রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা ধোনির চেন্নাইয়ের
আইপিএল ফাইনাল তাহলে কয়দিন ধরে হলো?
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে ফাইনাল দেখতে দেখতে এই প্রশ্নটা মাথায় উদয় হতে পারে। ফাইনাল হওয়ার কথা ছিল কাল। বৃষ্টির কারণে সেটি আজ রিজার্ভ ডে-তে নিয়ে আসা হয়। গুজরাট টাইটানস টস হেরে আগে ব্যাট করে ৪ উইকেটে ২১৪ রান তোলার পর তাড়া করতে নেমেছিল চেন্নাই সুপার কিংস।
দুই ওপেনার ৩ বল খেলে ৪ রান তোলার পর আবারও হানা দেয় বৃষ্টি। প্রায় আড়াই ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকায় ম্যাচ বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী সোমবার টপকে মঙ্গলবার রাতেরও অনেকাংশ পেরিয়ে যায়। অর্থাৎ দিনের হিসেবে তিন দিন—রোববারের ম্যাচ শেষ হলো মঙ্গলবার! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে তাই মজা করে লিখেছেন, কিছু টেস্ট ম্যাচও তো এর চেয়ে কম সময়ে শেষ হয়!
সে যাই হোক, ফাইনালে শেষ পর্যন্ত শিরোপার নিষ্পত্তি হয়েছে চেন্নাইয়ের ইনিংসে ওভার কেটে। ডিএলএস নিয়মে মহেন্দ্র সিং ধোনির দলের সামনে জয়ের জন্য নতুন লক্ষ্য ঠিক হয় ১৫ ওভারে করতে ১৭১ রান। সে লক্ষ্যের পিছু ছুটে শেষ পর্যন্ত ডিএলএস নিয়মে শেষ বলে ৫ উইকেটের দুর্দান্ত জয় তুলে নিয়েছে চেন্নাই। শেষ ওভারে ১৩ রানের লক্ষ্য পূরণ করে আইপিএলে পঞ্চমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলো মহেন্দ্র সিং ধোনির দল।
চেন্নাইয়ের ওভার কাটায় গুজরাটের বোলারদের ওভারসীমাও কমে আসে। সর্বোচ্চ ৩ ওভার বল করার সীমা বেঁধে দেওয়া হয় গুজরাটের বোলারদের। আর পাওয়ার প্লে নির্ধারিত হয় ৪ ওভারের। চেন্নাইয়ের দুই ওপেনার রুতুরাজ গায়কোয়াড় ও ডেভন কনওয়ে পাওয়ার প্লের ৪ ওভারে ৫২ রান তুলে শুরুটা বেশ ভালোই করেছিলেন। ১৬ বলে ২৬ রান করা গায়কোয়াড়কে ৭ম ওভারে গিয়ে হারায় চেন্নাই।
বাঁহাতি ‘চায়নাম্যান’ স্পিনার নুর আহমদকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন গায়কোয়াড়। মাঝে ২ বল পর কনওয়েও ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন। ২ ছক্কা ও ৪ চারে ২৫ বলে ৪৭ রান করা কনওয়ে আরও কিছুক্ষণ থাকলে চেন্নাইয়ের বল আর রানের ব্যবধান শেষ দিকে আরেকটু কমতে পারত। কিন্তু নুর আহমদ এক ওভারে দুই ওপেনারকে তুলে নিয়ে চেন্নাইকে চাপে ফেলেন।
চাপ কাটিয়ে উঠতে চেন্নাইকে দ্রুত রান তোলার পাশাপাশি জুটিও গড়তে হতো। তৃতীয় উইকেটে শিবম দুবেকে নিয়ে অজিঙ্কা রাহানে সেই চেষ্টাই করছিলেন। জশ লিটলের করা ৮ম ওভারে ২ ছক্কায় পাল্টা লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন রাহানে। জয়ের জন্য শেষ ৫ ওভারে ৫৯ রান দরকার ছিল চেন্নাইয়ের। এমন পরিস্থিতিতে ১১তম ওভারে ক্যাচ তুলে আউট হন রাহানে। ২ ছক্কা ও ২ চারে ১৩ বলে ২৭ রান করা রাহানে আউট হওয়ার পর জয়টা অনেক দূরের বন্দর মনে হচ্ছিল চেন্নাইয়ের জন্য।
আম্বাতি রাইড়ুকে নিয়ে শেষ ৪ ওভারে ৫৪ রান তাড়ার করার চ্যালেঞ্জে নামেন শিবম দুবে। রশিদ খানের করা ১২তম ওভারে ২ ছক্কাসহ ১৫ রান তুলে ম্যাচটা জমিয়ে তোলেন দুবে। ৩ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে উইকেটশূন্য রশিদ খান হতাশ করেছেন গুজরাটের সমর্থকদের। জয়ের জন্য চেন্নাইয়ের লক্ষ্য ১৮ বলে ৩৯ রানে নেমে আসায় ম্যাচে ছিল দুই দলই।
১৩তম ওভারে মোহিত শর্মার প্রথম তিন বল থেকে ১৬ রান তুলে রাইড়ু চেন্নাইয়ের জন্য ম্যাচটা সহজ করে তুললেও পরের বলে আউট হন। অধিনায়ক ধোনিও (০) পরের বলে ক্যাচ তুলে আউট হওয়ায় ম্যাচ আবারও গুজরাটের দিকে হেলে পড়ে। কিন্তু দুবে ও রবীন্দ্র জাদেজা ক্রিজে থাকায় চেন্নাইয়ের জয়ের সুযোগ তখনো ছিল। ১২ বলে ২১ রানের দূরত্ব—এই পরিস্থিতিতে চেন্নাইকে আটকাতে ১৪তম ওভারটি করতে আসেন গুজরাট পেসার মোহাম্মদ শামি। তিনি ৮ রান দেওয়ায় শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৩ রান দরকার ছিল চেন্নাইয়ের।
গুজরাটের হয়ে শেষ ওভারটি করেন মোহিত শর্মা। দুবে ও জাদেজাকে প্রথম ৪ বল পর্যন্ত কোনো বাউন্ডারি না দিলেও পঞ্চম বলে তাঁকে ছক্কা মারেন জাদেজা। এতে জয়ের জন্য শেষ বলে লক্ষ্য নেমে আসে মাত্র ৪ রানে। মোহিতের শেষ বলটি জাদেজার প্যাডে ছিল, ব্যাটে খেলে লেগে ফাইন লেগ দিয়ে বাউন্ডারি মেরে জয়ের উদ্যাপনে মেতে ওঠেন জাদেজা। চ্যাম্পিয়ন!
২১ বলে ৩২ রানে অপরাজিত ছিলেন দুবে। ৬ বলে ১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন জাদেজা। গুজরাটের হয়ে ৩৬ রানে ৩ উইকেট নেন মোহিত শর্মা।
এর আগে গুজরাট দুইশোর্ধ্ব রানের সংগ্রহ পেয়েছে প্রথম চার ব্যাটসম্যানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে। ৭ম ওভারে শুবমান গিল আউট হওয়ার আগে ওপেনিং জুটিতে ৬৭ রান পেয়েছে গুজরাট। বিপজ্জনক গিলকে ৫ম ওভারে ক্যাচ ছেড়ে ‘জীবন’ দিয়েছিলেন চেন্নাইয়ের দীপক চাহার। ২০ বলে ৩৯ রান করা গিল সুযোগটা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারেননি। রবীন্দ্র জাদেজার বলে চেন্নাইয়ের অধিনায়ক ধোনির দুর্দান্ত স্টাম্পিংয়ের শিকার হন গিল।
আইপিএলে নিজের ২৫০তম ম্যাচ খেলতে নেমে টি-টোয়েন্টিতে ৩০০তম ডিসমিসাল পেয়ে যান ধোনি। দ্বিতীয় উইকেটে ৪২ বলে ৬৪ রানের জুটি গড়েন ঋদ্ধিমান সাহা ও সাই সুদর্শন। ৩৯ বলে ৫৪ রান করা ঋদ্ধিকে তুলে নেন চাহার। কিন্তু সাই সুদর্শনকে থামানো যাচ্ছিল না। অধিনায়ক পাণ্ডিয়াকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ৩৩ বলে ৮১ রানে ঝোড়ো জুটি গড়েন সুদর্শন—যেখানে সুদর্শনের অবদান ২২ বলে ৬০ আর পাণ্ডিয়ার ১১ বলে ২১। ৬ ছক্কা ও ৮ চারে ৪৭ বলে ৯৬ রান করা সুদর্শন শেষ ওভারে আউট হয়ে সেঞ্চুরিবঞ্চিত হন। ১২ বলে ২১ রানে অপরাজিত ছিলেন পাণ্ডিয়া। চেন্নাইয়ের হয়ে ৪৪ রানে ২ উইকেট নেন মাথিশা পাথিরানা। ১টি করে উইকেট জাদেজা ও চাহারের।