বিপিএলে বিদেশি তারকা ক্রিকেটার বলতে তেমন নেই। তারকা বলতে আছেন ওই একজনই। ধারাভাষ্যকক্ষের কার্টলি অ্যামব্রোস। ৯৮ টেস্টে এই ক্যারিবীয় পেসার নিয়েছেন ৪০৫ উইকেট, ওয়ানডেতে ২২৫। ৬ ফুট ৭ ইঞ্চির এ পেসারের বাউন্সের সঙ্গে ছিল অবিশ্বাস্য গতি আর নিয়ন্ত্রণ।
অবশ্য এত কিছু না বললেও চলছে, কার্টলি অ্যামব্রোস নামটাই তো যথেষ্ট। এমন একজনকে কাছে পেয়ে তাঁর সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ কেই–বা নষ্ট করতে চাইবেন। আড্ডা মানে কী, ওই আড্ডার ছলে কিছু পরামর্শ নিয়ে নেওয়া আর কী!
গতকাল বিপিএলে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিলেট স্ট্রাইকার্স ও ঢাকা ডমিনেটরস ম্যাচ শেষে দেখা গেল এমন দৃশ্য। অ্যামব্রোস কথা বলছেন, হাত নাড়াচ্ছেন, এটা-ওটা বলছেন দুজনকে।
গত কদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাশরাফি বিন মুর্তজার পুরোনো একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ছোটবেলা থেকেই বড় আড্ডাবাজ হওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। তাই স্বাভাবিকভাবেই অ্যামব্রোসের সঙ্গে আড্ডায় তিনি আছেন। আছেন আরও একজন। তিনি তাসকিন আহমেদ। অ্যামব্রোস-মাশরাফির দুজনের কথা মুগ্ধ শ্রোতা হয়ে শুনেছেন তাসকিন। মাঝেমধ্যে এটা–ওটা জিজ্ঞেসও করেছেন।
অনেককেই দেখছি জিমে অনেক সময় ব্যয় করে পেশি তৈরি করছে। কিন্তু ৪ ওভার বল করেই ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রচুর বোলিং করতে হবে, তাহলেই শরীরের সবকিছু একসঙ্গে কাজ করা শুরু করবে
তাসকিন তাঁর পুরো ক্যারিয়ারেই পাশে পেয়েছেন মাশরাফিকে। বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক তাসকিনকে পরামর্শ দিয়ে, পাশে থেকে পথ দেখিয়েছেন। এই আড্ডাতেও হয়েছে তেমনটা। অ্যামব্রোসের সঙ্গে তাসকিনের কথার সুরটা মাশরাফিই ধরিয়ে দিয়েছেন। সেই সুযোগে তাসকিনও পেয়েছেন বলে গতি বাড়ানোর টোটকা।
অ্যামব্রোসের মতে, জিমে গিয়ে নয়, বোলারদের নিজেদের তৈরি করতে হবে বেশি বেশি বল করে আর দৌড়ে , ‘অনেক বোলারকেই দেখছি, জিমে অনেক সময় ব্যয় করে। জিমে যেতে আমি মানা করছি না, জিম তোমাকে শক্তিশালী করবে। কিন্তু মনে রেখো, বডিবিল্ডার হওয়ার চেষ্টা কোরো না। কারণ, একজন পেসার হিসেবে তোমার শরীর নমনীয় রাখতে হবে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, দৌড়ানো আর বেশি বল করা। বেশি দৌড়ালে আর বোলিং করলেই শরীরটা অভ্যস্ত হয়ে যাবে।’
বোলারদের স্প্রিন্টারদের মতো না দৌড়ানোর পরামর্শও দিয়েছেন অ্যামব্রোস, ‘১০ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড়ানো বোলারদের কাজ নয়। তোমার মনযোগ হবে পায়ের পেশি শক্তিশালী করার দিকে। অনেককেই দেখছি জিমে অনেক সময় ব্যয় করে পেশি তৈরি করছে। কিন্তু ৪ ওভার বল করেই ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রচুর বোলিং করতে হবে, তাহলেই শরীরের সবকিছু একসঙ্গে কাজ করা শুরু করবে।’
সব কন্ডিশনে বোলাররা ভালো করতে পারছেন কি না তা দেখেই বোলারদের বিচার করেন অ্যামব্রোস। এই বিচারে লেটার মার্কসই পেয়েছেন তাসকিন। অ্যামব্রোস বলেছেন, তাসকিন সঠিক পথেই আছে, ‘সব জায়গায় পারফর্ম করাটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি ক্রিকেটারদের বিচার করি, তারা সব কন্ডিশনে ভালো করতে পারছে কি না, তা দেখে। কিছু ছেলে আছে, যারা ঘরের মাঠে ভালো খেলে, দেশের বাইরে গিয়ে মানিয়ে নিতে পারে না। গ্রেট ক্রিকেটার হতে হলে তোমাকে সব কন্ডিশনেই টিকে থাকতে হবে। তুমি সঠিক পথেই আছো, তাসকিন।’
অ্যামব্রোস কথা বলেছেন, তাতে তখনকার ক্রিকেট আর এখনকার ক্রিকেটের তুলনা আসবে না, তা কী করে হয়! তুলনা করতে গিয়ে হয়তো একটু হতাশই হয়েছেন এই কিংবদন্তি। কারণটাও অজানা নয়, ওই যে আলোচিত একপেশে ‘ব্যাটসম্যান গেম’, ‘খেলাটা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে, যখন খেলেছি আর এখনকার ক্রিকেটের মধ্যে অনেক পার্থক্য। তখন শুধু টেস্ট আর ওয়ানডে ছিল, টি-টোয়েন্টি ছিল না। নিয়মও অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে ক্রিকেটটা একটি ব্যাটসম্যান গেমে পরিণত হয়ে গেছে। বোলারদের জন্য কাজটা খুবই কঠিন। ক্রিকেটটা ব্যাটসম্যান ও বোলারদের মধ্যে একটি লড়াই হওয়া উচিত।’