সাকিব-মাহমুদউল্লাহর অবসর ঘোষণা নিয়ে তামিম
ভূমিকা ভিন্ন। কিন্তু বাংলাদেশ দলের ভারত সফরে ভালোভাবেই আছেন তামিম ইকবাল। ধারাভাষ্যকার হিসেবে ভারতে আসা তামিম মাঠে ম্যাচের আগে শো করছেন, ম্যাচের পরও। কাজের ফাঁকে কথা বলছেন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে। এর মধ্যেই আলোচনায় কানপুর টেস্টের সময় ভারতের ক্রীড়া সাময়িকী ‘স্পোর্টস্টার’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার নিয়ে।
যেখানে তাঁর নিজের ফিরে আসার সম্ভাবনা, অবসর–ভাবনা, সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কসহ বাংলাদেশের ক্রিকেটের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। এর বাইরে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল স্থানীয় কোচদের নিয়ে তাঁর মন্তব্যটি।
তিনি বলেছিলেন, ‘প্রধান কোচ হওয়ার মতো যোগ্য কেউ এখন নেই বাংলাদেশে। এখন এমন দু-তিনজন আছেন, যাঁরা সহকারী কোচ হতে পারেন।’
সেই মন্তব্যের একটা ব্যাখ্যা দিতেই আজ দিল্লিতে ভারত সফর কাভার করতে আসা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তামিম। সেখানেও তামিম নতুন কিছু বলেননি। অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে সাংবাদিকদের স্পোর্টস্টারকে বলা কথাটায় অটল থাকার কথাই জানালেন, ‘আমি আমার কথায় একদম অটল। আমি মনে করি, এখনো কেউই প্রস্তুত নয়। কিন্তু দু-তিন বছরের মধ্যে হয়তো হয়ে যাবে।’
পরে তিনি বাংলাদেশ দলের আলোচিত স্থানীয় কোচদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কোচিং করানোর অনীহার কথা তুলে ধরেন, ‘টি-টোয়েন্টি সংস্করণই শুধু নয়, এখানে টেস্ট আছে, ওয়ানডে আছে। আমাদের যাঁরা সিনিয়র কোচ আছেন, তাঁরা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কয়জন কোচিং করান? একজন-দুজনের নাম বলতে পারি। কিন্তু ন্যাশনাল লিগে বা বিসিএলে কয়জন কোচিং করান? ঠিক খেলোয়াড়দের যেভাবে অভিজ্ঞ হতে হয়, কোচদেরও সেভাবে অভিজ্ঞ হওয়া উচিত।’
স্থানীয় কোচদের মধ্যে সর্বশেষ দুটি টাইগার্স ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা বিসিবির কোচ সোহেল ইসলাম গত এক দশকে সবচেয়ে উন্নতি করেছেন বলে মনে করেন তামিম। স্থানীয় কোচদের মধ্যে সোহেলই তাঁর চোখে সেরা।
যেকোনো ক্রিকেটার খেলা যখন ছেড়ে দেবে, এটা দেখতে বা শুনতে অবশ্যই খারাপ লাগবে…। কারণ, আমি অনেক সময় পার করেছি তাদের সঙ্গে।তামিম ইকবাল, ব্যাটসম্যান, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল
ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় থেকেই তামিম দেখেছেন তাঁর অনেক দিনের দুই সতীর্থ সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে। এ নিয়ে তামিম বললেন, ‘যেকোনো ক্রিকেটার খেলা যখন ছেড়ে দেবে, এটা দেখতে বা শুনতে অবশ্যই খারাপ লাগবে…। কারণ, আমি অনেক সময় পার করেছি তাদের সঙ্গে। তবে আমি দুজনের জন্যই অনেক গর্বিত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুজন যা অর্জন করেছে, বাংলাদেশের জন্য তারা যা করেছে...আপনি সারা দিন সমালোচনা করতে পারেন, কিন্তু তাদের অর্জন তাদের কাছ থেকে নিতে পারবেন না। ওরা দুজন বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য যা করেছে, তা অনেক দিন মনে থাকবে।’
অবসরের সঠিক সময় বা মঞ্চ নিয়ে তামিমকে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁর উত্তর, ‘আমার জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ না। আমি নিজের ভেতর থেকে যখন ডাক পাব…আমার মন থেকে যখন ডাক পাব যে নাহ্, এটাই শেষ। তখনই শেষ হবে। এটা দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হোক কিংবা বিশ্বকাপ, সেটা আপনার সিদ্ধান্ত।’
উদাহরণ হিসেবে অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তি অ্যাডাম গিলক্রিস্টের খেলা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার গল্পটা মনে করিয়ে দিলেন, ‘আমি গিলক্রিস্টের একটা কমেন্ট শুনছিলাম (ভারতের বিপক্ষে ক্যাচ ছাড়ার পরই মনে হয়েছে এটাই অবসরের সঠিক সময়)…আপনি হয়তো পরিকল্পনা করতে পারেন ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি কিংবা ২০২৭…কিন্তু আপনি হয়তো আগামীকাল সকালেই টের পাবেন যে আপনার সময় শেষ।’
তবে খেলা ছাড়াটা যে সহজ নয়, সেটাও মনে করিয়ে দিলেন, ‘হ্যাঁ, অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন। তবে একটা জিনিস মনে রাখবেন, খেলা ছাড়া খুব সহজ নয়। তবে সঠিক সময়ে সরে যাওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। একেকজনের একেক রকম চিন্তা। কোনোটাকে ঠিক বা ভুল বলতে পারবেন না।’
গত বছর তামিম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন। এক দিন পর সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে অবসর ভেঙে খেলায় ফেরার ঘোষণা দেন। এরপর দেশের হয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ওয়ানডে খেললেও গত বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলা হয়নি। এর পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেই তামিম।
ধারাভাষ্যকার তামিমের চোখ এখন আসন্ন বিপিএলে, ‘আমি এখন বিপিএলের প্রস্তুতি নেব। আপাতত ধারাভাষ্য করছি। এখন এসব নিয়ে ভাবছি না।’ এবারের বিপিএল আয়োজনও যে চ্যালেঞ্জিং হবে, সে কথাও বলেছেন তামিম, ‘কঠিন তো হবেই। এটা আসলে সবারই মেনে নিতে হবে। একটু কঠিন তো হবেই। আশা করি, ক্রিকেটটা ভালো হোক। এটাই গুরুত্বপূর্ণ যেন মাঠের ক্রিকেটটা ভালো হয়।’