লিটনের ‘টাইমিং’ই বদলে দিয়েছে রনিকে
রনি তালুকদারের ঘটনাটা ভুলে যাওয়ার কথা নয়। বিপিএলের সময় রংপুর রাইডার্সের অনুশীলনে রনির দিকে আঙুল তুলে কী যেন বলছিলেন শোয়েব মালিক। দূর থেকে দেখে মনে হয়েছিল কড়া কথাই বুঝি শোনাচ্ছিলেন এই পাকিস্তানি তারকা। পরে ওই দৃশ্যের ভিডিও রংপুর রাইডার্সের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এলে দেখা যায় রনিকে শোয়েব বলছিলেন, ‘তুমি আমার চেয়ে বেশি প্রতিভাবান, পার্থক্য শুধু মানসিকতায়।’
ঘরোয়া ক্রিকেটেও সবাই জানেন, রনি মারতে পারেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সঙ্গে তাঁর ব্যাটিংটা যায়। ২০১৫ সালে দেশের হয়ে একমাত্র টি-টোয়েন্টি যখন খেলেছেন, তখনো রনিকে নিয়ে আলোচনাটা ছিল এ রকমই। কিন্তু রনির আলোয় কখনো দেশের একমাত্র ঘরোয়া টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট বিপিএলও আলোকিত হয়নি। দু-একটি ইনিংসে নিজের সামর্থ্যের ঝলক দেখিয়েই শেষ। ২০ ওভারের ক্রিকেটে তাই কখনোই রনিকে নিয়ে সেভাবে আলোচনা হয়নি।
সেই রনি ৩২ বছর বয়সে এসে ধরতে পেরেছেন ২০ ওভারের ব্যাটিংয়ের সুর। গত বিপিএলে রংপুরের হয়ে ১৩ ইনিংসে ১২৯ স্ট্রাইক রেটে ৪২৫ রান করেছেন এই ওপেনার। হয়েছেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। বিপিএলে ভালো করার পুরস্কারও পেলেন আট বছর পর জাতীয় দলে ডাক পেয়ে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলটা তাঁকে রেখেই সাজিয়েছেন নির্বাচকেরা।
শুরুতে যে মানসিকতার কথা বলা হলো, রনিও জাতীয় দলে ফেরার পেছনে সে পরিবর্তনের কথাই বললেন প্রথম আলোকে, ‘এবার বিপিএলে সম্পূর্ণ আলাদা মানসিকতা ছিল। টুর্নামেন্টের আগে অনুশীলন যা করেছি, তাতে আমার ভাবনাটা ছিল অন্যান্যবারের চেয়ে ভিন্ন। সরোয়ার ইমরান স্যার আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন।’
রনির কাছে টি-টোয়েন্টির সংজ্ঞাই ছিল ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং। ক্রিজে নেমেই উড়িয়ে খেলার চেষ্টা করতেন। কিন্তু এবারের বিপিএলে দেখা গেল অন্য রকম রনিকেই। ব্যাটিং করেছেন মস্তিষ্ক কাজে লাগিয়ে, ‘আগে ওপর দিয়ে অনেক শট খেলতাম। কিন্তু পাওয়ারপ্লেতে এখন শুধু টাইমিং ভালো করেই ফল পাচ্ছি। বলটা ৩০ গজের বাইরে নিতে পারলেই চার। পাওয়ারপ্লেতে জোরে মারতে হয় না। কারণ, তখন বল করে সাধারণত পেসাররা। স্পিনাররা বল করলেও সেটা জোরের ওপরে। বোলারের গতি ব্যবহার করে, ফিল্ড সেটআপের সুবিধা নিয়ে খেলার ভালো সুযোগ থাকে। অনুশীলনে টাইমিংয়ের ওপরই বেশি জোর দিয়েছি।’
রনি অবশ্য জানালেন, তাঁর বদলে যাওয়ার পেছনে লিটন দাসেরও একটা প্রভাব আছে, ‘লিটনের খেলা দেখবেন, সে কিন্তু শুধু টাইমিংটা ঠিকঠাক করে। ওর খেলা দেখলে শুধু দেখতেই ইচ্ছা করে। ওকে দেখে অনেক কিছু শেখার আছে। আগে আমি মনে করতাম, টি-টোয়েন্টি মানেই বড় শট খেলা। কিন্তু না, মাথা খাটিয়ে খেললে এমনিতেই এক ওভারে ১২-১৫ রান চলে আসে। শুধু টাইমিং ঠিক থাকলেই...। লিটন তো তা-ই করে।’
রনি নিজেকে নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন নির্বাচকদের একটা কথায়ও, ‘এখন সংস্কৃতিটার পরিবর্তন হচ্ছে। নির্বাচকদের বলতে শুনি পারফরম্যান্সই শেষ কথা। তাদের কথা আমাকে আশাবাদী করেছে। ভালো রান করলে সুযোগ পাব, এমন একটা বিশ্বাস ছিল। ফিটনেস ধরে রাখারও চেষ্টা ছিল।’
জাতীয় দল থেকে একবার ছিটকে গেলেও ফিরে আসার জেদটা ছিল তাঁর মধ্যে। শুধু ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেই জীবন পার করতে চাননি। সেটাও ছিল তাঁর একটা অনুপ্রেরণা, ‘আমার লক্ষ্য ছিল জাতীয় দলে ফেরা। সে জন্যই নিজেকে ফিট রাখার চেষ্টা ছিল। লক্ষ্য না থাকলে আমি গড়পড়তা খেলোয়াড় হয়ে থাকতাম। আমি সেটা চাইনি। আমার মধ্যে ভালো খেলার ইচ্ছা ছিল।’