আলাদা ক্যামেরা, রাডার এবং সেন্সরও থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি, ‘এগুলো বিবর্তনমূলক পণ্য। নইলে আমরা এখনো বাঁকানো ব্যাট এবং মাঝের স্টাম্প ছাড়াই ক্রিকেট খেলতাম। এসব পরিস্থিতির জন্য আমাদের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। তবে আসল বিষয় হলো, যেকোনো ম্যাচে দুই দলের জন্যই পরিস্থিতিটা একইরকম...আইসিসিকে এসব ব্যাপারে মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে।’
সেটি ভবিষ্যতের ব্যাপার। তবে ব্রিসবেন টেস্টে ফল হলে এবং তাতে জয়ী দলের কেউ স্মারক হিসেবে স্টাম্প তুলে নিতে চাইলে কিন্তু বাধার সম্মুখীন হতে পারেন।