‘মানুষ’ অ্যান্ডারসনকেও তৈরি করেছে টেস্ট ক্রিকেট
আর একটি টেস্ট। তারপরই অবসর!
লর্ডসে আজ তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড। ৪২ ছুঁই ছুঁই ইংলিশ কিংবদন্তি জেমস অ্যান্ডারসন এ ম্যাচটি খেলেই ইতি টানবেন ক্রিকেট ক্যারিয়ারের।
তার আগে লর্ডসে সংবাদকর্মীদের নিজের আশার কথা শুনিয়েছেন অ্যান্ডারসন। টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি এই পেসারের আশা, ক্রিকেট ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু ‘ডলারের পেছনে না ছুটে’ টেস্টের চ্যালেঞ্জও সাদরে গ্রহণ করবে।
দুই দশকব্যাপী ক্যারিয়ারে এটা হবে অ্যান্ডারসনের ১৮৮তম টেস্ট। শুধু ভারতের কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারই (২০০) অ্যান্ডারসনের চেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছেন। ২০০৩ সালে লর্ডসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক অ্যান্ডারসনের।
এরপর টি–টোয়েন্টির আবির্ভাব ঘটল ও ধীরে ধীরে ক্রিকেটের কাঠামোও পাল্টাতে শুরু হলো। বিশ্বব্যাপী ফ্র্যাঞ্চাইজি টি–টোয়েন্টি লিগ আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে শুরু করল খেলোয়াড়দের কাছে। বিশেষ করে ভারতের আইপিএল। ২০ ওভার সংস্করণের এসব ম্যাচে টেস্ট ও ওয়ানডের চেয়ে কম পরিশ্রমে লোভনীয় অর্থ পান ক্রিকেটাররা। বিশেষ করে পেসারদের জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি টি–টোয়েন্টিতে ওয়ার্কলোডও কম।
কিন্তু অ্যান্ডারসন একটু অন্য ধাতে গড়া মানুষ। তাঁর মতে, টেস্ট ক্রিকেটই তাঁকে এত দূর নিয়ে এসেছে, ‘আমি আজ যেমন মানুষ, সেটার পেছনে টেস্ট ক্রিকেটই কারণ।’ অ্যান্ডারসন এরপর বলে যান, ‘এটা (টেস্ট) বছরের পর বছর আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। অনেক বিষয়ে আমার সহনশীলতা তৈরি করেছে।’
টেস্ট ক্রিকেটে ক্যারিয়ার লম্বা করতে সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ক্যারিয়ার ছোট করেছেন অ্যান্ডারসন। টেস্টে শ্রীলঙ্কার মুত্তিয়া মুরালিধরন (৮০০) এবং অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্নের (৭০৮) পর তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ইংল্যান্ড কিংবদন্তি।
টেস্টের মজাটা অ্যান্ডারসন ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, ‘আমি জানি ৪ ওভার (টি–টোয়েন্টি) বল করে অনেক অর্থ আয় করা যায়। কিন্তু বাউন্ডারিতে ক্যাচ আউটে উইকেট নেওয়া এবং একটি ওভারে ব্যাটসম্যানকে আউট করার পথ বের করার মধ্যে তুলনা করলে আমি ব্যক্তিগতভাবে দুরকম আউটে একই আনন্দ পাব না।’ অ্যান্ডারসন এরপর উঠতি ক্রিকেটারদের প্রতি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আশা করি এখনো পর্যাপ্ত খুদে ও উঠতি ক্রিকেটার আছে, যারা ডলারের পেছনে না ছুটে ওটা (টেস্টের বোলার) হতে চায়।’
গত এপ্রিলে ইংল্যান্ড ক্রিকেটের বড় তিন ‘কর্তা’র সঙ্গে সাক্ষাৎকারের পরেই অবসরের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন অ্যান্ডারসন। সেই তিন বড় ‘কর্তা’ ইংল্যান্ডের ছেলেদের দলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রব কি, লাল বলের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও টেস্ট অধিনায়ক বেন স্টোকস। তাঁরা অ্যান্ডারসনকে জানিয়ে দেন, ২০২৫-২৬ মৌসুমের অ্যাশেজকে সামনে রেখে ইংল্যান্ডের টেস্ট দলটাকে নতুন করে গড়ার চিন্তাভাবনা করছেন।
অ্যান্ডারসন মেনে নিয়েছেন, ক্যারিয়ারের যাত্রাপথে ‘একসময় থামতেই হবে’। বোলিং নিয়ে তাঁর দাবি, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো বোলিং করছেন।’ তাই জানতে চাওয়া হয়েছিল, সুযোগ পেলে খেলা চালিয়ে যেতেন কি না? কিংবদন্তির উত্তর, ‘এটা বলা কঠিন। আমার আর কোনো পথ নেই।’