৫৯৩ রানের লক্ষ্যে ম্যাচ টাই, হলো না বিশ্ব রেকর্ডও
ম্যাচের শেষ বলে জিততে দরকার ১ রান, হাতে ১ উইকেট। ব্যাটসম্যান জেমি ম্যাকইলরয় রানটা নিতে পারলেই হয়ে যেতেন ইতিহাসের অংশ। প্রথম শ্রেণি তো বটেই, স্বীকৃত ক্রিকেট ইতিহাসেই সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের বিশ্ব রেকর্ড গড়ত তাঁর দল গ্ল্যামরগন।
গ্লস্টারশায়ার পেসার অজিত সিং ডেলের শেষ বলে ম্যাকইলরয় ব্যাটে লাগালেন ঠিকই। কিন্তু তা কানায় লেগে জমা পড়ল উইকেটকিপার জেমস ব্রেসির গ্লাভসে। এক হাতে নেওয়া ক্যাচটি নিতেই ব্রেসির সে কী দৌড়! থামলেন একদম সীমানার কাছাকাছি গিয়ে। ফল—ম্যাচ টাই!
অবিশ্বাস্য ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল রাতে চেলটেনহামের কলেজ গ্রাউন্ডে ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে। যেখানে গ্ল্যামরগনের গৌরবোজ্জ্বল আর গ্লস্টারশায়ারের বিব্রতকর রেকর্ড গড়ার কথা, সেখানে দুই দল মিলে গড়ল সর্বোচ্চ রানে টাই হওয়া ম্যাচের কীর্তি। টাই হওয়া ম্যাচটিতে মোট ১৫৭৮ রান উঠেছে।
গ্ল্যামরগনকে ৫৯৩ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল গ্লস্টারশায়ার। ম্যাচের শেষ বলে গ্ল্যামরগন অলআউট হয় ৫৯২ রানে। ম্যাকইলরয় রান নিতে পারলেই ১৪ বছর আগে হওয়া বিশ্ব রেকর্ডটি ভেঙে যেত।
স্বীকৃত ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটা ভারতের পশ্চিমাঞ্চল দলের। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুলীপ ট্রফির ম্যাচে পশ্চিমাঞ্চলকে ৫৩৬ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল সম্প্রতি অবসরে যাওয়া দিনেশ কার্তিকের দক্ষিণাঞ্চল। ভারতের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে জেতা ইউসুফ পাঠানের অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরিতে লক্ষ্যটা ৩ উইকেট হাতে রেখে টপকে যায় পশ্চিমাঞ্চল।
ঘরের মাঠ চেলটেনহামের কলেজ গ্রাউন্ডে গত রোববার টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল গ্লস্টারশায়ার। বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম দিনে খেলা হয় মাত্র ৪৫.১ ওভার। সেদিন গ্লস্টারশায়ার ৭ উইকেট হারিয়ে তোলে ১৩৩ রান। সোমবার ম্যাচের দ্বিতীয় দিন বেশি দূর এগোতে পারেনি স্বাগতিকেরা। নেদারল্যান্ডসের পেসার টিম ফন ডার গুগটেনের ৫ উইকেটে ১৭৯ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ডের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরের ক্লাবটি।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে গ্ল্যামরগনও খুব একটা ভালো করতে পারেনি। অস্ট্রেলিয়ার পেসার বিউ ওয়েবস্টার ও দক্ষিণ আফ্রিকার দীর্ঘদেহী ফাস্ট বোলার মার্চেন্ট ডি ল্যাঙ্গার দুর্দান্ত বোলিংয়ে অলআউট হয় ১৯৭ রানে; লিড পায় ১৮ রানের।
তবে দ্বিতীয় ইনিংসে দুই দলই অসাধারণ ব্যাটিং করে। ম্যাচের শেষ বলে ক্যাচ নেওয়া উইকেটকিপার ব্রেসির অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরি ও স্যান্ডপেপার গেট কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে নিষেধাজ্ঞা কাটানো অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ক্যামেরন ব্যানক্রফটের ১৮৪ রানের সুবাদে গত মঙ্গলবার ৫ উইকেটে ৬১০ রান তুলে ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করে গ্লস্টারশায়ার।
জয়ের জন্য গ্ল্যামরগনের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৫৯৩ রান। ওয়েলসের ক্লাবটি গত পরশু ম্যাচের তৃতীয় দিনেই ৩ উইকেট হারিয়ে ২২২ রান তুলে ফেলে। গতকাল শেষ দিনে জয়ের জন্য গ্ল্যামরগনের দরকার ছিল ৩৭১ রান, স্বাগতিক গ্লস্টারশায়ারের প্রয়োজন ছিল ৭ উইকেট। আগের দিনের অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যান অধিনায়ক স্যাম নর্থইস্ট ও অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী তারকা মারনাস লাবুশেন বেশ চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন। দুজনই পেয়ে যান সেঞ্চুরির দেখা।
একপর্যায়ে ৬ উইকেটে ৫০৯ রান করে ফেলেছিল গ্ল্যামরগন। এর কিছুক্ষণ আগে ১২৮ বছরের পুরোনো রেকর্ডও ভাঙে দলটি। ৫০৮ রানে পৌঁছাতেই ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম শ্রেণির কোনো ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান তোলার কীর্তি গড়ে গ্ল্যামরগন। আগের সর্বোচ্চ ৫০৭ রান ছিল কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের, লর্ডসে ১৮৯৬ সালে মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) বিপক্ষে।
গ্ল্যামরগন রেকর্ডটি ভাঙার পরপরই ম্যাচটা পেন্ডুলামের মতো দুলতে শুরু করে। অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে অধিনায়ক নর্থইস্ট আউট হলে ম্যাচে ফেরে গ্লস্টারশায়ার। ৫৬১ রানে নবম উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মনে হচ্ছিল ম্যাচ স্বাগতিকদের হাতে মুঠোয়। কারণ, হাতে মাত্র ১ উইকেট নিয়ে আরও ৩২ রান করতে হতো গ্ল্যামরগনকে।
এখান থেকেই খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন ইংল্যান্ডের হয়ে একটি টেস্ট ও দুটি টি–টোয়েন্টি খেলা ম্যাসন ক্রেন। শেষ ব্যাটসম্যান ম্যাকইলরয়কে বুঝেশুনে স্ট্রাইকে পাঠিয়ে এগোতে থাকেন ক্রেন। জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৩২ রানের মধ্যে ক্রেনই করেন ২৬।
ম্যাচের শেষ ওভারে গ্ল্যামরগনের দরকার ছিল মাত্র ২ রান। বোলিংয়ে আসেন অজিত সিং ডেল। স্ট্রাইকে ক্রেনই ছিলেন। প্রথম চার বলের অন্তত দুটিতে রান নেওয়ার সুযোগ থাকলেও ক্রেন নেননি। মানে, টানা চার ডট।
পঞ্চম বলে সিঙ্গেল নিয়ে ক্রেন স্ট্রাইক দেন ম্যাকইলরয়কে। শেষ বলে ব্রেসির অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হওয়ায় সমীকরণটা আর মেলানো হয়নি ম্যাকইলরয়ের। অল্পের জন্য হয়নি সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের বিশ্ব রেকর্ডও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
গ্লস্টারশায়ার: ১৭৯ ও ৬১০/৫ (ডি.)
(ব্রেসি ২০৪*, ব্যানক্রফট ১৮৪, হ্যামন্ড ১২১; ফন ডার গুগটেন ২/৯৮)।
গ্ল্যামরগন: ১৯৭ ও ৫৯২
(নর্থইস্ট ১৮৭, লাবুশেন ১১৯, রুট ৪৬, ক্রেন ৪৩*; টেলর ৩/১২০, ডেল ৩/১২৪)।
ফল: ম্যাচ টাই।