ভারতই কি বিশ্বকাপের আসল ‘চোকার্স’
বিশ্বকাপ ফাইনালে গতকাল অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের পর অনেক প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে ভারত। এই হারের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে ভারতের শিরোপাখরা আরও বাড়ল। অথচ সেমিফাইনালসহ টানা ১০ ম্যাচ অপরাজিত থেকে ফাইনালে উঠেছিল ভারত।
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে প্রায় লাখখানেক দর্শকের সামনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬ উইকেটে হেরেছে রোহিত শর্মার দল। ফাইনালে সেভাবে প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি ভারত। আগে ব্যাট করে তোলে মাত্র ২৪০ রান। শুরুতে একটু চাপে পড়লেও ট্রাভিস হেডের শতকে জয় তুলে নিতে অসুবিধা হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। এই হারের পর ভারতের খেলোয়াড়, ভক্ত ও সংবাদকর্মী থেকে প্রায় সবাই স্বাভাবিকভাবেই হতাশ হয়েছেন।
ভারতের ক্রীড়া সংবাদকর্মী আর কৌশিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘এটা অস্বীকার করা যায় না যে সর্বশেষ বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট জয়ের পর ১০ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। সেমিফাইনালের হারগুলো দেখলে ধারাটা বোঝা যায়। সম্ভবত পরিকল্পনাতেই ভুল ছিল। সেটাকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না যে “বড় মঞ্চে তারা পারে না” কিংবা “নির্দিষ্ট দিনে তারা খারাপ খেলেছে”। তবে এটা বলা কঠিন যে মানসিকভাবে তারা স্থবির ছিল।’
২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সর্বশেষ বৈশ্বিক শিরোপা জিতেছিল ভারত। পরের বছর টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে হারে তারা। দুবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেও জিততে পারেনি। আর এবার ঘরের মাঠে রোহিতের দল বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠায় আশায় ছিলেন ভারতের সমর্থকেরা। কিন্তু এবারও হলো না। গত পাঁচ মাসের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয় কোনো ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারল ভারত। এর আগে গত জুনে হেরেছিল টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে। ১৯৮৩ ও ২০১১ বিশ্বকাপজয়ী ভারত ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হেরেছে।
গতকাল নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম থেকে বের হওয়ার পথে বিরাট কোহলির জার্সি পরা আবির সাইনি নামে এক ভক্ত এএফপিকে বলেছেন, ‘ভারতই আসল চোকার্স, নতুন চোকার্স তারা। ভালো খেলে কিন্তু ফাইনালে পারে না।’
সেমিফাইনাল পর্যন্ত প্রতিপক্ষকে বলতে গেলে পাত্তাই দেয়নি ভারত। এ কারণে রোহিত–কোহলিদের নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিল ভারতের ক্রিকেট–পাগল জনতা। কিন্তু হারের পর স্বয়ং ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের কাছেও এর ব্যাখ্যা নেই। ২০২১ থেকে এই বিশ্বকাপ পর্যন্ত ভারতের কোচের দায়িত্ব পাওয়া দ্রাবিড় বলেছেন, ‘(হারের) উত্তরটা জানা থাকলে বলে দিতাম। আমার মনে হয় দিনটাই আমাদের ছিল না। আমরা ভালো খেলিনি।’ দ্রাবিড় নির্দিষ্ট কোনো কারণ বলেননি। তাঁর ভাষ্য, ‘নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই যেটিকে আলাদা করে চিহ্নিত করা যায়। আমরা ভালো ব্যাটও করিনি।’
ভারতের সংবাদমাধ্যম রোহিতদের খেলার প্রশংসা করলেও ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ লিখেছে, ব্যাটিং লাইনআপ লম্বা না থাকার ‘নির্মম শিক্ষা’ পেয়েছে তাঁরা। ভারতের আরেকটি সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ লিখেছে, ‘হতাশা নয়, আসুন ভারতের দলকে নিয়ে আনন্দ করি।’ তবে ফাইনালের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত লড়াইয়ে ভারতের তুলনা চলে না। এ পর্যন্ত আটবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলে ছয়বারই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া।
ইএসপিএনক্রিকইনফোর জেষ্ঠ সম্পাদক ওসমান সামিউদ্দিন এএফপিকে বলেছেন, গতকালের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া ছিল পরিষ্কার ‘আন্ডারডগ’। ভারতের এ দলটি তাঁর চোখে সর্বকালের সেরা (ভারতের)। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার জয়ের কারণ হিসেবে পেসারদের দারুণ বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের প্রশংসা করেছেন সামিউদ্দিন। তিনি লিখেছেন, ‘তারা অস্ট্রেলিয়া বলেই বিশ্বকাপ জিতেছে।’