যা চেয়েছেন, তা করতে পারার আনন্দ সাকিবের
এক, দুই, তিন…নাহ্, হিসাব রাখা যাচ্ছে না। বলছিলাম সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের ক্লাব হাউস থেকে বের হওয়া সমর্থকদের মিছিলের সংখ্যার কথা। এক দলের স্লোগান ‘বাংলাদেশ!’, ‘বাংলাদেশ!’। আরেক দলের মুখে ‘সাকিব!’ ‘সাকিব!’। এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণের আনুষ্ঠানিকতা সারলেন। দলের সঙ্গে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের ট্রফি নিয়ে ছবি তুললেন।
এরপর এলেন সংবাদ সম্মেলনে। ঘেমে একাকার অবস্থা। চেয়ারে বসতে বসতেই চার-পাঁচটা টিস্যু নিয়ে মুখ মুছলেন। সবাইকে একটু দ্রুত প্রশ্ন করার ইশারা করলেন তখন। যেন কোথাও যাওয়ার ব্যস্ততা সাকিবের। তবে ব্যস্ততার মধ্যেও সাকিবের কথায় বোঝা গেল, আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ জয় কতটা আনন্দের, ‘খুব ভালো লাগছে। ওদের বিপক্ষে আমাদের টি-টোয়েন্টি রেকর্ড ভালো ছিল না। সেখান থেকে এভাবে জেতা, এই রকম কন্ডিশনে জেতা, অবশ্যই এটা আমাদের আত্মবিশ্বাস দেবে।’
এটি এ বছর বাংলাদেশ দলের টানা তৃতীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়। সাকিবের দলের এই ধারাবাহিক সাফল্যটা ধরা দিয়েছে খেলার ধরনের কারণে। সাকিবও তা–ই বললেন, ‘এই ধারাবাহিকতাটা অবশ্যই স্বস্তির। আমরা যে জিনিসটা চেষ্টা করছি, তা কাজে দিচ্ছে। খেলোয়াড় যারা আছে, তারা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারছে। যা চাইছি, তা করতে পারলে তো ভালো লাগে। সেটাই হচ্ছে।’
তবে সাকিব এখনো টি-টোয়েন্টি দলের সেরা সমন্বয়ের খোঁজে আছেন, ‘এই দলে যারাই খেলছে, তারা কিন্তু গত বিশ্বকাপের পর থেকেই খেলছে। অনেকে গত এশিয়া কাপের পর থেকে। আমরা এখনো অনেক কম্বিনেশন চেষ্টা করছি। আমার মনে হয়, সেরা সমন্বয় খুঁজে পেতে আরও সময় লাগবে।’ দলটা স্থিতিশীল হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে সাকিবের উত্তর ছিল এমন, ‘সেটা তো আমার কাজ না। বোর্ড বলবে কেমন করছি। আপনারা মতামত দেবেন।’
কাল বাংলাদেশ দলের হয়ে প্রথমবারের মতো উদ্বোধনে খেলেছেন আফিফ হোসেন। টি-টোয়েন্টি দল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা যে এখনো চলছে, তার উদাহরণ এটি। সাকিবও যেমন বললেন, ‘দলের মধ্যে ফ্লেক্সিবিলিটি থাকা ভালো। ওপেনারের যে কাজ, সেটা মাঝেমধ্যে ৭ নম্বরেও কাজে লাগতে পারে। ৭ নম্বরের কাজও ওপেনারকে করতে হতে পারে। বোলারদের ক্ষেত্রেও একই কথা বলব।’
বোলারদের কথার সূত্র ধরেই এল গতকালের ম্যাচে তাসকিন আহমেদের পারফরম্যান্সের প্রসঙ্গটি। ৩ উইকেট নিয়ে আফগান ব্যাটিংয়ে ধস নামিয়েছেন তিনি। যদিও সাকিব কৃতিত্বটা ছড়িয়ে দিয়েছেন পুরো বোলিং আক্রমণে, ‘আমার কাছে তো মনে হয়েছে, তাসকিনের চেয়ে হাসান ভালো বল করেছে। আমরা যারা পাঁচ-ছয়জন আছি, তাদের কাজই ব্যাটসম্যানদের কাজটা সহজ করা।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য এ বছরের শেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজ। শেষটা ভালো করায় স্বাভাবিকভাবেই অধিনায়ক খুশি। কিন্তু ২০ ওভারের খেলায় বাংলাদেশ দলের লম্বা বিরতি নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা তো সাকিবের আছেই, ‘ছন্দটা এখন ভালো আছে। কিন্তু বড় বিরতিও আছে। এরপর যে কবে টি-টোয়েন্টি খেলব, জানি না। হয়তো জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে, বিপিএলের পরে। আশা করি, বিপিএলে ছেলেরা ভালো করবে। সেটা পরে আমাদের কাজে লাগবে।’
তবে আফগানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাসটা ওয়ানডে সংস্করণের এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে কাজে লাগবে, তা অনেকটা নিশ্চিত হয়েই বললেন সাকিব, ‘এই দলের বেশির ভাগ সদস্য ওয়ানডে দলের অংশ। এই আত্মবিশ্বাসটা ওরা এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে নিয়ে যেতে পারবে।’ সাকিবের শেষ কথাটার সঙ্গে মিলে যায় আফগান অধিনায়ক রশিদ খানের কথাটা। পুরস্কার বিতরণের মঞ্চে বলছিলেন, ‘আমরা বিশ্বকাপে চেষ্টা করব এই ভুলগুলো শুধরে নিতে। আশা করি, আমরা সেখানে শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করব।’