বিদায়ী উপহার? সে তো বটেই। ওভাল টেস্ট চলার মাঝেই স্টুয়ার্ট ব্রড ঘোষণা দিয়েছিলেন, এই ম্যাচটা খেলেই ক্রিকেট ছাড়বেন। স্বাভাবিকভাবেই ইংল্যান্ড দল এই টেস্টটা জিতে ব্রডকে বিদায়ী উপহারটা দিতে চেয়েছিল। আর সেটাও হলো কী নাটকীয়ভাবে!
অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ উইকেটটি নিয়েছেন ব্রড। অর্থাৎ, পেশাদার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শেষ বলে উইকেট নিয়ে দলকে জেতানোর পাশাপাশি ব্রড নিজেও থামলেন জয় দিয়েই।
ওভাল টেস্টে দুই দলের হিসাব কি ছিল? জিতলে অন্তত সিরিজ ড্রয়ের সান্ত্বনা পাবে ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার সামনে ২০০১ সালের পর প্রথমবার ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জয়ের হাতছানি। অ্যাশেজ সিরিজের ভাগ্য এসে ঠেকেছিল শেষ দিন, শেষ সেশনে। সেখানে ভালোভাবেই ছিল রোমাঞ্চের রসদ। আর সেই রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড জিতেছে।
ওভালে জয়ের জন্য ৩৮৪ রানের লক্ষ্যে কাল ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়া আজ মোট ৩৩৪ রানেই অলআউট হয়েছে। ৪৯ রানের জয়ে ২-২ ব্যবধানে সিরিজ ড্র করল ইংল্যান্ড। ওল্ড ট্রাফোর্ডে বৃষ্টির কারণে চতুর্থ টেস্ট ড্র হয়ে যাওয়ার পরই অবশ্য অ্যাশেজ ধরে রাখা নিশ্চিত করেছিল অস্ট্রেলিয়া।
শেষ দিন সকালের সেশনটা ছিল ইংল্যান্ডের জন্য দুর্দান্ত। আগের দিন অনেক খুঁজেও যে ব্রেকথ্রু পায়নি তারা, দিনের চতুর্থ ওভারেই সেটি এনে দেন ক্রিস ওকস। শেষবারের মতো আরেকবার ডেভিড ওয়ার্নারকে ফেরানো হয়নি স্টুয়ার্ট ব্রডের, অস্ট্রেলিয়ান ওপেনারের উইকেট নেন ওকসই। অনেক দিন ধরেই দুয়ো শুনে আসা ওয়ার্নার অবশ্য ইংল্যান্ডের মাটিতে নিজের শেষ টেস্ট খেলে ফেরার পথে পেয়েছেন ওভালের দর্শকের অভিবাদন। ৬০ রানে আউট হন ওয়ার্নার।
পরের ওভারে এসে ওকস ফেরান আরেক ওপেনার উসমান খাজাকেও, রিভিউ নিলেও এলবিডব্লুর হাত থেকে বাঁচেননি। মারনাস লাবুশেন ও স্টিভেন স্মিথের জুটিও বড় হয়নি। মার্ক উডের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে লাবুশেন ফেরায় ভাঙে সেটি। দিনের প্রথম ঘণ্টাতেই ৩ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ড তখন অনেকটাই এগিয়ে। আর রিকি পন্টিংসহ অস্ট্রেলিয়া সরব আগের দিন বদলানো বল নিয়ে। তৃতীয় দিন বদলানো হয়েছিল বল, তবে সেটি তুলনামূলক বেশ নতুন বলে মনে করছিলেন পন্টিংরা।
বল-বিতর্ক অবশ্য চাপা পড়ে যায় স্টিভ স্মিথ ও ট্রাভিস হেডের পাল্টা আক্রমণে। মধ্যাহ্নবিরতির আগেই দুজনের জুটিতে ফিফটি পেরিয়ে যায়। বিরতির ঠিক আগে আসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। মঈনের বলে স্মিথের গ্লাভসে লেগে ক্যাচ গিয়েছিল লেগ স্লিপে, বেন স্টোকস লাফিয়ে সেটি হাতেও নেন। তবে উদ্যাপন করতে বল ছুড়ে মারতে গেলেই বাধে বিপত্তি, হাঁটুর কাছে লেগে ইংল্যান্ড অধিনায়কের হাত থেকে পড়ে যায় বল। মাঠে নটআউট দেন আম্পায়াররা, রিভিউ নেওয়ার পরও টিকে থাকে সেই সিদ্ধান্ত।
সেই ওভার শেষেই লাঞ্চ, আবার শুরু হয়ে যায় বৃষ্টি। দ্বিতীয় সেশন ভেসে যাওয়ায় চা-বিরতি দিয়ে দেওয়া হয় আগেভাগেই। প্রায় দুই ঘণ্টা পর খেলা শুরুর সময় প্রথমে বলা হয়েছিল, এক সেশনেই ৫২ ওভার হবে। অবশ্য পরে আম্পায়াররা সেটি সংশোধন করে বলেছেন, হতে পারে ৪৭ ওভার।
বিরতির পর থেকে স্মিথকে ঝামেলায় ফেলছিলেন মঈন, যদিও তাঁর প্রথম শিকারে পরিণত হন ট্রাভিস হেড। ৪৩ রান করে হেড স্লিপে ক্যাচ দেন বিশাল টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বলে। প্রায় সাত বছরের মধ্যে চতুর্থ ইনিংসে নিজের প্রথম ফিফটি পূর্ণ করা স্মিথ অবশ্য ছিলেন বেশ ইতিবাচক। কিন্তু ওকসের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে থামতে হয় তাঁকেও। মঈনের বলে মিচেল মার্শের ক্যাচ এরপর দারুণভাবে নেন বেয়ারস্টো, মিচেল স্টার্ককে থামান ওকস।
স্মিথ যখন আউট হলেন অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ৫ উইকেটে ২৭৪। জয় থেকে তখনো অস্ট্রেলিয়া ১১০ রান দূরে। স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে শুধু উইকেটে ছিলেন মিচেল মার্শ। ব্যক্তিগত ৬ রানে মঈনকে মার্শ উইকেট দেওয়ার পর ইংল্যান্ড জয়ের সুবাস পেতে শুরু করে। অ্যালেক্স ক্যারি বাধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। ২৮ রান করে অস্ট্রেলিয়ার শেষ উইকেট হিসেবে আউট হন। তাঁর উইকেটটি নেন ব্রড। পেশাদার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে শেষ বলে উইকেট নিয়ে থামলেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ২৮৩ ও ৩৯৫
অস্ট্রেলিয়া: ২৯৫ ও ৯৪.৪ ওভারে ৩৩৪ (খাজা ৭২, ওয়ার্নার ৬০, স্মিথ ৫৪, হেড ৪৩; ওকস ৪/৫০, মঈন ৩/৭৬, উড ১/৩৪)
ফল: ইংল্যান্ড ৪৯ রানে জয়ী।
সিরিজ: পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ২-২ ব্যবধানে ড্র।