সিরিজ জয়ের পর শেষ ম্যাচে হবে ‘পরীক্ষা’
অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও কোচ রাসেল ডমিঙ্গো—দুজনের চিন্তা মিলে যাচ্ছে এক বিন্দুতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর ১৬ জুলাইর শেষ ম্যাচটা হোক ‘গবেষণাগার’, যেখানে কিছুটা হলেও খুঁজে বের করার চেষ্টা হবে ভবিষ্যতের ক্রিকেটারদের। ‘পরীক্ষা’ হবে প্রথম দুই ম্যাচে না খেলাদের।
সুযোগটা তৈরি হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের ওয়ানডেগুলো আইসিসি ওডিআই সুপার লিগের অংশ নয় বলে। এই ম্যাচগুলোতে যেহেতু পয়েন্টের কোনো ব্যাপার নেই, সিরিজ জিতে যাওয়ার পর প্রথম দুই ম্যাচে না খেলা ক্রিকেটারদের শেষ ম্যাচে সুযোগ দিয়ে দেখতে চান কোচ, অধিনায়ক দুজনই।
কাল প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে ম্যাচ শেষ দুই ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ ও আতহার আলী খানের সঙ্গে কথোপকথনে রাসেল ডমিঙ্গো বলছিলেন, ‘আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ওয়ানডে খেলেছি, যেগুলোতে পয়েন্টের ব্যাপার ছিল। সে জন্য ইচ্ছা থাকলেও সবাইকে দেখার সুযোগ হয়নি। ২০২৩ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আমাদের অনেককেই দেখার আছে। সিরিজ জিতে যাওয়ার পর যখন পয়েন্টের ব্যাপার নেই এ রকম ম্যাচ সামনে আসে, সেটা অন্যদের দেখার বড় একটা সুযোগ। ’
ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে একই ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে অধিনায়ক তামিমের কথায়ও, ‘আমাদের সুযোগ আছে একাদশের বাইরের খেলোয়াড়দের দেখার। পয়েন্টের খেলা হলে সুযোগটা থাকে না। সিরিজ নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় আমি মনে করি, এখন অন্যদের সুযোগ দেওয়া উচিত। এ জন্য আমাকেও যদি এক–দুটি ম্যাচ না খেলতে হয়, সেটাও হতে পারে। এখন যদি বেঞ্চের শক্তি না দেখি, তাহলে দেখব কখন? তা ছাড়া হঠাৎ কেউ চোটে পড়লে হুট করে অন্য কাউকে দলে আনা কঠিন হয়। পরের ম্যাচে হয়তো এ রকম কোনো পরিবর্তন দেখতেও পারেন।’
সেটি হলে শেষ ম্যাচে হয়তো সুযোগ হবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পারফরম্যান্স দিয়ে আট বছর পর জাতীয় দলে ফেরা টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান এনামুল হক বিজয়ের। আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার শেষ ম্যাচে এ রকম আরও কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষাও হয়তো করবে বাংলাদেশ দল।
তাতে সাফল্য–ব্যর্থতা যা–ই আসুক, তামিমের দল সিরিজ জয়ের উৎসব করে ফেলেছে কালই। ম্যাচ শেষে প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমের সামনের আবহটা অন্তত সেরকমই ছিল। সতীর্থদের নিয়ে তাসকিন আহমেদের তোলা সে মুহূর্তের একটা সেলফি ভাইরাল হতেও সময় লাগেনি। সিরিজ জয়ের উৎসব আপাতত শেষ হয়েছে কাল রাতে জর্জটাউনের মেইন স্ট্রিটের এক রেস্তোরাঁয় দলের সবাই মিলে নৈশভোজ করে।
টি–টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যত ভালো, ওয়ানডে সিরিজটা যেন ততই বাজে খেলল তারা। তাই বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ জিতবেই, এমন নিশ্চয়তা সিরিজ শুরুর আগেও ছিল না। বরং টেস্ট আর টি–টোয়েন্টি সিরিজে হারের হতাশা ওয়ানডেতেও দলটাকে পেছন থেকে টেনে ধরে কি না, সেই শঙ্কা ছিল। এক ম্যাচ হাতে রেখে দাপুটে সিরিজ জয়ে তামিমের দল উড়িয়ে দিয়েছে সব শঙ্কা।
তামিমের কাছে অবশ্য অস্ট্রেলিয়াকে হারানো যা, এই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোও তা। ম্যাচ শেষে দলের খেলোয়াড়দের উদ্যাপনটা তাই স্বাভাবিকই মনে হয়েছে তাঁর কাছে। প্রভিডেন্সে ম্যাচ শেষে বলছিলেন, ‘যার সঙ্গেই জিতি না কেন, আমাদের কিন্তু প্রচণ্ড কষ্ট করেই জিততে হয়। সব জয়ই বিশেষ কিছু। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে জিতলে যে রকম উদ্যাপন করি, জিম্বাবুয়ের সঙ্গে জিতলেও তাই হওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কেউ আপনাকে এমনি এমনি জিততে দেবে না।’
তামিমের আনন্দটা বেশি হওয়ার একটা কারণ, ওয়ানডে সিরিজটা তিনি খেলেছেন নিয়মিত দলের তিন খেলোয়াড়কে ছাড়াই। ব্যক্তিগত কারণে ছুটি নিয়ে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম এই সিরিজে অনুপস্থিত। আর চোটে পড়ে আরও আগেই দেশে ফিরে গেছেন ইয়াসির আলী।
তামিম বলছিলেন, ‘সেরা একাদশের তিনজন খেলোয়াড় (সাকিব, মুশফিক, ইয়াসির) না থাকলে দলের আত্মবিশ্বাস এমনিতেই কমে যায়। কিন্তু আমাদের দল সেটা বুঝতেই দেয়নি। সবাই জেতার জন্য ক্ষুধার্ত ছিল। টেস্ট, টি–টোয়েন্টিতে চেষ্টা করেও যখন ফল পক্ষে আসেনি, ওয়ানডেতে আমরা সবসময় চেষ্টা করেছি জিততে। এখান থেকে অন্তত কিছু একটা নিয়ে যেতে।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের টানা দশম ওয়ানডে জয় এবং টানা চতুর্থ ওয়ানডে সিরিজ জয়ও। তামিমের নেতৃত্বে সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম সিরিজ জয়ের সাফল্য। কিন্তু যে ক্রিকেটাররা টেস্ট, টি–টোয়েন্টিতে শুধু হতাশাই বিলিয়ে যাচ্ছেন, ৫০ ওভারের ক্রিকেটে তাঁরাই বদলে যাচ্ছেন কোন যাদুবলে!
ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম এর একটাই কারণ দেখেন—৫০ ওভারের ম্যাচ তুলনামূলকভাবে বেশি খেলা। সঙ্গে বলেছেন, এই সংস্করণে বাংলাদেশ সাফল্য পায়, এই বিশ্বাসটাও খেলোয়াড়দের ওয়ানডেতে বাড়তি প্রেরণা দেয়। ‘এই খেলায় আমরা বেশি স্বস্তিতে থাকি। অনেক ম্যাচও খেলেছি আমরা। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগই সবচেয়ে প্রতদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, সেটা একটা কারণ হতে পারে। আর যখন ফল পক্ষে আসে, তখন দলের পরিবেশটাই থাকে অন্য রকম।’
শেষ ম্যাচে ‘ডাগআউটের’ খেলোয়াড়দের নামিয়েও তাই ভালো কিছুর আশা করাই যায়। প্রথম দুই ম্যাচে না খেলুন, সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাসের রেণু তো ড্রেসিংরুমে তাঁদেরও ছুঁয়ে গেছে। এখন শুধু সাফল্যের ব্যাটনটা হাতে নিয়ে সামনে ছুটে চলা। তাতে সাফল্য এলে ভালো, না এলেও সমস্যা নেই। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ এমন একটা সিরিজ তো পেল, ভবিষ্যতের কথা ভেবে যার শেষ দৃশ্যে যা ইচ্ছে তা করা যায়!