প্রথমবার বাংলাদেশে, প্রথমবার অধিনায়ক—নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে যা বললেন ফার্গুসন
লকি ফার্গুসনের কাছে সবকিছুই যেন নতুন। নিউজিল্যান্ডকে এর আগে কখনো নেতৃত্ব দেননি, অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতাই সে অর্থে নেই এ ফাস্ট বোলারের। এর আগে কখনো খেলেননি বাংলাদেশেও। এত জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলন যে এর আগে করেননি, সেটিও বলাই যায়।
দেশের মাটিতে সিরিজ, প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড—বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের আগ্রহ স্বাভাবিকভাবেই অনেক। সঙ্গে থাকা মিডিয়া ম্যানেজার তো ছবিও তুলে রাখলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য।
ফার্গুসনের কাছে নতুন এ তথ্যটাও—বাংলাদেশকে তাদের মাটিতে নিউজিল্যান্ড সর্বশেষ ওয়ানডেতে হারিয়েছে ২০০৮ সালে। ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডকে ধবলধোলাইয়ের সে সিরিজেই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ‘বাংলাওয়াশ’ নামের এক শব্দ।
২০১৩ সালে আরেকটি সিরিজ খেলতে এসেও ওই ধবলধোলাই-ই হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। গত ১০ বছরে অবশ্য দুই দল খেলেছে আরও তিনটি ওয়ানডে সিরিজ, একটি ম্যাচও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সব কটিই যে হয়েছে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে।
দুই দলের লড়াইয়ে তাই আপাতত এই উপসংহারে পৌঁছানোই যায়, যার যার দেশে ‘অজেয়’ দুই দলই। ফার্গুসন এ তথ্যটা আগে থেকে না জানলেও এ সিরিজের চ্যালেঞ্জটা অবশ্য জানেন ঠিকই। সিরিজ শুরুর আগের সংবাদ সম্মেলনে যেমন বললেন, ‘দেখুন, প্রতিটি সিরিজই আমরা জয়ের জন্য খেলি। বাংলাদেশ তাদের কন্ডিশনে খুবই ভালো, আমাদের জন্য এখানে বিশাল এক চ্যালেঞ্জ।’
তবে নতুন আরেকটি সিরিজ মানে নতুন করে শুরুর সুযোগ, ফার্গুসন জানেন সেটিও। নিউজিল্যান্ডের নতুন অধিনায়ককে আশা জোগাচ্ছে সেটিই, ‘আমরা জানি, প্রথম ম্যাচের প্রথম বল দিয়েই শুরু হবে সব। ফলে আগামীকাল কী আসছে—সেটির দিকে নজর দেওয়া, কন্ডিশনের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। আর আমরা যারা আগে খেলিনি এখানে, আমাদের আরও দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে।’
স্বাভাবিকভাবেই যাঁরা আগে খেলেছেন বা এই কন্ডিশন চেনেন, তাঁরা সহায়তা করছেন ফার্গুসনদের। এ ক্ষেত্রে ঘুরেফিরেই এল কিউইদের বোলিং কোচ শেন জার্গেনসনের কথা। যিনি একসময় বাংলাদেশের প্রধান কোচের দায়িত্বও পালন করেছেন।
ফার্গুসন যেমন বললেন, ‘তবে যারা এখানে এসেছে আগে, তাদের জানাশোনার ওপর অবলম্বন করছি। (বিশেষ করে) জার্গোর (জার্গেনসন) ওপর, যে জানে এখানে কীভাবে ম্যাচ জয়ের জন্য ব্যাটিংয়ে ইনিংস গড়তে হয়, এরপর বোলিংয়ে ডিফেন্ড করতে হয়। অথবা এর উল্টোটা। তবে হ্যাঁ, বড় একটা চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে। আশা করি যা বললেন (বাংলাদেশে জিততে না পারা), তার চেয়ে ভালো করব।’
নিউজিল্যান্ড সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরে এসেছিল ২০২১ সালে। সেবার পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছিল তারা, নিয়মিত অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসনের বদলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন টম ল্যাথাম। উইলিয়ামসন, ল্যাথাম বা টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক টিম সাউদি—এ সিরিজে কেউই নেই। অধিনায়কত্বের ভার তাই এসে পড়েছে ফার্গুসনের ওপর। কাইল মিলস, গেভিন লারসেন ও সাউদির পর চতুর্থ বিশেষজ্ঞ পেসার হিসেবে ওয়ানডেতে কিউইদের অধিনায়কত্ব করবেন তিনি।
স্বাভাবিকভাবেই রোমাঞ্চিত তিনি, ‘অবশ্যই অধিনায়ক হওয়াটা আমার জন্য দারুণ সম্মানের। অবশ্যই আমাদের তিন অধিনায়ক নেই বলে অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব। কিন্তু এ ভূমিকা বেশ সম্মানের। ফাস্ট বোলার হিসেবে আমি জানি, ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। তবে সুবিধাও আছে। বোলারদের সঙ্গে কথা বলা, পরিকল্পনা সাজানো, চাপের মুহূর্তে তাদের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা। এটি সুবিধা এনে দেবে। তবে আমি শুধু আমাদের দলে দারুণ নেতৃত্বের ধারাটাই ধরে রাখতে চাইব এ সিরিজেও।’
এ তো গেল অধিনায়কত্বের ব্যাপার। বোলার হিসেবে নিজের ভূমিকার ব্যাপারেও বেশ স্বচ্ছ ধারণা ফার্গুসনের, ‘ভিন্ন কন্ডিশন, কিন্তু উপমহাদেশের অভিজ্ঞতা থেকে জানি পেসারদের ভিন্ন একটা ভূমিকা রাখতে হয়। সব সময় যে উইকেট নেওয়ার জন্য বোলিং করবেন, তা নয়। মাঝেমধ্যে এক প্রান্তে চাপ ধরে রাখতে হয়, যাতে অন্য প্রান্তে স্পিনাররা বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’
একটা লম্বা সময় ধরে দেশের মাটিতে ওয়ানডেতে প্রায় অজেয় ছিল বাংলাদেশ, কিন্তু সর্বশেষ তিন সিরিজের দুটিতেই তারা হেরেছে—ইংল্যান্ডের পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ফার্গুসন নিজের বোলিংয়ের জন্য দেখেছেন ইংল্যান্ড সিরিজের হাইলাইটসও, ‘এখানে পেসারদের জন্যও ভালো উইকেট ছিল। অবশ্যই এখানে আর্দ্রতা বেশি বলে সুইং করতে পারে। আর আমরা সুইংয়ের জন্য পরিচিত। আমি নিশ্চিত কাল সেটি কাজে লাগাতে পারব।’