সরকারের কানে কথা পৌঁছাতে স্টোকসদের গাড়ি আটকালেন বিক্ষোভকারীরা
খেলা শুরুর সময় ছিল ১০টা, এর আধা ঘণ্টা আগে টস। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি খেলতে ইংল্যান্ড দল লর্ডসের দিকে রওনা দেয় সকাল আটটার একটু পর। তবে যাত্রাপথে অবরোধের মুখে পড়েন বেন স্টোকসরা। কয়েকজন বিক্ষোভকারী প্ল্যাকার্ড হাতে ধীরলয়ে হেঁটে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে বহন করা বাস আটকে দেন।
কি–না–কি হয় সংশয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরক্তি প্রকাশ করেন জনি বেয়ারস্টো। ইংল্যান্ডের এই উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান থেমে থাকা গাড়ির ভেতর থেকে ছবি তুলে ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে লেখেন, ‘কিছুটা দেরি হয়ে গেলে কিন্তু আমরা দায়ী নই’।
দেরি অবশ্য পরে খুব একটা হয়নি। পুলিশ এসে রাস্তা অবরোধ করা ব্যক্তিদের সরিয়ে দেয়। সময়মতো ইংল্যান্ড দল মাঠে পৌঁছালে নির্ধারিত সময়েই খেলা শুরু হয়।
ইংল্যান্ড–আয়ারল্যান্ড লর্ডস টেস্ট শুরু হতে সমস্যা না হলেও গাড়ি আটকে দিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য কিছুটা হলেও সফল করে তুলতে পেরেছেন বিক্ষোভকারীরা।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে বহন করা বাসটি আটকে দিয়েছিল জাস্ট স্টপ অয়েল নামের একটি জোট। এটি যুক্তরাজ্যের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর জোট, যারা তেল, গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক নতুন প্রকল্পের বিরোধী। গত এপ্রিলের শেষ দিক থেকে প্রতি সপ্তাহের ছয় দিন সকালের দিকে রোড মার্চ করে জাস্ট স্টপ অয়েল।
আজ হাইড পার্ক ও বাটারসি পার্ক সড়কে সকাল সাড়ে আটটায় বিক্ষোভকারীদের সামনে পড়ে ইংল্যান্ড দলের বাস। গাড়ির অবস্থান টের পেয়েও চারজন প্ল্যাকার্ডধারী বিক্ষোভকারী ধীরপায়ে হাঁটতে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ এসে তাঁদের সরিয়ে দেয়।
বিক্ষোভকারীদের একজন ২১ বছর বয়সী অ্যালিস তুলিসিও বিবিসিকে বলেন, ‘আমি আমার ভবিষ্যতের জন্য জাস্ট স্টপ অয়েলের সঙ্গে মার্চ করছি। আমরা যখন জলবায়ু বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে চলছি, তখন যুক্তরাজ্য সরকার শতাধিক তেল, গ্যাস ও কয়লা প্রকল্পে সনদ দিয়ে সেটাকে আরও ত্বরান্বিত করে তুলছে। যেটা শেষ পর্যন্ত আমাদের মৃত্যুর দিকেই ঠেলে দিচ্ছে।’
মার্চের কারণে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের গাড়িসহ অন্যান্য যানবাহন আটকা পড়ছে, তাদের চলার পথ ব্যাহত হচ্ছে—এ বিষয়টি তারা বুঝেশুনেই মার্চ করছেন বলে জানান তুলিসিও, ‘যাঁরা মার্চের কারণে আটকা পড়ছেন, তাঁদের জন্য ব্যাপারটা অবশ্যই হতাশাজনক। তবে সরকারের কানে কথা পৌঁছাতে এটাই আমাদের একমাত্র পথ।’
ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের গাড়ি আটকে দেওয়ার বিষয়টি পরে জাস্ট স্টপ অয়েলের ওয়েবসাইট এবং টুইট অ্যাকাউন্টেও নিশ্চিত করা হয়। টুইটে ক্রিকেটীয় পরিভাষা ব্যবহার করে এমনও লেখা হয়, ‘তারা (ক্রিকেটাররা) ব্যাটিং ধস সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানতে পারে। কিন্তু জলবায়ু–সংকট এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নয়, এটা আমাদের সবচেয়ে বড় টেস্ট।’
ওয়েবসাইটে ফিল গ্রিন নামের ২২ বছর বয়সী এক ছাত্রের বক্তব্য উল্লেখ করা হয়। যেখানে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিহাস দেখতে পাই, ভিন্নমত প্রকাশে এ ধরনের বিঘ্নকারী ঘটনাই সমাজে বড় পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। আমিও চাই না এ ধরনের বিঘ্ন ঘটাতে, কিন্তু সরকার তার কাজ না করলে আমাদের কিছু তো করতেই হবে।’