কোহলি–ডি ভিলিয়ার্স জীবন বাঁচাতে যাঁকে দিয়ে বল করাবেন
বিরাট কোহলি ও এবি ডি ভিলিয়ার্স—ক্রিকেটের দুই সেরা ব্যাটসম্যান। আইপিএলে দুজন যতটা সতীর্থ ছিলেন, বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন তার চেয়েও বেশি। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে সেই দিনগুলো নিশ্চয়ই মনে পড়ে কোহলির। ২০২১ সালের নভেম্বরে ডি ভিলিয়ার্স সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর মাঠে অন্তত তাঁর সতীর্থ হওয়ার সুযোগ নেই কোহলির।
কিন্তু বন্ধুত্ব, সে তো জীবনের অংশ। ডি ভিলিয়ার্স সেই বন্ধুত্বেরই ডাক দিয়েছিলেন কোহলিকে। ইউটিউবে আড্ডাসুলভ মজার আলাপচারিতার অনুষ্ঠান ‘৩৬০ শো’-তে ডেকেছিলেন ভারতের তারকাকে। সেখানেই আড্ডা জমে উঠেছিল দুজনের।
কাল ইউটিউবে ‘থ্রি সিক্সটি’ চ্যানেলে দুই তারকার আড্ডার ভিডিও প্রকাশ করা হয়। এক সঞ্চালকের উপস্থিতিতে ‘কুইক সিঙ্গেলস’ প্রশ্নোত্তরে দুই তারকার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারে তাঁদের দেখা দ্রুততম ও সবচেয়ে বাজে ‘রানার’ কে?
শর্ত ছিল, এ প্রশ্নের উত্তরে দুই বন্ধু কেউ কারও নাম নিতে পারবেন না। কোহলি এ প্রশ্নের উত্তরে দ্রুততম রানার হিসেবে বেছে নিয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। আর ডি ভিলিয়ার্স বলেছেন ফাফ ডু প্লেসির নাম।
শুধু তা–ই নয়, নিজের জীবন বাঁচাতে কাউকে দিয়ে বল করাতে হলে কাকে বেছে নেবেন—এ প্রশ্নের উত্তরে কোহলির পছন্দ দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পেসার ডেল স্টেইন এবং ডি ভিলিয়ার্সের পছন্দ পাকিস্তানের সাবেক পেসার মোহাম্মদ আসিফ।
তবে কোহলি কিন্তু কৌশলে ডি ভিলিয়ার্সের নাম নিয়েছেন, ‘এটা কোনো প্রশ্নই হলো না। এ প্রশ্ন আমাকে আগেও করা হয়েছে। উইকেটে যাদের সঙ্গে (রান নিতে) দৌড়েছি, তাদের মধ্যে এবি ডি ভিলিয়ার্স দ্রুততার দিক থেকে বাকিদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। আরেকজন আছেন, যাঁর সঙ্গে আমার এ বোঝাপড়াটা খুব ভালো। তিনি মহেন্দ্র সিং ধোনি। তবে উইকেটে দৌড়ানোর সময় তাদের গতি কত, তা তো বলতে পারব না। কিন্তু তার (ডি ভিলিয়ার্স) এবং ধোনির সঙ্গে আমাকে (রান নিতে) কলও করতে হয় না।’
একই প্রশ্নের উত্তরে ডি ভিলিয়ার্স বলেছেন, ‘আমি তো ধোনির সঙ্গে কখনো খেলিনি। তবে অবশ্যই ফাফ ডু প্লেসি।’ ডি ভিলিয়ার্স এরপর আর কথা বাড়াননি। হেসে ফেলেন।
সঞ্চালক এরপর কোহলির কাছে জানতে চান, ক্যারিয়ারে খেলার সেরা পরিবেশটা পেয়েছেন কোন টুর্নামেন্টে?
কোহলি এ নিয়ে একাধিক টুর্নামেন্ট সামনে টেনে আনেন, ‘২০১৬ আইপিএলের ফাইনাল খুব বিশেষ দিন ছিল। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। তবে এর ওপরে থাকবে ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনাল। অবিশ্বাস্য পরিবেশ ছিল। তবে এখন পর্যন্ত এমসিজিতে ২৩ অক্টোবর পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটাই সেরা। প্রায় ৯০ হাজার লোকের সামনে ওই রাতটা অন্য রকম ছিল। অভিজ্ঞতাটা খেলা ছাপিয়ে গিয়েছিল। আগে কখনো এমন রাতের অভিজ্ঞতা হয়নি।’
কোহলি যখন কথাগুলো বলছিলেন, পাশের স্ক্রিনে ডি ভিলিয়ার্স মিটিমিটি হাসছিলেন। ২০১৬ আইপিএল ফাইনালে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ২০৮ রান তাড়া করতে নেমে ৮ রানে হেরেছিল কোহলি ও ডি ভিলিয়ার্সের বেঙ্গালুরু। কোহলি ৫৪ রান করলেও সে ম্যাচে মাত্র ৫ রান করেছিলেন ডি ভিলিয়ার্স।
আর কোহলি গত ২৩ অক্টোবর পাকিস্তানের বিপক্ষে যে ম্যাচের কথা বলেছেন, সেটি অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচ, যেখানে কোহলির ৫৩ বলে অপরাজিত ৮২ রানের ইনিংসে পাকিস্তানকে ৪ উইকেটে হারিয়েছিল ভারত।
ডি ভিলিয়ার্স তাঁর ক্যারিয়ারে খেলার সেরা পরিবেশটা পেয়েছিলেন কোথায়, কোন ম্যাচে?
ওয়ানডেতে ৩১ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়া ডি ভিলিয়ার্স স্মরণ করেছেন ২০১৫ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইডেন পার্কে নিউজিল্যান্ডের কাছে ডি/এল নিয়মে ৪ উইকেটে হেরে যাওয়া সেই ম্যাচকে, ‘মনে আছে (ইডেন পার্কে) সবাই ওটাকে ড্রেসিংরুম বললেও আসলে ভূগর্ভস্থ কারাগারের মতো মনে হয়। কারণ, চারপাশ আটকানো এবং স্টেডিয়ামের একটু তলার দিকে অবস্থিত। কিছুই দেখা যায় না, শুধু একটা টিভি ছিল। দর্শকেরা তুমুল কোলাহল করছিল। আমার ভাগ্য ভালো যে প্রথম বলটা খেলতে হয়নি। আমলা ও ডি কক সে কাজ সেরেছে। আমি নেমেছিলাম চারে। কিন্তু তার আগে প্রচণ্ড স্নায়ুচাপে ভুগেছি, বাথরুমেও যেতে হয়েছে। ২০১৫ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালটা মনে থাকবে।’
সঞ্চালক এরপর স্লেজিংয়ের প্রসঙ্গ তোলেন। ডি ভিলিয়ার্সের কাছে জানতে চান, কার খোঁচা এখনো মনে আছে?
ডি ভিলিয়ার্সের উত্তর, ‘আমি ওই ঘটনাটা কখনো ভুলতে পারব না। কিংসমিডে ভারতের বিপক্ষে খেলছিলাম। সেদিন সবকিছুই খুব ভালোভাবে সামলাতে পারছিলাম। লাঞ্চের আগে তিন বল বাকি ছিল। প্রথম দুটি পার করার পর শেষ বলটি (হাতের কবজি দেখিয়ে) গ্লাভস ছুঁয়ে চলে যায়। আউট! মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী আমার ওপর ভেঙে পড়েছে। যাওয়ার সময় পাশ থেকে কেউ একজন চোখে চোখ রাখল, জহির খান! সে বলল, “ইটস আ ফানি ওল্ড গেম এবি, ইজন্ট ইট?” আমি এটা কখনো ভুলব না। যতবার জহিরের সঙ্গে দেখা হয়েছে, ততবারই কথাটা বলেছি “ইটস আ ফানি ওল্ড গেম ম্যান।”’
ডি ভিলিয়ার্সের কথা শুনে কোহলি হাসি ঠেকাতে পারেননি। সে মুহূর্তে সঞ্চালকও মজা করেন। কোহলিকে বলেন, বিরাট দয়া করে এবিকে বুঝিয়ে বলুন ‘কুইক সিঙ্গেলস’বিষয়টি কি। সে তো অনেক বড় করে উত্তর দিচ্ছে!
এরপর কোহলির কাছে সঞ্চালক জানতে চান জীবনের জন্য বল করতে হলে কাকে বেছে নেবেন? কোহলির এক কথার উত্তর, ‘ডেল স্টেইন।’ডি ভিলিয়ার্স এক শব্দে উত্তর দিতে পারেননি, ‘আমি দেশের বাইরের বোলার বেছে নেব। মোহাম্মদ আসিফকে বেছে নেবে আমি। নতুন বলে তাকে খেলা অসম্ভব।’
দুই কিংবদন্তির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, লর্ডসে টেস্ট নাকি এমসিজিতে বক্সিং ডে টেস্ট-খেলার জন্য কোনটা বেছে নেবেন? কোহলির পছন্দ এমসিজিতে বক্সিং ডে টেস্ট।
ডি ভিলিয়ার্স এবারও অল্প কথায় সারতে পারলেন না, ‘মাঠ বেছে নিতে বলা হলে আমি লর্ডসকেই বেছে নেব, গ্যালারিভর্তি দর্শকসহ।’সঞ্চালক এরপর শেষ প্রশ্ন হিসেবে জানতে চান, তাঁদের ক্যারিয়ারে দেখা সবচেয়ে বাজে ‘রানার’কে?
কোহলি স্মিত হেসে বলেছেন, ‘এটা তো বিতর্ক ছড়াবে। চেতেশ্বর পূজারা।’ডি ভিলিয়ার্স সেরা রানার হিসেবে ফাফ ডু প্লেসির কথা বললেও সবচেয়ে বাজে হিসেবেও তাঁকেই বেছে নেন, ‘সম্ভবত আমি তার সঙ্গে ৭ বার রান আউট হয়েছি। ফাফের সঙ্গে কয়েকবার বোঝাপড়ার সমস্যাও হয়েছে।’