রোমাঞ্চ ছড়িয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে হ্যারি ব্রুক

আরেকটি সেঞ্চুরি হ্যারি ব্রুকেরএএফপি

ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম দিন শেষে হ্যারি ব্রুকের টেস্ট গড় (১০০.৮৭) ডন ব্র্যাডম্যানের চেয়েও বেশি (৯৯.৯৪)।

ব্রুক খেলছেন ক্যারিয়ারের মাত্র ষষ্ঠ টেস্ট, এটা তাঁর নবম ইনিংস। ব্র্যাডম্যানের গড়টা ৫২ ম্যাচ ও ৮০ ইনিংসে। তুলনাটা তাই হাস্যকরই। কিন্তু ব্র্যাডম্যানের ওই জাদুকরি গড়ের সঙ্গে এভাবে ছাড়া যে আর কারও পক্ষে পাল্লা দেওয়া সম্ভবও না। ৫-৬টা টেস্ট পর্যন্তই শুধু ব্র্যাডম্যানের চেয়ে এগিয়ে থাকা যায়, এরপরে নয়। ব্রুকও এই ইনিংস শেষে যদি ব্র্যাডম্যানের চেয়ে বেশি গড় রাখতে চান, আউট হওয়ার আগে করতে হবে আরও অন্তত ৯২ রান।

ব্রুক সেটি পারবেন কি না, সময় বলবে। তবে ইংল্যান্ডের ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান যা করছেন, তাতে আপনি মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। ষষ্ঠ টেস্টে আজ ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরিটি পেয়ে গেলেন ইয়র্কশায়ারের তরুণ। বেসিন রিজার্ভের সবুজ উইকেটে ২১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল ইংল্যান্ড। সেখান থেকেই ব্রুক খেলেছেন অপরাজিত ১৮৪ রানের ইনিংস, সেটিও ১০৮.৮৭ স্ট্রাইক রেটে! জো রুটের সঙ্গে তাঁর চতুর্থ উইকেট জুটি অবিচ্ছিন্ন ২৯৪ রানে। রুট ১০১ রান করতে খেলেছেন ১৮২ বল।

ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে তাঁর গড়ের তুলনাটা নেহায়েত একটা পরিসংখ্যান। হয়তো ব্রুকের গড়টা এ টেস্টেই নেমে যাবে আবার। তবে একটা ক্ষেত্রে ব্রুক ইতিহাসই গড়েছেন। ক্যারিয়ারের নবম ইনিংসেই তাঁর রান পেরিয়ে গেছে ৮০০, ইতিহাসে আর কোনো ব্যাটসম্যানের যেটি নেই। ক্যারিয়ারের ৯ ইনিংস শেষে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় ব্রুক ছাড়িয়ে গেলেন ভারতের বিনোদ কাম্বলিকে, এ সময়ে যাঁর রান ছিল ৭৯৮। ক্যারিয়ারে প্রথম ৬ টেস্টে ব্রুকের চেয়ে বেশি রান আছে শুধু সুনীল গাভাস্কার (৯১২) ও ডন ব্র্যাডম্যানের (৮৬২)। তবে এ টেস্টে এখনো বাকি ১ ইনিংস। শুধু গাভাস্কার বা ব্র্যাডম্যানের রেকর্ড নয়, দ্রুততম ১ হাজার রানে হারবার্ট সাটক্লিফের (৯ ম্যাচ) রেকর্ডটাও তাই ব্রুকের নাগালেই এখন।

টেস্টে ৯ ইনিংস পর সর্বোচ্চ রান

এখন পর্যন্ত ব্রুকের স্ট্রাইক রেটটাও চমকে ওঠার মতো—৯৯.৩৮। কমপক্ষে ৮০০ রান আছে, টেস্ট ইতিহাসে এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ এটিই। দুইয়ে থাকা শহীদ আফ্রিদির ৮৬.৯৭ স্ট্রাইক রেটকেও ব্রুকের কারণে মনে হতে পারে যোজন যোজন দূর!

আরও পড়ুন

গত সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেকে ১২ রানেই আউট হয়ে গিয়েছিলেন ব্রুক। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে পরের টেস্টেই পেয়ে যান সেঞ্চুরি। সীমিত ওভারে ব্রুকের ব্যাটিং দেখে ফাস্ট বোলার মার্ক উড বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে এবি ডি ভিলিয়ার্সকে একটু হলেও দেখতে পান। তবে টেস্ট ক্রিকেটে ব্রুক যেন ইংলিশদের সামনে এসেছেন আরেক কেভিন পিটারসেন হয়ে। এমন সাবলীল ব্যাটিং, এমন স্ট্রোকপ্লে—বেন স্টোকস ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নতুন ইংল্যান্ডেও যে ব্রুককে চেনা যায় আলাদা করেই।

এমন সাবলীল ব্যাটিং, এমন স্ট্রোকপ্লে—বেন স্টোকস ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নতুন ইংল্যান্ডেও যে ব্রুককে চেনা যায় আলাদা করেই
এএফপি

এর আগের তিনটি সেঞ্চুরিই ব্রুক করেছিলেন পাকিস্তানের মাটিতে। আজকের ইনিংসটিই সবার ওপরে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আমার তা–ই মনে হয়। ম্যাচের পরিস্থিতির কারণেই এমন বলছি আসলে। পাকিস্তানে করা সেঞ্চুরিগুলোও দুর্দান্ত ছিল, মজা পেয়েছি। তবে সবগুলোই ফ্ল্যাট উইকেটে ছিল। আজকের উইকেটটি ফ্ল্যাট নয়। ভালো একটা উইকেট, তবে এমন নয় যে সবদিকেই মারতে পারবেন ইচ্ছা হলেই। অমন একটু করেছি, তবে এটি বেশ ভালো উইকেট আসলে।’

এমন উইকেটেই ব্রুক এখন পর্যন্ত মেরেছেন ২৪ চারের সঙ্গে ৫টি ছক্কা। খেলেছেন উইকেটের চারপাশেই, নিয়ন্ত্রণও ছিল দারুণ। ৫১ বলে ফিফটি, ১০৭ বলে সেঞ্চুরির পর পরের ফিফটি পূর্ণ করতে তাঁর লেগেছে মাত্র ৩৮ বল।

আরও পড়ুন

স্বীকৃত ক্রিকেটে এর আগে কখনোই ডাবল সেঞ্চুরি পাননি, প্রথম শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ১৯৪। বৃষ্টিতে দিনের ২৫ ওভার বাকি থাকতেই খেলা শেষ না হয়ে গেলে হয়তো পেয়ে যেতেন আজই। শুধু ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি নয়, কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের রেকর্ডের দিকেও নজর থাকতে পারে তাঁর। ২০১৪ সালে এ মাঠেই প্রথম কিউই ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছিলেন ম্যাককালাম।

ব্রুকের সেঞ্চুরি নিয়ে নাকি নিজের চেয়ে বেশি রোমাঞ্চিত ছিলেন রুটই (ডানে)
এএফপি

আপাতত অবশ্য কোচকে নয়, ব্রুক ছাড়িয়ে যেতে চান নিজের বাবাকে। ২০০১ সালে বার্লি ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে এয়ারডেল অ্যান্ড হোয়ার্ফডেল লিগে ডেভিড ব্রুক করেছিলেন ২১০ রান। ‘আমার বাবার সর্বোচ্চ ২১০, আমার ১৮৪। আপাতত সেটি নিয়েই ভাবছি আমি। তবে অবশ্যই আমাকে কাল প্রথম বলটা খেলতে হবে দিনের, সেটিই মূল ব্যাপার’—দিনের খেলা শেষে বলেছেন ব্রুক।  

হয়তো বাবার সর্বোচ্চ স্কোর ছাড়িয়ে একটা মেসেজ পাঠাতে পারবেন ব্রুক, হয়তো পারবেন না। তবে তাতে অবশ্য তাঁকে নিয়ে রোমাঞ্চ কমছে না। এর আগেও ব্রুকের আলাদা করে প্রশংসা করেছিলেন স্টোকস ও রুট। দুজনেরই মত—ব্রুক যাবেন অনেক দূর। আজ ব্রুক যেমন বলেছেন, তাঁর সেঞ্চুরি নিয়ে নাকি নিজের চেয়ে বেশি রোমাঞ্চিত ছিলেন রুটই।

ব্রুক যা করছেন, তাতে তাঁকে নিয়ে রোমাঞ্চিত না হয়ে উপায় আছে নাকি!